হাইকোর্টে ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের রিপোর্ট ॥ বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ৬৯ বাংলাদেশী

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০১৬ ও ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে আলোচিত পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আছে বাংলাদেশের ৯০ ব্যক্তি ও ৭ প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে পানামা পেপার্সে নাম আসে ৬১ ব্যক্তি ও ৭ প্রতিষ্ঠানের। প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসে ২৯ ব্যক্তির। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কি পদক্ষেপ নিয়েছে বিস্তারিত জানতে একাধিকবার আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর অনুসন্ধানে নামে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ৬৯ বাংলাদেশীর তথ্য হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। হাইকোর্টে দেয়া তালিকায় বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টু তার স্ত্রী ও দুই ছেলের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী রয়েছেন। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে ১২ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা বিদেশে পাচারের তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ডিসেম্বরে অর্থ পাচারে জড়িত ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকসহ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেসব টাকা পাচার হয়েছে তার তথ্য নিয়ে সিআইডি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। গত বছরের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্টকে এ তথ্য জানানো হয়। পরে আরও সময় নেয় বিএফআইইউ এবং দুদক। এরপর গত ডিসেম্বরে দুদক অর্থ পাচারে জড়িত ৪৩ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করে। প্যারাডাইস পেপার্সের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তার পরিবারের সদস্য নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাবিথ আউয়াল, তাফসির আউয়াল ও তাজওয়ার মোঃ আউয়ালসহ মোট ২৯ জনের একটি তালিকা দাখিল করা হয়। এছাড়া পানামা পেপার্সে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনের একটি তালিকা দাখিল করে দুদক। তবে পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্সে আসা বাংলাদেশী পাচারকারীদের নামের তালিকা ছাড়া তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত কোন তথ্য দিতে পারেনি দুদক।
পানামা পেপার্সে নাম আসা দুদকের দাখিল করা তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, সেতু কর্পোরেশনের পরিচালক উম্মে রুবানা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সিডব্লিউএন (এ) আজমত মঈন, বনানীর সালমা হক, এস এম জোবায়দুল হক, বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার সৈয়দ সিরাজুল হক, ধানম-ির দিলীপ কুমার মোদি ও শরীফ জহির, গুলশানের তারিক ইকরামুল হক, ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, পরিচালক খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম, পরিচালক আহমেদ ইসলাইল হোসেন, পরিচালক আখতার মাহমুদ।
তালিকা দাখিলের পর ওই সময় শুনানিতে অংশ নিয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে বলেন, বিদেশে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা, অফশোরসহ অন্যান্য কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন বা সম্পত্তি অর্জনসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মূলত বিএফআইইউ সর্বাধিক উপযুক্ত মাধ্যম। কিন্তু অভিযুক্তদের ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য বিএফআইইউয়ের কাছে তথ্য চেয়ে পাওয়া যায়নি। এছাড়া আইন অনুযায়ী দুদক শুধু ঘুষ ও দুর্নীতির তদন্ত করতে পারে। যদি বিএফআইইউ দায়িত্ব না দেয়, তা হলে দুদক অর্থ পাচারের তদন্ত করতে পারে না। যাদের নাম এসেছে, এদের ব্যাপারে তদন্তের ক্ষেত্রে দুদকের আইনী সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান ও তদন্ত এগোয়নি।
এদিকে সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ৬৯ বাংলাদেশীর তথ্য হাইকোর্টে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বুধবার বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। একে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেছেন, ওই বাংলাদেশীদের মধ্যে ৪৩ জনের নাম পানামা পেপার্স এবং ২৬ জনের নাম প্যারাডাইস পেপার্সে ছিল। আগামী রবিবার এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। ‘বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং বিভিন্ন মাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বিএফআইইউ ৬৯ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, যেটি আমি বুধবার বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করেছি।
কর ফাঁকি দিয়ে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ায়, আইন অমান্য করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার ও অবৈধ আয় বৈধ ক্ষমতার মালিক হওয়া নিয়ে ২০১৬ সালের এপ্রিলে পানামা পেপার্স নামে দুর্নীতির সংবাদ আসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। বিশ্বের সাবেক ও বর্তমান শতাধিক রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনীতিক, ব্যবসায়ী খেলোয়াড়, অভিনেতা, শিল্পী অনেকের নাম ছিল এ তালিকায়। ২০১৭ সালের ৫ নবেম্বর প্রকাশ হয় একই ধরনের আরেকটি তালিকা, যা পরিচিতি পায় প্যারাডাইস পেপার্স নামে। এখনও এই পেপারে থাকা নানা নাম প্রকাশ হচ্ছে।এই দুই জায়গায় বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানাতে নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সিআইডিকে তা জানাতে বলা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর দুদক পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা পৃথক দুটি প্রতিবেদনে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।
প্যারাডাইস পেপার্সে নাম আসা দুদকের তালিকায় থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মধ্যে রয়েছে বেগম নিলুফার কাজী, জাফরুল্লাহ কাজী (কাজী জাফরুল্লাহ), কাজী রায়হান জাফর, ক্যাপ্টেন হোসাইল হোসাইন (হাসান), ইফতেখারুল আলম, মোঃ আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক, তারিক ইকরামুল হক, এ এস এম মহিউদ্দিন মোনেম, আসমা মোনেম, ড. এ এম এম খান, আসমত মঈন, সৈয়দা নাসিমা মির্জা, মোঃ আমিনুল হক, তারেক (তারিক) একরামুল হক, মোঃ (মোহাম্মদ) শহীদ (শাহেদ), মোহাম্মদ ফয়সাল (ফয়সাল) করিম খান, নজরুল ইসলাম, সৈয়দ সিরাজুল হক, জুলফিকার হায়দার (হায়দর), আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ফাতেমা নাসরিন আউয়াল, মোঃ তাবিথ আউয়াল, মোঃ তাফসির আউয়াল, ফয়সাল চৌধুরী, ওয়াই ফরিদা মোগল, শহীদ উল্লাহ, মোঃ তাজওয়ার আউয়াল, সামির আহম্মেদ, সেভেন সিজ এ্যাসেটস লি:, রোয়েন ইনভেস্টমেন্টস লি: ব্রামার এ্যান্ড পার্টনাডির্স এ্যাসেট ম্যানেজ মেন্ট লি:, ইউনিকোল বাংলাদেশ লি:, ইউনোকল বাংলাদেশ এক্সপ্লোরেশন লি:, ইউনোকল শাহবাজপুর পাওয়ার লি:, ইউনোকল শাহবাজপুর পাইপলাইন লি:, এমএফ এ, এনার্জি (সিঙ্গাপুর) পিটিই লি:, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক সেভেন লি:, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লক টেন লি:, বারলিটেন রিসোর্সেস বাংলাদেশ লি:, ইউনোকল বাংলাদেশ ব্লকস থারটিন এ্যান্ড ফরটিন লি:, ইউনোকল বাংলাদেশ ক্লক টুয়েলভ লি:, ফ্রন্টিয়ার বাংলাদেশ (বারমুডা) লি:, টেরা বাংলাদেশ ফান্ড লি:, এফ এম জোবাইদুল হক, শরীফ জহির, দিলীপ কমার মোদী ও তার পরিবারবর্গ, মোঃ আমিনুল ইমলাম ও তার পরিবারবর্গ, ফয়সাল আহম্মেদ, মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সালমা হক, শরিফ জহির, আজীজ খান,আঞ্জুমান আজীজ খান, আয়েশা আজীজ খান, জাফের উমায়েদ খান, ফয়সাল করিম খান, ড. সৈয়দা সিরাজুল হক, হাসান মাসুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল হক, আহমেমদ ইসমাইল হোসেন, আখতার মাহমুদ, এফ এফ জোবায়দুল হক, মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী, উম্মে রাব্বানা, স্যামসন এইচ চৌধুরী, বিবিটিএল, ক্যাপ্টেন এম এ জাইল (জাউল/জলিল), এফ এম জোবাইদুল হক, সালমা হক, খাজা শাহাদাৎ হোসেন, মীর্জা এম ইয়াহিয়া।
অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কারণে টাকা পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থ পাচারের ইস্যুটি পুরনো। বিভিন্ন সংস্থা থেকে টাকা পাচারের তথ্য আসছে। তিনি বলেন, দেশের মোট বিনিয়োগের ৭৫-৮০ শতাংশ আসে বেসরকারী খাত থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ কমছে। তার মতে, যন্ত্রপাতির মূল্য বেশি দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। কারণ একবার বিদেশে টাকা গেলে, তা ফেরত আনা খুব কঠিন। তিনি আরও বলেন, সরকার তার ভাবমূর্তি হারানোর ভয়ে তথ্য লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এগুলো করে লাভ হয় না। কারণ ভাবমূর্তি শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে পরপর তিনটি সংস্থার রিপোর্টেই বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে টাকা পাচারের তথ্য উঠে এসেছে। এগুলো হচ্ছে জিএফআই, সুইস ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন আইসিআইজের পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স। বাংলাদেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হয়, এর বড় অংশই যায় উন্নত ৩৬ দেশে। সর্বশেষ জিএফআই যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে টাকা পাচারের ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৫ সালে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বাণিজ্য (আমদানি-রফতানি) হয়, এর প্রায় ১৮ শতাংশই পাচার হয়েছে, যা প্রায় তিনটি পদ্মা সেতুর ব্যয়ের সমান। আর গত ছয় বছরে দেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা চলতি (২০২১-২০২২) জাতীয় বাজেটের প্রায় কাছাকাছি এবং দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর দ্বিগুণ। তবে তিন বছর আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এ ধরনের কোন তথ্য দিচ্ছে না বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে জিএফআইর সিনিয়র ইকোনমিস্ট রিক রাউডেন ই-মেইলে জানান, অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ জাতিসংঘে নিয়মিতভাবে বার্ষিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের তথ্য দিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের কোন তথ্য দেয়নি। ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কারণে ২০১৫ সালের তথ্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, আমদানি-রফতানির আড়ালে ২০০৯ সালে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ৫১২ কোটি, ২০১০ সালে ৬৮৪ কোটি, ২০১১ সালে ৮৭৩ কোটি ডলার। ২০১২ সালে ৭৬৪ কোটি, ২০১৩ সালে ৯৩৪ কোটি এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ১৮৭ কোটি ডলার পাচার হয়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে প্রতিবছর যে টাকা পাচার হয়, এটি তার আংশিক চিত্র। পুরো চিত্র আরও ভয়াবহ। তার মতে, অর্থ পাচারের অনেক কারণ রয়েছে। এগুলো বন্ধের জন্য সরকারের সক্ষমতার অভাব হতে পারে। অথবা সরকারের সদিচ্ছা নেই। তিনি বলেন, মূলত দুর্নীতি হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে। বিচার হচ্ছে না, এ কারণেই টাকা পাচার বাড়ছে। দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার দৃষ্টান্ত নেই। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমাগতভাবে দুর্বল হচ্ছে। আইনের শাসনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কিছু লোক বিদেশে টাকা নিতে পারে। দ্বিতীয়ত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা পাচার হতে পারে। এছাড়াও বিনিয়োগে মন্দার কারণে ব্যবসায়ীদের টাকা বিদেশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, কারণ যাই হোক, টাকা পাচার হওয়া দেশের জন্য সুখবর নয়। তার মতে, সরকারের দুটি বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। টাকা ফিরিয়ে আনা এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক, এনবিআর এবং এ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে পাচার রোধে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।