স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি

2

 

সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে পাঁচ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও পেশ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সুরক্ষা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউই সুরক্ষিত নই। গত মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য ও ক‚টনীতি বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ আহŸান জানান। এ সময় স্বাস্থ্য খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে- প্রথমত, ভবিষ্যৎ জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিরাময়যোগ্য সংক্রামক রোগ নির্মূল করতে ক্রমবর্ধমান অসংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে বিদ্যমান উত্তম চর্চা বিনিময়ে আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্যকে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল ধারায় যুক্ত করতে এবং পানিতে ডুবে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা বা প্রাণঘাতী বিপর্যয় রোধে আরো মনোযোগী হতে হবে। চতুর্থত, আমাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্য শিক্ষা অবকাঠামোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গ্রীষ্মমÐলীয় রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পঞ্চমত, মা ও শিশু, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট-৩ অর্জনের মাপকাঠি বিবেচনা করে এই অঞ্চলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রস্তাবগুলো বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব মহামারি করোনার বিষাক্ত ছোবলে যখন পৃথিবী লÐভÐ, তখন বড় সমস্যা মানবসৃষ্ট জলবায়ুর বৈশ্বিক বিরূপ প্রভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে সুন্দর এই গ্রহ। বিরূপ জলবায়ুর প্রভাবে গ্রহের অধিবাসীরা ইতোমধ্যেই ক্যান্সার, হাঁপানি, হৃদরোগের মতো রোগগুলোকে ক্রমবর্ধমান হারে মোকাবিলা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৩০ লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হয় মৃত্যু পরিহারযোগ্য পরিবেশগত কারণে। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু সংকট, যা মানবতার মুখোমুখি একক বৃহত্তম স্বাস্থ্য হুমকি। সাম্প্রতিক পৃথিবীতে পরিবেশ বিপর্যয়, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদির কারণে প্রতিনিয়তই মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর, জীবনের ওপর নতুন নতুন সংকট নেমে আসছে। এসব সংকট মোকাবিলাও বিশ্ব স্বাস্থ্যের একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব স্বাস্থ্যের এই ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কোনো একটি দেশ বা সংস্থার পক্ষে এককভাবে সম্ভব নয়, তেমনি সম্ভব নয় শুধু একটি কোনো জ্ঞানকাÐ দিয়ে তাকে মোকাবিলা করা। এজন্য ঐক্যবদ্ধের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী সামনে নিয়ে এসেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। জনস্বাস্থ্য সূচকে ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটেছে বাংলাদেশে। স্বাধীনতার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে, গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, কমেছে শিশুমৃত্যুর হারও। এটা আমাদের অর্জন। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য অর্জন সত্তে¡ও আমরা এখনো সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সুরক্ষার বাইরে রয়েছে এখনো। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটেও আমরা মুক্ত নই। এর প্রভাবে নানা রোধব্যাধিতে এদেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। সে জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো বিশ্বনেতৃবৃন্দ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নিতে পারে।