বড়লেখায় দু’মাস ধরে জন্ম নিবন্ধন জটিলতায় লক্ষাধিক মানুষ

32

বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
সার্ভার জটিলতায় গত দুই মাস ধরে সারাদেশে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে মৌলভীবাজারের বড়লেখার লক্ষাধিক সেবাগ্রহীতা বিপত্তিতে আছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, পাসপোর্ট তৈরিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারছেন না সেবাগ্রহীতারা।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন অনুযায়ী দেশে ১৬টি সেবা পেতে জন্মসনদের দরকার হয়। এর মধ্যে পাসপোর্ট পেতে, বিয়ে নিবন্ধনে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে, সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ পেতে, ব্যাংক হিসাব খুলতে, ভোটার হতে, মোটরযানের নিবন্ধন ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য জন্মসনদ বেশি দরকার হয়। কিন্তু সার্ভার জটিলতায় দীর্ঘ দুই মাস ধরে এই সেবা বন্ধ থাকায় অনেকে তৈরি করতে পারছেন না নতুন পাসপোর্ট। ফলে জন্ম নিবন্ধন জটিলতায় তাদের বিদেশ যাত্রা আটকে আছে।
এদিকে জন্মনিবন্ধন সনদ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় প্রতিদিন সেবাগ্রহীতারা ভিড় করছেন। সার্ভার খুলেছে কিনা বা কবে খুলবে এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে, সার্ভার বন্ধ থাকায় নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদ হচ্ছে না এমনটা মানতে নারাজ গ্রামের সাধারণ মানুষ। তারা এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তার সঙ্গে জড়াচ্ছেন বাকবিতণ্ডায়।
জন্মসনদ নিতে আসা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোয়ালী গ্রামের নাইম আহমদ জানান, তার দুই ভাইয়ের জন্মসনদ হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে সনদ বানাতে হচ্ছে। তার দুই ভাই প্রবাসে থাকেন। সেখানে তাদের জন্মনিবন্ধন সনদের প্রয়োজন পড়েছে। কিন্তু সেগুলা হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে সেগুলা বানানোর প্রয়োজন। কিন্তু সার্ভার বন্ধ থাকায় জন্মসনদ তৈরি করতে পারছেন না।
দক্ষিণভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদের নাজমুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, ‘আমার ছেলের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলব। সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম জন্মসনদ বানাতে। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, সার্ভার বন্ধ। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সার্ভার খুলে দেওয়ার অনুরোধ করছি।’
রাফি আহমদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন যাওয়ার জন্য তিনি পাসপোর্ট বানাবেন। কিন্তু তার জন্মসনদ অনলাইনে করা নেই। এজন্য জন্মসনদ অনলাইনে করতে ইউনিয়ন পরিষদে গেলে জানতে পারেন সার্ভার বন্ধ। পাসপোর্ট বানাতে জন্মনিবন্ধনের প্রয়োজন তাই তিনি পাসপোর্টও বানাতে পারছেন না। তাই, আপাতত তার লন্ডন যাওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উত্তর শাহবাজপুরের ইউপি সচিব বাহার শ্যাম চৌধুরী ও দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সজল কুমার দে জানান, সার্ভার জটিলতায় প্রায় দুই মাস থেকে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কিছু দিন আগে নতুন সার্ভারের আইডি পাসওয়ার্ড দিলেও কাজ করছে না।
তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, শীঘ্রই সমস্যাটির সমাধান হবে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, নতুন পদ্ধতিতে (নতুন সার্ভার) জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তাই এই সংশোধন কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। আগে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের একটি সার্ভার থেকে সারাদেশে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হতো। কিন্তু এটিতে কিছু দুর্বলতা ছিল। এতে একজন ব্যক্তি একাধিক জায়গা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ নিতে পারতেন। এখন নতুন সার্ভারে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ সব ধরনের তথ্য থাকছে। এতে চাইলেই কেউ একাধিক সনদ নেওয়ার সুযোগ পাবে না। এগুলো নতুন সার্ভারে যুক্ত করতেই সময় বেশি লাগছে।