কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে বিদেশে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট নিয়োগ করার বিষয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিদেশী লবিস্ট ফার্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজি, একিন গ্যাম্প, টনি ক্যাডম্যান, র্যাসকি পার্টনারের সঙ্গে চুক্তি করে ৩৭ লাখ ডলার দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। বিএনপির নয়াপল্টনের অফিসের নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশে এই বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠানোর বিষয়টিতে কে বা কারা জড়িত তা জানতে চায় সরকার। বিদেশে পাঠানো এই বিপুল অঙ্কের টাকা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে প্রচার করার জন্য পাচার করার মতো গুরুতর অভিযোগের বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে। জাতীয় সংসদে আলোচনার পর এই বিষয়ে তদন্তের দাবি করেছেন এমপিসহ দুইজন মন্ত্রী। এরপরই তদন্তের জন্য মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত গত ৫ বছরে যতগুলো লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে, প্রতিটির কন্ট্রাক বা চুক্তি আছে, যার সত্যতা যাচাই করছে গোয়েন্দা সংস্থা। এসব চুক্তির অধীনে প্রতিটির টাকা-পয়সার হিসাব আছে, কে দিয়েছেন, কোন এ্যাকাউন্টে নিয়েছেন সবকিছুর তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে মে ২০২০ পর্যন্ত চুক্তি করেছে বিএনপি। প্রাথমিক হিসাবে এখানে খরচ হয়েছে অনুমানিক ১০ লাখ ডলার। অপর লবিস্ট কোম্পানি একিন গ্যাম্প এবং টনি ক্যাডম্যানের সঙ্গে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চুক্তিতে ব্যয় করা হয়েছে অন্তত ২৭ লাখ ডলার। জামায়াতের পক্ষে পিস এ্যান্ড জাস্টিস চুক্তি করে অন্তত চারটি। কিন্তু এখানে কত টাকা ব্যয় হয়েছে সেটি পরিষ্কার নয়। মার্কিন আইনে লবিস্ট নিয়োগ গ্রহণযোগ্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট নিয়োগ করে তাদের কাছে যে ডলার পাঠানো হয়েছে তার গ্রহণযোগ্য হিসাব নিকাশ থাকতে হবে। বিদেশে ডলার পাঠানোর ঘটনাটি যদি হুন্ডি বা মানি লন্ডারিং এর মাধ্যম করা হয় তা বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিএনপি-জামায়াতের হয়ে কিভাবে কারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট নিয়োগ করে টাকা পাঠিয়েছে তার আইনানুগ বিষয়ে তদন্তের জন্য মাঠে নেমেছে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি রাজনৈতিক দল তাদের দেশের সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যে অর্থ ব্যয় করেছে সেটি অবৈধপথে আয়ের টাকা কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নাম ব্যবহার করা হলেও তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তৃতীয় কোনও দেশের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে এমন অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ৮টি চুক্তির কপি হস্তগত হয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের। এরমধ্যে ন্যূনতম ৩টি চুক্তি করেছে বিএনপি। এসব চুক্তির দালিলিক প্রমাণাদি পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের কাছে। জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ঠিকানা ব্যবহার করে এই চুক্তিগুলো করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দল সরাসরি এই টাকাগুলো দিয়েছে কিভাবে ? এই টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গেছে কিনা ? যদি অনুমোদন না নিয়ে পাঠানো হয় তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আছে, সেই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে জানালে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী প্রতিবছর শেষে আয়-ব্যয় হিসাব প্রকাশ করার বিধান আছে। সেই বিধি-বিধান অনুযায়ী বিএনপি এই খরচগুলো লিপিবদ্ধ করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে কিনা ? এগুলো পাবলিক ডকুমেন্ট। নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চায় একটি আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নোটারাইজড করে তাদের কাছে জমা দিলে তা দূতাবাসের মাধ্যমে ওই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্যসম্বলিত’ প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রচার শুরু করে বিএনপি জামায়াত। তখন এসব অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাপানো এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে একটি পিআর প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়। এই পিআর প্রতিষ্ঠানকে দেশের কোন কোন সংবাদমাধ্যম ভুলভাবে লবিস্ট ফার্ম হিসেবে তুলে ধরেছে। প্রকৃতপক্ষে সরকার কোন লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেনি। লবিস্ট ফার্ম অপপ্রচারের জন্য বিএনপি-জামায়াতই নিয়োগ করেছে, যার মোকাবেলার জন্য পিআর নিয়োগ করেছে সরকার।
তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি রুখে দেয়ার পাশাপাশি রফতানি বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য বিএনপি অর্থ ব্যয় করে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে নানা দেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেছেন তিনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি তাদের নয়াপল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে এই ফার্মের সঙ্গে চুক্তিটা করেছে। লবিস্ট ফার্মকে তারা প্রতিমাসে পঞ্চাশ হাজার ডলার করে এবং শুরুতে দেড় লাখ ডলার এ্যাডভান্স দিয়েছে। অর্থাৎ প্রায় দুই মিলিয়ন ডলার তারা তিন বছরে পে করেছে। নয়াপল্টনের অফিসের ঠিকানা দিয়ে করা চুক্তি অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই।