ইজারায় আর্থিক জামানতের বিধান

11

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

স্থায়ী আর্থিক জামানত হলো ক্রয়-বিক্রয়ের পদ্ধতিতে জামানত গ্রহন, যা মোটা অংকের হয়। এ প্রকারের জামানত পদ্ধতি হলো ইঞ্চি ও ফুটের হিসেবে ক্রেতা ভূমির মালিকের কাছ থেকে ভূমি বা দোকান ক্রয় করে নেবে। তাই এ টাকা পরবর্তীতে আর ক্রেতাকে ফেরত দেওয়া হয় না; তবে কিছু ভাড়াও নেওয়া হয়। তখন সেটা ভূমি বা ঘরের ভাড়া হিসেবে নেওয়া হয় না বরং তা পরিচালনা খরচ বাবদ নেওয়া হয়। এই পদ্ধতির বিক্রি জামানত পদ্ধতিতে বিক্রি নামে পরিচিত। কোথাও একে সেলামী পদ্ধতিতে বিক্রি বলা হয়। বছরান্তে তাতে চুক্তি মোতাবেক সামান্য ভাড়া বাড়তে ও পারে। তা বিভিন্ন সরকারী মার্কেটে ও বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর মাকের্টেই বেশি প্রচলিত। তাতে দোকান বরাদ্দ ও বিভিন্ন লটারির ইত্যাদির মাধ্যমে দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে কেউ ক্রয় করলে পাবে সে তার হক অপরের কাছে বিক্রি করতে পারে। তখন তাকেও তার বিক্রেতার চুক্তি ও শর্ত অনুসরণ করনে হবে। এ পদ্ধতি ঘর ভাড়ার ক্ষেত্রে তেমন প্রযোজ্য নয়। শরয়ী বিধান : শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা বৈধ। তা দখলি স্বত্ব ও হক বেচাকেনা হিসাবে গণ্য হয়। আর হক ও অধিকার বিক্রি করা শরীয়তে বৈধ।
বুরহানুদ্দিন আর-মারগীনানী (রহ.) বলেন, রাস্তা বিক্রি ও দান করা বৈধ। আর পানি প্রবাহের নালা বিক্রি ও দান করা বৈধ নয়। এই মাসআলাটি দুটি বিষয়কে ধারণ করে। রাস্তা ও পানি চলাচলের স্বত্ব বিক্রি করা। আর অতিক্রম ও পানি প্রবাহের হক বিক্রি করা। যদি প্রথমটি হয় তখন উভয়ের মাঝে পার্থক্য হলো (একটি বৈধ ও অপরটি অবৈধ হবার কারণ), রাস্তা তো নির্দিষ্ট। কেন না, তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্দিষ্ট (তাই তা বৈধ) আর পানি চলাচলের নালা অজানা। কেন না নালা কতটুকু পানি ধারণ করে তা জানা যায় না (তাই তা অবৈধ)। আর যদি দ্বিতীয়টি (হকের বিক্রি) হয় তখন অতিক্রমের হক বিক্রিতে দুটি মতামত রয়েছে (এক মতে বৈধ, অপর মতে অবৈধ)। তার একটি মত (বৈধতার) ও অতিক্রমের হকের পার্থক্য হলো, অতিক্রমের হক নির্ধারিত ( তাই বৈধ)। কেন না রাস্তা নির্ধারিত। আর উপরিভাগে পানি প্রবাহ তা ছাদে ঘর নির্মাণের হকের মত। তা জমিনে অজানা থাকে তার স্থান অজানা থাকার কারণে। অতিক্রমের হক ও ছাদের উপরের হকের মাঝে পার্থক্য হলো এক বর্ণনা মতে, ছাদের হক এমন বিষয়-সম্পদের (অর্থাৎ ঘরের) সাথে সম্পর্কিত, যা স্থায়ী নয়; তাই তা মুনাফার মতো (তাই তা অবৈধ)। অতিক্রমের হক এমন বস্তুর সাথে সম্পর্ক যা স্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকে তা হল যমীন, তাই তা স্বত্বের সাথে সাদৃশ্য।
মুফতি তকী উসমানী বলেন, তা (হক বিক্রির পদ্ধতি সমূহ) অতিক্রমের হক, ছাদ ঘর নির্মাণের হক, পানি প্রবাহের হক, পানি পানের হক, দেয়ালে লাকড়ি রাখর হক, দরজা খোলার হক। হানাফীদের নিকট এসকল হক বিক্রি করা বৈধ নয়। আর তিন ইমামের কিতাবে প্রসিদ্ধ মত হলো, এ সকল অধিকাংশ হকের বিপরীতে বিনিময় গ্রহণ বৈধ। মতানৈক্যের মূলভিত্তি হলো বাইয়ের সঙ্গা। যাদের মতে বায় হলো মালের বিপরীতে মালের বিনিময় করা এবং তারা এ মালকে বিষয়-সম্পদের সাথে সুনির্দিষ্ট করেছেন, তারা এ সকল হক বিক্রি নিষেধ করেন। কেন না এ গুলো সম্পদ নয়। আর যারা মালকে ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করেছেন যাথে মুনাফা ও অন্তর্ভুক্ত হয়, তারা তা বিক্রি বৈধ মনে করেন। তাই অতিক্রমের হক বিক্রিতে হানাফিদের নিকট দুটি বর্ণনা রয়েছে। একটি যিয়াদাতের বর্ণনা। তাতে নিষেধ রয়েছে। আর একটি কিতাবুল কিসমার বর্ণনা। তাতে বৈধ বলা হয়েছে।
এ পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত বিষয়াদি খেয়াল রাখতে হবে: ১. উভয়পক্ষের চুক্তিটি স্পষ্টভাবে লিখিত হতে হবে। যাতে মতানৈক্যের সম্ভাবনা না থাকে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! যখন তোমরা নির্ধারিত সময়ের জন্য পরস্পরের মধ্যে ঋণের লেনদেন করো, তখন লিখে রাখো। উভয়পক্ষের কোন লেখক ইনসাফ সহকারে দলিল লিখে দিবে। বর্তমানে দেশীয় চুক্তি অনুযায়ী এ ধরনের লেনদেন ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে নিবন্ধন করে নেওয়া যেতে পারে। ২. অপরকে ভাড়া দিতে চাইলে সে ভাড়া দিতে পারবে। কোম্পানী তাকে বাধা দিতে পারবে না। কেননা তা বেচা কেনার মত। ৩. সে তা দখলি মালিকানা অপরকে বিক্রি করকে চাইলে তখনও কোম্পানী তাকে বাধা দিতে পারবে না । ৪. জামানতের টাকা আর ফেরত পাবে না। ৫. সেখানে কোন ক্রেতা কোম্পানীর কোন শর্ত ভঙ্গ করতে পারবে না। চুক্তির সকল শর্ত মানা বাধ্যতামূলক হয় যাবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ! অঙ্গীকারগুলো পুরোপুরি মেনে চলো। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলিমগণ তাদের পরস্পরের শর্তানুযায়ী কাজ করবে।
আর্থিক জামানতের দ্বিতীয় পদ্ধতি বর্তমানে আর্থিক জামানতের আরেকটি পদ্ধতি বহুলভাবে চালু আছে ; সেটি হল, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘর-বাড়ী দোকান পাট ভাড়া নেওয়া। তবে সে ক্ষেত্রে ভূমির মালিক জামানত বাবদ নির্দিষ্ট অংকের টাকা গ্রহণ করে। জামানত নেওয়ার পরে ঘরের ভাড়া বাবদ শর্ত মোতাবেক মাসিক ভাড়া নেওয়া হয়। এ পদ্ধতি দোকান ভাড়াতে বহুল প্রচলিত। বিভিন্ন শিক্ষা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঘর বা ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে ও তা প্রচলিত। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তি করা হয়। তা হতে পরে পাঁচ বা দশ বছর। মালিকপক্ষ সেই মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে তা ফেরত নিতে পারবে না। নতুবা ভাড়াটিয়া ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তবে মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে ভাড়াটিয়াকে সন্তুষ্ট করে ফেরত নেওয়ার অবকাশ রয়েছে। আর্থিক জামানতের এ পদ্ধতি কোথাও কোথাও সেলামী নামে পরিচিত। “মালিক ও ভাড়াটিয়ার মাঝে ভাড়া ব্যতীত এককালীন ফেরত বা অফেরতযোগ্য কিছুৃ টাকার লেন-দেনকে সাধারণত সেলামী বলা হয়”।
শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ। এক্ষেত্রে অগ্রিম টাকাগুলো আমানত হিসাবে থাকবে। তবে অনুমতি সাপেক্ষে মালিক তা ব্যবহার করতে পারবে। যেমন ব্যাংকের চলতি হিসাবের টাকা আমানত হিসাবে ঋণ ধরা হয়। তাই ব্যাংক তা ব্যবহার করতে পারে। তা এক প্রকার বন্ধকী জামানত। বন্ধকী জামানত স্থাবর সম্পদ যেমন হতে পারে, অস্থাবর সম্পদও হতে পারে। শরয়ী স্ট্যান্ডার্ডে এসেছে বন্ধক গ্রহণ করা বৈধ এমন বিষয় যা হস্তান্তর করা যায়ও তা দ্বারা লেনদেন করা যায়। তা টাকা হোক বা বন্ড হোক যেমন, ইসলামিক বন্ড বা ইসলামিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ডক্টর ওয়াহাবা-আয যুহাইলী বলন, যখন কোনো ভাড়াটিয়া মাসিক ভাড়ার অতিরিক্ত এককালীন নির্দিষ্ট অঙ্ক বাড়ীর মালিককে দেওয়ার ব্যাপারে একমত হয় তাতে বাধা নেই। এ পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত বিষয়াদি খেয়াল রাখতে হবে।
১. যদি পরবর্তীতে জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে এ পদ্ধতি বৈধ হবে। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ভাড়া দিলে তখন কিছু নগদ ও কিছু কিস্তিতে ভাড়া আকৃতি অফেরতযোগ্য জামানত নেওয়া যেতে পারে। যেমন যুহাইলীর বর্ণনায় এসেছে। ২. মালিককে জামানতের টাকা ব্যবহারেন অনৃুমতি দিতে হবে। ৩. মেয়াদ শেষে ভাড়াটিয়া দোকান বা বাসা ফেরত ভাড়া দিতে বাধ্য থাকবে। যদি বহাল থাকতে চায় নতুন ভাবে চুক্তি করতে হবে। আর আর্থিক জামানত ও ফেরত দিতে হবে। ৪. মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে যদি মালিক ফেরত নিতে চায়, তখন সে তা ফেরত নিতে পারবে। তবে ইজাগ্রহীতা সন্তুষ্টষ্টচিত্তে ফেরত দিলে নিতে পারবে। প্রয়োজনে ইজারাগ্রহীতা তার ক্ষতিপূরণ নিতে পারবে। ৫. ইজারাগ্রহীতা সাবলেট দিতে পারবে। এই পদ্ধতির আর্থিক জামানতে মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে যদি মালিক তার ঘর বা দোকান ফেরত নিতে চাইলে ভাড়াটিয়া মালিকের নিকট কিছু টাকা দাবি করে। যদি মালিক ও ভাড়াটিয়ার মাঝে এমন কোনো চুক্তি বা ওয়াদা না থাকে, যে এ সময় পর্যন্ত ভাড়া দিলাম বা নিলাম, এমতাবস্থায় মালিক ভাড়াটিয়াকে ছেড়ে দিতে বলতে পারে। এক্ষেত্রে যদি ভাড়াটিয়া মালিকে নিকট কিছু টাকা দাবি করে তখন তা জুলুম ও ঘুষ হবে।
তবে যদি মালিক ও ভাড়াটিয়ার মাঝে নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি থাকে আর মলিক নির্দিষ্ট সময় শেষ হবার পূর্বেই ভাড়াটিয়াকে ঘর বা দোকান ছেড়ে দিতে বলে তখন ভাড়াটিয়ার জন্য ঘর বা দোকান খালি করে দেওয়া আবশ্যক নয়। কেননা অনেক সময় ভাড়াটিয়াকে ক্ষতি ও ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়। অনেকে তখন ক্ষতিপূরণ দিতে ও নিতে বাধ্য হয়। তখন ভাড়াটিয়ার জন্য তার ক্ষতিপূরণ হিসাবে কিছূ টাকা দাবী করা বৈধ হবে। কেননা, সে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ যদি কেউ কোনে হকের মালিক হয় তাহলে তাহলে সমঝোতার মাধ্যমে কোনো হক ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে কিছু নেওয়া বৈধ। যেমন কিসাসের ক্ষেত্রে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগন! হত্যার বিপরীতে তোমাদের জন্য কিসাস গ্রহন বিধিবদ্ধ হলো; স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী কিন্তু যদি কেউ তার ভাই কর্তৃক কোনো বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয় তবে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবেতাগাদা করে এবয় সদ্ভাবে তা পরিশোধ করে; এটা তোমাদের প্রতিপালকর পক্ষ হতে লঘু বিধান ও করুণা; অতপর যে কেউ সীমা লঙ্গন করবে তার জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। তেমনি কোনো ভাড়াটিয়া যদি সেখানে কোনো মেরামত বা সংস্কারমূলক কাজ করে তখন তার পরিবর্তে সে বের হয়ে যাওয়ার সময় মালিক থেকে কিছু নিতে পারবে।
“ইজারাগ্রহীতা হক হস্তান্তরের ব্যাপারে ডক্টর ওয়াহবা আয-যুহাইলী বলেন, ক্ষতিপূরণ নামে ইজারাদার মলিক থেকে চুক্তির মেয়াদের ভেতরে ইজারা বাতিলের জন্য ও ইজরাদাকে তার বস্তু ফেরত দেওয়ার জন্য যে অর্থ নেয় তা জুমহুরের নিকট হারাম। তবে ইমাম মালিক ও আকু ইউসুফের মত ভিন্ন। কেননা আর্থিক চুক্তি বা লেনদেন যেমন বেচাকেনা ও ইজারা বাতিল করা ইকালার অন্তর্ভুক্ত। তা আবু হানীফার মতে, পূর্ব মূল্যের উপর হতে হবে বেশকম হতে পারবে না। কেননা তা উভয় পক্ষের জন্য ফেরত নেওয়া ও তৃতীয় ব্যক্তির জন্য লেনদেন। তাই বেচাকেনা ও ইজারা বাতিল প্রথম মূল্য দিয়ে হতে হবে। বেশকম, সময়ের বা অন্য কোনো বিনিময়ের চুক্তি বাতিল হবে। ফেরত নেওয়াটা দখলের পূর্বে হোক বা পরে হোক। কেননা ফেরত নেওয়া হলো উভয়ের জন্য চুক্তি বাতিল। আর চুক্তি বাতিল হলো প্রথম চুক্তিকে উঠিয়ে দেওয়া। আর চুক্তি তো হয়েছে প্রথম বিনিময়ে তা বাতিল ও সেই বিনিময় হবে। আর অগ্রহণযোগ্য শর্তারোপ বর্জনীয় বিবেচিত হবে। তাই যদি প্রথম চুক্তির অতিরিক্ত ও কমের উপর কোনো চুক্তি হলে তা আবশ্যিক হবে না। একই মত হলো ইমাম যুকারের। তার মতে ফেরত নেওয়া সকলের ক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল করা হিসাবে গণ্য। একই মত ইমাম মুহাম্মাদের, যিনি প্রয়োজন ব্যতীত ফেরত নেওয়াকে চুক্তি বাতিল হিসবে গণ্য করেন। তাই শাফী ও হাম্বালীদের মতে, যারা ফেরত নেওয়াকে চুক্তি বাতিল হিসাবে গণ্য করে তাতে বেশকম করা যাবে না। কিন্তু ইমাম মালিক (রহ.) ফেরত নেওয়াকে নতুন লেনদেন হিসাবে গন্য করেন। তাই তাতে বেশকম করা বৈধ বলেন। তাই ইমাম আবু ইউসুফের অভিমত। তিনি ফেরত নেওয়াকে নতুন লেনদেন মনে করেন, যদি তাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। তাদের মতে ইজারাদার মালিক ইজারাগ্রহীতাকে অতিরিক্ত দিতে পারে ইজার বাতিলের ক্ষেত্রে ও ইজারাবস্ত হস্তান্তরের ক্ষেত্রে। যদি কোনো ইজারাদার ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ইজারাগ্রহীকে কিছু মাল হাদিয়া দেয়, ইজারাগ্রহীতা চলে যায়। তা সকলের নিকট বৈধ। কেননা দান করা নফল কাজ, যা পরস্পর সন্তুষ্টির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়”।
মালিক পক্ষ ভাড়াটিয়া থেকে মোটা অঙ্কের টাকা জামানত বাবদ নেয়। সাথে সাথে ভাড়াটিয়া থেকে ভাড়াও গ্রহণ করে। আবার সেখানে জামানত থেকে মাসিক কিছু টাকা ভাড়া হিসাবে কেটে নেওয়া হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা বৈধ। এ অবস্থায় জামানত গুলো অগ্রিম ভাড়া হিসাবে গণ্য হবে। এ পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত বিষয়াদি খেয়াল রাখতে হবে: ১. অগ্রিম জামানত যদি ভাড়া কর্তন শেষ হয়ে যায়, তাহলে নতুন চুক্তি করতে হবে। ২. দোকান বা বাসায় কোনো ক্ষতি হলে তখন তা আর্থিক জামানত থেকে কেটে নেওয়া হবে। ৩. উভয়পক্ষ চুক্তি পালনে বদ্ধ পরিকর হতে হবে।
ইজারাগ্রহীতা অপরকে ভাড়া দিয়ে আর্থিক জামানত গ্রহণ করা। যা সাবলেট নামে পরিচিত। তাও বৈধ যদি তা চুক্তির মেয়াদের ভেতর হয়। তবে সে ক্ষেত্রে বাড়ীর মালিক থেকে অনুমতি নিতে হবে। তবে যে মূল্যে ভাড়া নিয়েছে তার চেয়ে বেশি দিয়ে ভাড়া দেওয়া বৈধ হবে কিনা তাতে আলিমগণের মতবিরোধ দেখা যায়। কারও কারও মতে তা বৈধ নয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ইব্ন উমর, ইবরাহীম নখয়ী, নাইদ ইবনুল মুসায়্যিব, ইব্ন সীরীন প্রমুখ। বরং তাদের কারও মতে অতিরিক্ত টাকা মালিককে ফেরত দিতে হবে। আবার অনেকের মতে অপরকে অতিরিক্তে সাথে ভাড়া দেওয়া বৈধ। কেননা তা বেচাকেনার মতো। হাসান বসরী তাউস ও হাকাম প্রমুখ তা পোষণ করেন। বর্তমানে এটিই অগ্রগণ্য মত। মাজাল্লাতুল মুজাম্মইল ফিকহিল ইসলামীতে এসেছে। তাহলো ইজারাগ্রহীতা ও ইজারাদার মালিক ব্যতীত অপর থেকে সেলামী গ্রহণ করা। তাকে ভাড়া দিয়ে যাতে জমিন থেকে সে ফায়দা হাসিল করে তাও বৈধ, যদি ভাড়া দেওয়াটা তার চুক্তির ভেতর থাকে। যদি চুক্তির মেয়াদ এক বছর হয় ইজারাগ্রহীতা ছয় মাস ব্যবহার করলে তখন মালিকের চুক্তি মোতাবেক বাকী ছয় মাস অপরকে দিতে পারবে। (অসমাপ্ত)