সংলাপে আওয়ামী লীগের ৪ প্রস্তাব ॥ যত দ্রুত সম্ভব আইন পাসের আশাবাদ রাষ্ট্রপতির

4
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের শেষ দিন সোমবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা করলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংলাপকালে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সকল নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোসহ রাষ্ট্রপতির কাছে দলের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বৈঠকে রাষ্ট্রপতির কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এতে ইসি শক্তিশালীকরণ, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়েও কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রয়োজন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার চলতি সংসদ অধিবেশনেই নির্বাচন কমিশন আইন পাসের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। নতুন আইন পাস করে নাকি বিদ্যমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাম এ্যান্ড সি, নার্থিং ইজ ইম্পসিবল’।
আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। পরে বঙ্গভবনের দরবার হলে ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, লেঃ কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আবদুর রহমান।
একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপে বসতে রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগসহ মোট ৩২টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। গত ২০ ডিসেম্বর প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বিএনপিসহ মোট সাতটি রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হয়েছে এবং দ্রুতই নতুন ইসি গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।
সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপে রাষ্ট্রপতির কাছে দলের পক্ষ থেকে চার দফা সুপারিশ পেশ করেছে আওয়ামী লীগ। সুপারিশগুলো হচ্ছে- (ক) সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন। (খ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে রূপ উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, সেই প্রক্রিয়ায় তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দান করবেন।
তৃতীয় দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৮-এর বিধান সাপেক্ষে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের কোন আইন না থাকায় সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান ব্যতিরেকে অন্য কোন আইন প্রতিপালনের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সাংবিধানিক চেতনা সমুন্নত রাখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষ্যেই মূলত এই আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে যে কোন আইন হবে সাংবিধানিক বিধান মতে একটি বিশেষ ধরনের আইন।
এই সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, এই বিশেষ ধরনের আইন প্রণয়নের জন্য আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোন সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ছিল না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে একটি রাজনৈতিক মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করতে একমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি সাংবিধানিক রীতি ও রাজনৈতিক অনুশীলন  (Constitutional Convention) প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সাংবিধানিক রীতিটি হলো ‘সার্চ কমিটি’/‘অনুসন্ধান কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে সকলের মতামত ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন। এই ব্যবস্থাটি এখন পর্যন্ত দুই বার (২০১২ এবং ২০১৭) অনুশীলন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দুই বারই দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ এই অনুশীলনে অংশগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, এই রীতিটির আলোকে এবং এই প্রক্রিয়ালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে একটি আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।
সর্বশেষ চতুর্থ দফা সুপারিশে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে সকল নির্বাচনে অধিকতর তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
আগামী নির্বাচন কমিশন গঠন করার পরে সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের হাতে ভিন্ন কোন প্রক্রিয়া নেই। অথবা আইন পাসের ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কোন ম্যাজিকের তান নয়। আইন আইনের গতিতেই হবে। আইন, আইন; আইনের বিকল্প কোন বিধান নেই। যেই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের আইন পাস হয়, এই ক্ষেত্রে বিন্দু পরিমাণ ব্যত্যয় ঘটনার কারণ নেই। বিকল্প কোন কথা নিয়ে ভাবার অবকাশই নেই। কেউ কোন প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে পেরেছে? কেউ পারেনি। কেউ নির্দিষ্ট সময়ে পারেনি বা পেরেছে। অন্যকিছু হওয়ার এখানে কোন সুযোগ নেই।
আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটা জনদাবি, সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। ৫০ বছর আগের আইনে যেহেতু চলছে, জাতীয় স্বার্থে একটা আইন পাস হওয়া দরকার ছিল, আগে হওয়ার কথা ছিল। কেন হবে না, প্রক্রিয়া তো আছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী সমুদয় চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই আইনের প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। ৫০ বছর করতে পারেনি, আমরা প্রথম ও দ্বিতীয়বার পারিনি। তৃতীয়বারের আগেও হয়ে যেতে পারে। প্রথম দ্বিতীয়বার হয়নি, এবার হবে না- এমন কোন কথা নয়। আইনটা হলে এবারই হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির গৃহীত যে কোন ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করা যায় সে ব্যাপারে তার দল ও সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে, জনগণ যাতে ভোটাধিকার ইচ্ছামতো প্রয়োগ করতে পারেন, সে ব্যাপারে তার দল ও সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। তিনি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন যে, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়নের জন্য আইনের একটি খসড়া আজ (সোমবার) মন্ত্রীসভা পরিষদের অনুমোদন দিয়েছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আইনী প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে আইনটি প্রণীত হবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন কমিশন গঠন-সংক্রান্ত আইনটিতে মন্ত্রীপরিষদের অনুমোদন দেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি যত দ্রুত সম্ভব এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই আইনেই জনমতের প্রতিফলন ঘটবে।
প্রেস সচিব জানান, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করে। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল প্রস্তাব করেন- সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনের নিয়োগ দান করবেন। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি (রাষ্ট্রপতি) যাদেরকে উপযুক্ত বিবেচনা করবেন সেইভাবে তিনি তাদেরকেই নিয়োগ দান করবেন।
প্রেস সচিব জানান, তারা সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে ইভিএম পদ্ধতিসহ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। প্রতিনিধি দল একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বশীলতা, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের আচরণ এবং নির্ভুল ভোটার তালিকা ও ভোটগ্রহণের দিন নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। এ ছাড়া বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নির্বাচন পরিচালনায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারের পরিবর্তে কেবলমাত্র প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ এবং আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত লোকজনের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনে পেশিশক্তি বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সকল পর্যায়ের ভোটারদের ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা ও পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়। লিখিত প্রস্তাবনায় দলটি নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের পূর্বে এবং পরে ভোটারদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনের আবশ্যকীয় সকল সংস্থা এবং নির্বাচন কর্মপরিধি অবশ্যই একটি রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ শিরোনামে দলের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনায় নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ, নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং এই ধরনের অর্থবহ সংলাপ আহ্বানের মধ্য দিয়ে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
বিএনপি আমলের প্রহসনের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ঢাকা (মিরপুর ও তেজগাঁও) ও মাগুরার উপ-নির্বাচনে এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক বর্জিত ও ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে নজিরবিহীন কারচুপি ও অন্যায় সংঘটিত হয়, তা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে আবারও এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা করে। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ৪৯ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের জনগণ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র ও জনমানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণে যা কিছু হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই অর্জিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সুগভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত যে কোন ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মূল বিধানাবলী দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানেই (অনুচ্ছেদ ১১৮-১২৬) উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। বিগত কয়েক মেয়াদে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, যার অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।