২০২১ সালে নাগাদ সব ঘরেই আলো জ্বলবে – প্রধানমন্ত্রী

11
গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও ১০টি জেলার ২৩টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের উদ্বোধন করে মোনাজাত করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তাঁর সরকার ২০২১ সাল নাগাদ সকল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে সারাদেশের ঘরে ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে আমরা মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ, মুজিববর্ষ উদযাপনের মধ্যে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অন্ধকারে থাকবে না, সব ঘরেই আলো জ্বলবে।’
প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সাতটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ২৩ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধন এবং উপজেলাগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট। পাশাপাশি দেশের ৪৬১ উপজেলার মধ্যে ২৩৪ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হলো। আরও ১২৭ উপজেলায় শীঘ্রই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে, যেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, বাকি এক শ’ উপজেলায় আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপনকালে বিদ্যুতায়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি লক্ষ্য স্থির করেছি- ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব। জাতির পিতার জন্মদিন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে এই কর্মসূচী পালন শুরু করে পরবর্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত এক বছর এই কর্মসূচী চলবে। তখন আর একটি ঘরেও অন্ধকার থাকবে না।
তিনি বলেন, আলোকিত করাই আমাদের কাজ এবং সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। যেখানে বিদ্যুতের গ্রিড লাইন পৌঁছেনি সেসব প্রত্যন্ত পাহাড়ী, হাওড় এবং চরাঞ্চলে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সারাদেশে এই বিদ্যুতায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, বলেন তিনি।
তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার তাঁর পরামর্শ পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুত উৎপাদনে আমাদের যে খরচ হয় এর চাইতে অনেক কম অর্থে আমরা তা সরবরাহ করে যাচ্ছি।’
তিনি এ সময় বিএনপি আমলে দেশে বিদ্যমান ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কথা স্মরণ করিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর সরকার গঠন করে ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার দেশে বিদ্যুৎ পেয়েছিল মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট। পরবর্তী পাঁচ বছরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করে রেখে গেলেও ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পরবর্তী পাঁচ বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন এক মেগাওয়াটও বাড়াতে পারেনি। উপরন্তু, তা কমিয়ে ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের সরকার গঠনের পর থেকে বিদ্যুতকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়াসহ একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে তার সরকার বিদ্যুতকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব এই বিদ্যুত ব্যবহারে আপনারা সাশ্রয়ী হবেন। বিদ্যুৎ অপচয় যেন না হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হলে আপনাদের বিদ্যুতের বিলটাও কম আসবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, এই দেশ আমাদের এবং এই দেশের প্রতিটি সম্পদ জনগণের। কাজেই এই সম্পদকে আমাদের রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আসুন সকলে মিলে দেশকে গড়ে তুলি। আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার গণভবনের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া, বেলপথমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
সাতটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে- শিকলবাহা ১০৫ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আনোয়ারা ৩শ’ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী ১১০ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটিয়া ৫৪ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রংপুর ১১৩ মে.ও, তেঁতুলিয়া ৮ মে.ও. সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গাজীপুর ১শ’ মে.ও. বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উদ্বোধনের ফলে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন হয়েছে ২২ হাজার ৫৬২ মেগাওয়াট এবং একইসঙ্গে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় এসেছে।
পাশাপাশি দেশের ৪৬১ উপজেলার মধ্যে ২৩৪ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হলো। আরও ১২৭ উপজেলায় শীঘ্রই শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব হবে, যেগুলো এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, বাকি এক শ’ উপজেলায় আগামী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদ্যাপনকালে বিদ্যুতায়ন করা হবে।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা।
শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলাগুলো হচ্ছে- বগুড়া জেলার গাবতলী, শেরপুর, শিবগঞ্জ, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা, ফরিদপুর জেলার মধুখালী, নগরকান্দা, সালসা উপজেলা, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, গাইবান্ধা সদর এবং পলাশবাড়ি উপজেলা, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এবং হবিগঞ্জ সদর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ এবং মহেশপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলা, নাটোর জেলার বরাইড়গঞ্জ, লালপুর ও সিংড়া উপজেলা, নেত্রকোনার বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ এবং পিরোজপুরের ভা-ারিয়া, কাউখালী এবং ইন্দুরকানি।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, রেলপথমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব আহমেদ কায়কাউস অনুষ্ঠানে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
এ উপলক্ষে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর, নাটোর, পিরোজপুর এবং খুলনা জেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরে একটি পৃথক ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে খুলনার ‘শেখ রাসেল ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব কাপ টেনিস টুর্নামেন্ট-২০১৯’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।