স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে পুত্র ও পুত্রবধূর ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন এক মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। ওই পুত্রবধূ শ্বশুরকে ফাঁসাতে নানা ফন্দি আটছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহিষখেড় গ্রামের মৃত সামাদ আলীর পুত্র মোহাম্মদ জমসেদ আলী।
লিখিত বক্তব্যে জমসেদ আলী বলেন, দীর্ঘ ৩৭ বছর যাবত আমি প্রবাসে রয়েছি। বর্তমানে ছুটিতে এসে চরম কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছি। নিজের সন্তান ও পুত্রবধূর ষড়যন্ত্রের কারণে আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেও পারছি না। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমার পুত্রবধূ একই উপজেলার ফতেহপুর সপ্তমখন্ড গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের মেয়ে মেহেরজাবিন মৌটুসী ও তার পরিবারের লোকজন আমাকে ফাঁসাতে উঠেপড়ে লেগেছে। আর সব ষড়যন্ত্রের কারণ হল প্রবাসের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে যে সম্পদ গড়েছি তা আত্মসাৎ করা।
আমার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। বড় ছেলের নাম রাইয়ান। সে বর্তমানে সৌদি আরব প্রবাসী। ছোট ছেলে এমরান জার্মান প্রবাসী। একমাত্র মেয়ে বুশরা দেশে আছে। আমার স্ত্রী বানেছা বেগম গত ৩ আগষ্ট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে রাইয়ান দেশে আসে। সে দেশে এসে তার স্ত্রী ও আমার একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে সিলেট শহরে ভাড়া বাসায় ওঠে। পরবর্তীতে আমি বাড়িতে এসে একা হয়ে যাই। তখন আমার দেখাশোনা এবং খাবার দাবারের কথা চিন্তা করে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে সম্মত হই। বিষয়টি আমার বড় ছেলে জানতে পেরে আমাকে সাফ নিষেধ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর মেহেরজাবিন মৌটুসী আমার বাড়িতে আসে। সে আমাকে খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে এমনটি বুঝতে পেরে আমি তাকে আমার বাড়ি ছেড়ে তাদের বাসায় চলে যেতে বলি। এতে সে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে আমার অনুপস্থিতিতে আমার বাড়ি তালা মেরে চলে যায়। পরে এলাকার মুরব্বীয়ানের সহযোগিতায় আমি বাড়িতে প্রবেশ করি। এ ঘটনায় আমি বাধ্য হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরী করি। যারনং- ৪৬৫/২১। পরবর্তীতে আমার গ্রামের সম্মানিত মুরব্বীয়ানগণের পরামর্শে গত ১ নভেম্বর আমি দ্বিতীয় বিয়ে করি। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আমি বাড়িতেই বসবাস করছি। জমসেদ বলেন, আমার পুত্রবধূ মৌটুসী গত পহেলা মার্চ নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়ে তার দোষ স্বীকার করেছে। অঙ্গীকার নামায় সে উল্লেখ করেছে “ বিয়ের কিছুদিন পর হতে আমার মা আমাকে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে পরামর্শ দিতে থাকেন যে, আমি যাতে আমার স্বামীর সংসার হতে পিত্রালয়ে চলে আসি। এছাড়া আমার ছেলেবন্ধু রয়েছে। এখন থেকে আমি আর আমার ছেলেবন্ধুর সাথে যোগাযোগ রাখবোনা। বর্তমানে আমি আমার স্বামীর সংসারে ফেরত যাওয়ার লক্ষে সকল শর্তাবলী মনে চলিব। ” এভাবেই আমার পুত্রবধু লিখিত অঙ্গিকার দিয়ে আমার ছেলের সংসারে এসেছিল। বর্তমানে এই মহিলাই আমার ছেলেকে ফুসলিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়টি হলো আমার একমাত্র মেয়ে বুশরাকে সে ফুসলিয়ে বর্তমানে তার কাছে রেখেছে। এই মা মরা মেয়েটিকে আমার পুত্রবধূ খারাপ পথে নিয়ে যেতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি। আমি আমার মেয়েকে আমার নিকট ফেরত চাই। এদিকে একই উপজেলার রামনগর গ্রামের মজিদ আলীর ছেলে আব্দুর রহিম (৯) আমার ছেলের শহরের ভাড়া বাসায় আমার নাতীনকে দেখাশোনা ও ঠুকঠাক হাটবাজার করার জন্য থাকতো। এই ছেলেটিকে দিয়ে এখন জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে মেহেরজাবিন মৌটুসী ও তার পরিবার। গত ১০ জানুয়ারি এই ছেলেটিকে খবর দিয়ে পিত্রালয়ে নিয়ে যায় আমার পুত্রবধু। ছেলেটি রাতে তাদের বাড়িতে থাকে এবং খাওয়াদাওয়া করে। পরদিন সকালে হঠাৎ করে ছেলেটির নিকট একটি বিষের বোতল রয়েছে এবং নগদ ২০০ টাকা রয়েছে বলে তারা প্রচার করতে থাকে এবং বিষয়টি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। মূলত রাতে ছেলেটির পাঞ্জাবির পকেটে সু কৌশলে বিষের বোতল এবং নগদ টাকা রেখে তারা এ নাটক সাজায়। তারা ছেলেটিকে মারধর করে তাদের কথামত কথা বলতে বলে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ছোট ছেলেটি ভয় পেয়ে তাদের কথামত স্বীকারোক্তি দিয়ে বলে, আমি নাকি তাকে বিষের বোতল দিয়ে পাঠিয়েছি। যা তাদের সাজানো জজ মিয়ার নাটক। এছাড়া এই ছেলেটির মাকে খবর দিয়ে নিয়েও তারা ব্যাপক মারধর করেছে। এসব ক্ষেত্রে মেহেরজাবিন মৌটুসীর আপন চাচাতো ভাই ইউপি সদস্য মোজাহিদ নায়কের ভূমিকা পালন করেন । সংবাদ সম্মেলনে জমসেদ এদের হাত থেকে রেহাই পেতে এবং আমার একমাত্র মেয়েকে ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।