সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। একের পর এক ঘটছে হত্যাকাÐ। এমন হতে পারে যে এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধÑকোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেছে।
সামান্য কারণেই খুনের ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক কলহের জেরে হত্যার ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক সহিংসতা ও হত্যাকাÐ, নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। অল্পতেই সহিংস হয়ে উঠছে মানুষ। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে। অপরাধপ্রবণ সমাজে নিত্যনতুন অপরাধ যেমন দেখা যাচ্ছে, তেমনি অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে পারিবারিক কলহ ও সহিংসতা সমাজকে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করে।
কারণ একজন মানুষের কাছে তার পরিবার, স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনই সবচেয়ে আপন। সেই আপনজনদের দ্বারাই যখন হত্যাকাÐ সংঘটিত হয় তখন তো বিষয়টি ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক পরিবর্তনের ফলে সমাজবদ্ধ মানুষের আচার-আচরণ ও মূল্যবোধে যেমন পরিবর্তন আসে, তেমনি সামাজিক অবস্থানেও পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফলে সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপ অনুভ‚ত হয় এবং সেই চাপ থেকেই মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এটা বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তাঁদের মতে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আশির দশকের পর থেকেই আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বায়ন ও নগরায়ণের প্রভাব পড়তে থাকে। এর পর থেকে আমরা একটি সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এত পারস্পরিক দ্ব›দ্ব-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ঢিলে হয়ে গেছে অনেক আগেই। সমাজের ভেতর পরিবার, প্রতিবেশী, এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতির চর্চা ও বন্ধনগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। অনুশাসন বলতে কিছু নেই। আগে সামাজিকভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখন দেখা যায় না। আগের সামাজিক অনুশাসনগুলো আর কাজ করছে না। উচ্চাভিলাষী জীবনযাপনে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সহজ কোনো পথ কি খোলা আছে?
মানবিক মূল্যবোধ এখন প্রশ্নের মুখে। মানবিক মূল্যবোধের এই ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা আগামী বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই বড় ধরনের অশনিসংকেত। এমন আশঙ্কাও করা যেতে পারে যে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে শান্তি-শৃঙ্খলা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সেটা হবে ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ পর্যায়ে।
তাই এ ধরনের অপরাধ ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে হবে। কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আমাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি আইন প্রয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হতে হবে।