দেশে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই তাঁরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন। সম্প্রতি দেখা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে পেঁয়াজের মূল্য লাফিয়ে বাড়তে থাকে। অথচ ভারত থেকে নতুন দামে পেঁয়াজ আসতে কমপক্ষে দিন দশেক সময় লাগবে। অন্যান্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আসে। সেসব দেশে দাম বাড়ানো হয়নি। বাস্তবে ভারত দাম বাড়ানোর পর সেসব দেশ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তার পরও পেঁয়াজের বর্ধিত দাম খুব একটা কমছে না। কিছু মিলার ও ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট এবার চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা শুরু করছে। বাজারে চাহিদা কম—এমন অজুহাত দিয়ে মিলাররা মোটা চালের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি চার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। মিনিকেট চালের দামও একইভাবে বেড়েছে। বাজার অস্থিতিশীল করার কাজটি করা হচ্ছে খুবই কৌশলে এবং ধীরে ধীরে, যাতে কারো চোখে বড় করে ধরা না পড়ে। বাজারে চালের দাম বেড়ে গেলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। সে কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণেরও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
বাজারে চালের দাম ক্রমেই বাড়লেও ধানের দাম এখনো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক নিচেই রয়ে গেছে। কোথাও কোথাও তা আরো কমছে। ফলে মিলার ও ব্যবসায়ীদের লাভের অঙ্ক ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে। হিসাবে দেখা যায়, ধানের ক্রয়মূল্য এবং উৎপাদন, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্ট সব খরচ বাদ দিলে দেখা যায়, প্রতি কেজি চালে ব্যবসায়ীদের মুনাফা হয় ১৩-১৪ টাকা। এমন অযৌক্তিক ও অনৈতিক মুনাফার পরও ব্যবসায়ীদের লোভের শেষ নেই। লাভ আরো বাড়াতে তাঁদের কারসাজি চলছেই। একইভাবে ধান উৎপাদনকারী কৃষকদের ধানের ন্যায্য মূল্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁদের কারসাজির অভাব হয় না। আর কৃষকরা সংঘবদ্ধ হতে পারে না বলে তাঁদের লোভ ও কারসাজির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপের যেসব প্রক্রিয়া রয়েছে সেগুলোও খুবই দুর্বল। মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার সরকারি কার্যক্রম থাকলেও তা ধানের নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে নামমাত্র খোলাবাজারে চাল বিক্রির (ওএমএস) কার্যক্রমও বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। তাহলে ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থ কে দেখবে?
বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপের সময় নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। দরিদ্র কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হয়ে গেলে সরকারের সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। তা-ও অনেক জায়গায় থাকে অনুপস্থিত। বাজারে চালের দাম বাড়া নিয়ে জন-অসন্তোষ তীব্র না হলে ওএমএস শুরু হয় না। সরকারকে বাজারের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে হবে। বাজার পুরো অস্থিতিশীল হওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ করতে হবে।