চতুর্থবারের মতো পেছালো ব্লগার অনন্ত হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

2

স্টাফ রিপোর্টার :
টানা চতুর্থবারের মতো পিছিয়েছে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। মঙ্গলবার ৭ ডিসেম্বর সিলেট সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিলো। তবে ঢাকারকারগার থেকে এক আসামিকে আদালতে হাজির করতে না পারায় সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে যায়।
এই নিয়ে টানা চতুর্থবার পেছালো এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এর আগে গত ২২ নভেম্বর, ৮ নভেম্বর এবং ২৭ অক্টোবর সাক্ষীরা উপস্থিত না হওয়ায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। সাড়ে ছয় বছরেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়া ও বারবার পেছানোতে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনন্ত বিজয় দাশের স্বজনরা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের সদস্য মোহাম্মদ মনির উদ্দিন জানান, মঙ্গলবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আরমান আলী এবং সিআইডির আইটি ফরেনসিক বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুদ সিদ্দিকী ও উপপরিদর্শক সিআইডি মো. সুহেল রানার সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিলো। আগের তিনটি তারিখে তারা অনুপস্থিত থাকলেও মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়েই আদালতে উপস্থিত হন। কিন্তু একজন আসামিকে আদালতে হাজির না করায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। মনির উদ্দিন বলেন, এই মামলার কারাগারে রয়েছেন আবুল খায়ের রশিদ আহমদ ও শফিউর রহমান ফারাবী। দুইজনের মধ্যে আবুল খায়ের রশিদ আহমদকে মঙ্গলবার আদালতে উপস্থিত করা হয় এবং অন্য আসামি শফিউর রহমান ফারাবিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন। গতকাল তাকে সিলেট আনা হয়নি।
আগামী ১৯ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মনির উদ্দিন। মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাক্ষ্যগ্রহণ বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনন্ত বিজয়ের বোন জামাই সমর বিজয় শী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ অনেক পিছিয়ে গেছে। এখন স্বাভাবিক আদালত কার্যক্রমের মধ্যেও টানা চারবার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আদালত বন্ধ থাকবে। ফলে এবছরও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হচ্ছে না। এতে বিচার পাওয়া নিয়েই আমরা শঙ্কিত।’
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকায় নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকান্ডের দিন রাতে অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা ৪জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এরপর মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) এবং সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।
আসামিদের মধ্যে ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক আছেন।