প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর কৌশলগত অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তিনি ফরাসী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফরাসী ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বের দাবিদার। মাত্র পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশ থেকে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে তিন নম্বরে ছিল ফ্রান্স। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থান ধরে রাখতে পারলেও এর উন্নতি হয়নি। কারণ বাংলাদেশী পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাব, গুণগত মানে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে পেরে না ওঠা। এছাড়া ইউরোপিয়ান অনেক দেশের আমদানির ভায়া ছিল ফ্রান্স। যেমন বুলগেরিয়া, ডেনমার্ক ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপিয়ান দেশ ফ্রান্সের মাধ্যমেই বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করত। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। তারা জার্মানিকে ভায়া হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারপরও প্রতিবছর এখানে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। কিছুকাল আগে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পণ্যের বৈচিত্র্য ও গুণগত মান বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাণিজ্য সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য দিকনির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন, কোন কোন দেশে কি কি পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেটা অনুধাবন করে সেই পণ্য যেন উৎপাদন করতে পারি। বর্তমান সরকার দেশের সড়ক, নৌ, রেল এবং আকাশপথসহ যোগাযোগের সব মাধ্যমকে উন্নত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। তাই যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসবেন তারা লাভবানই হবেন। দক্ষিণ এশিয়ার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাজার ধরার এবং রফতানি করার বাড়তি সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারবেন। অর্থাৎ বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে তারা আশপাশের দেশগুলোয়ও বাণিজ্য বিস্তার ও বিনিয়োগের সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হবেন। সাতদিনের ওই সম্মেলন আমাদের দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ৯টি খাত- অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফিনটেক, চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতি চাহিদা সম্পন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে যা সময়োপযোগী। ফরাসী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুবিধা সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন।
ফরাসী ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, ‘প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক সংযোগ কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য কাজ করছি। সড়ক, রেল, সমুদ্র, জ্বালানি ও ডিজিটাল সংযোগ ক্ষেত্রে অঞ্চলজুড়ে আমাদের বিনিয়োগ হবে প্রকৃত পট-পরিবর্তক।’ ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী সফরে ফরাসী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন সোপানে উন্নীত করার আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ফরাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে দুই দেশই লাভবান হবে। বাংলাদেশের বৃহত্তর বাজারসহ ধারে-কাছের দেশগুলোয়ও ব্যবসা করার সুযোগ পাবেন ফরাসী ব্যবসায়ীরা। আমরা আশা করছি ফরাসী বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে উদ্বুদ্ধ হবেন এবং তার প্রতিফলন অচিরেই আমরা দেখতে পাব। ফরাসী ব্যবসায়ী নেতাদের সক্রিয় সহযোগিতায় বাংলাদেশ-ফ্রান্স বাণিজ্য দ্রুত উন্নতি লাভ করবে।