কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, তার আওতায় আজ রবিবার আরও সাড়ে ৫৩ হাজার পরিবার পাচ্ছেন নতুন ঘর, স্বপ্নের স্থায়ী নীড়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ দ্বিতীয় ধাপে ভূমিহীন-গৃহহীন, ছিন্নমূল এসব পরিবারকে বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ সেমিপাকা ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এক সঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দিলে সারাবিশ্বে নজির ও মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষণা বাস্তবায়নে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে গত ২৩ জানুয়ারি দুই শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছেন সারাদেশের ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। এক সঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। মুজিববর্ষে অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর উপহার দিয়ে স্থায়ী ঠিকানা প্রদানের টার্গেট রয়েছে সরকারের।
সকাল সাড়ে ১০ টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম (দ্বিতীয় পর্যায়) উদ্বোধন করবেন। গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সারাদেশের ৪৫৯টি উপজেলা প্রান্তে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ৫৩ হাজার ৫১৪টি পরিবারের মধ্যে দুই শতক জায়গার ওপর নির্মিত সেমিপাকা বাড়ির দলিল তুলে দেবেন। স্বামী ও স্ত্রীর যৌথ নামে করা রেজিস্ট্রি দলিল এসব অসহায় মানুষের হাতে তুলে দেয়া হবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, অসহায় মানুষকে এভাবে ঘর দেয়াকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বলা যায়। বিশ্বে এটা নতুন মডেল, আগে কখনও কেউ এটা ভাবেনি। এক সঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার অসহায় ভূমিহীন-গৃহহীনদের ঘর দেয়ার পাশাপাশি তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণও দেবে।
দ্বিতীয় ধাপের এ বরাদ্দ হয়েছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৯১২টি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৬ হাজার ৪৪৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১৪০টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২ হাজার ৩৭২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৪০১টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৯ হাজার ১৬১টি, রংপুর বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ১২ হাজার ৩৯১টি, রাজশাহী বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৫৬৮টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫ হাজার ৬০৪টি, খুলনা বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৮১২টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৩ হাজার ৯৯টি, বরিশাল বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ৭ হাজার ৬২৭টি এবং সিলেট বিভাগে আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ২২৩টি এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১ হাজার ৭৫৬টি নির্মিত ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে তারা শুধু ঘর পাবে। যাদের জমি নেই তারা দুই শতাংশ জমি পাবে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হচ্ছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সরকারের নির্ধারিত একই নক্সায় হচ্ছে এসব ঘর। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেটের পাশাপাশি টিউবওয়েল ও বিদ্যুত সংযোগও দেয়া হচ্ছে।
মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গত ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসঙ্গে ৬৫ হাজার ৪০ ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে উপহার দিয়েছেন স্বপ্নের নিজস্ব ঠিকানা। ‘স্বপ্নের স্থায়ী নীড়’ পেয়ে বিশাল প্রাপ্তি, মুখে আনন্দের হাসি, উচ্ছ্বাস ও আনন্দাশ্রুর পাশাপাশি সারাদেশের ভিক্ষুক, ছিন্নমূল, বিধবা, দিনমজুর, বেদে, দলিত, হরিজন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ যুগ যুগ ধরে ভাসমান হয়ে চলা গৃহহীন-ভূমিহীন ৬৫ হাজার পরিবারের প্রায় তিন লাখ মানুষের সত্যিই এক অন্যরকম দিন কেটেছে সেদিন। যুগের পর যুগ ঠিকানাবিহীন মানুষগুলোর স্থায়ী নিবাস প্রাপ্তি উপলক্ষে সারাদেশের উপজেলা প্রান্তগুলোতেও ছিল রীতিমতো উৎসবের আমেজ, দেশজুড়ে বইয়ে গেছে আনন্দধারা। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপে সাড়ে ৫৩ হাজার এমন দিনহীন ছিন্নমূল মানুষের মুখে ফুটে উঠবে স্থায়ী স্বপ্নের নীড় প্রাপ্তির তৃপ্তির হাসি।
পৃথিবীর অর্থনৈতিক বড় ধনী দেশগুলো যেটি এতদিন করতে পারেনি, সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন, তিনি আর কেউ নন। তিনি হচ্ছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনি প্রায় পৌনে দুই লাখ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারী খরচে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপহার দেবেন ‘স্বপ্নের নীড়’, দুই শতক জমির মালিকানাসহ সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের পাকা বাড়ির স্থায়ী ঠিকানা।
জানা গেছে, এ সকল ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল, অসহায়, আশ্রয়হীন মানুষকে শুধু পাকাবাড়িই দেয়া হচ্ছে না, সঙ্গে সঙ্গে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের যৌথ নামে জমির মালিকানাসহ সারাজীবনের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হচ্ছে। জমির মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, জীবনযাত্রায় মানের পরিবর্তন এসেছে। হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নও। ধর্মবর্ণ, দলমত নির্বিশেষে মানবিক দিক বিবেচনায় ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল, অসহায় মানুষজনকে সকল কিছুর ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এটি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিকতা ও মহানুভবতার জন্যই সম্ভব হয়েছে।