সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়

18

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
ইসলামি সমাজে পরিবার গঠনে স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব, তাদের পারস্পরিক আচার অচরণ, সন্তানের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিধৃত হয়েছে। কারো দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার সুযোগ নাই। ইসলামে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব, স¦ামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য, শিশু জন্ম হলে তার প্রতি পিতা-মাতার করণীয় সব কিছু নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইসলামে পরিবার শুধু স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবারের পরিসর আরও ব্যাপক। নিকটাত্মীয়স্বজনও এর মধ্যে অন্তর্ভক্ত। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, দয়া, করুণা এবং সহানুভূতি তো আছেই, বাড়তি দায়িত্বশীলতার প্রশ্নও জড়িত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ সহযোগিতা ও স্নেহি-ভালোবাসার বন্ধনের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি ও সর্বাঙ্গীন উন্নতি; স্বামী-স্ত্রী নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে চললে পারিবারিক পরিবেশ অনেকাংশে সুখ ও শান্তিতে ভরে ওঠে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারই হল মানুষ গড়ার মূল কেন্দ্র এবং সমাজ গঠনের প্রধান ভিত্তি। এ জন্য পরিবার গড়ার ব্যাপারে ইসলাম বিশেষভাবে যত্নবান হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। ইবন উমর রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স.) কে বলতে শুনেছি, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই শাসক হলেন দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্ববান এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের সম্পদের দায়িত্ববান, তার সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্ববান, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
পারিবারিক জীবনে বড়দের শ্রদ্ধা করা ও ছোটদের স্নেহ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে পরিবারে বড়কে শ্রদ্ধা ও ছোটকে স্নেহ দেখায় না সে পরিবারে শান্তি বিরাজ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: যে আমাদের ছোটকে স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়কে শ্রদ্ধা করে না সে আমার উম্মত নয়। পরিবারে অসুস্থ, বিকলাঙ্গরা পরিবারে যতটুকু প্রীতি-স্নেহ পেয়ে থাকে অন্যত্র তা পায় না। এমনকি পরিবারের বাইরের অন্যান্য দরিদ্র-বঞ্চিতরাও পরিবারে উত্তমভাবে স্নেহাশ্রিত হয়। বস্তুত পরিবার গঠনের ভাগাভাগি করা। আর মহান আল্লাহ বলেন, আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্যই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া। চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গের জন্য এর মধ্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে।
জনগণের জীবন, সম্পদ ও মর্যাদার নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করণে রাষ্ট্রপ্রধান কখনো কখনে আইনের কঠোরতা, আবার কখনো কখনো আইন প্রয়োগ স্থগিতকরণের অধিকার রাখেন। ইসলামী শরী‘আতে তা ‘আস-সিয়াসাহ’ নামে পরিচিত। আস-সিয়াসাহ শব্দের অর্থ ‘জনগণের কর্মকান্ডের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা।’ সিয়াসাত হচ্ছে, দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির পথ-প্রদর্শনের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধন করা। সর্বোপরি সিয়াসাত হচ্ছে শাসক কর্তৃক জনকল্যাণের নিমিত্ত কোন বিধান প্রবর্তন করা। এর স্বপক্ষে কোন একক দলিল-প্রমাণ না থাকলেও তা সিয়াসাতের অন্তর্ভুক্ত।
সিয়াসাত আল-আদিল বা ন্যায়পরায়ণ সিয়াসাত প্রতিষ্ঠা করা ইসলামী শারী‘আতে ওয়াজিব। কখনও কখনও এ শাসননীতি কঠোর শাস্তি দান, আবার কখনও কখনও শাস্তি মূলতবী বা লঘুকরণ করা হয়ে থাকে। তবে উভয় অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ভিত্তি অপরাধের মূলোৎপাটন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
শিশু পাচার একটি সন্ত্রাসমূলক কাজ, যা মারাত্বক দন্ডনীয় অপরাধ। এটি হত্যার নামান্তর। এটি জাতীয় জীবনে ফাসাদ ও বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। আর ইসলাম এ জাতীয় অপরাধের জাগতিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের শাস্তি বর্ণনা করেছে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে। ইরশাদ হয়েছে, যারা আল্লাহ এবং তার রাসূলের সঙ্গে লড়াই এবং জমিনে ফাসাদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি হত্যা কিংবা শূলে চড়ানো; অথবা তাদের হাত ও পা উল্টো দিক হতে কেটে ফেলা, কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা। এই লাঞ্ছনা ও অপমান হবে এ দুনিয়ায়, কিন্তু পরকালে তাদের জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে।
ইসলামের অন্যতম শিক্ষা হলো সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং সবাই যেন সুবিচার পায় একজন ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত সকলকেই তা নিশ্চিত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্য দান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে পেচিঁয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করো তখন ন্যায় পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট! আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। ইসলামের আইন রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, শক্তিমান-দুর্বল, অভিজাত ও সাধারণ সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং পারিবারিক স্নেহ মমতা, রাষ্ট্র নির্ধারিত দন্ড প্রয়োগ এবং সুবিচার প্রাপ্তির নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা মানবপাচাররোধক সূচক হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানব পাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিবর্গের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরনের উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়নকল্পে আইনটি পাশ করা হয়। এটি ২০১২ সালের ৩নং আইন। এ আইন অনুসারে মানবপাচারকারী ব্যক্তি এ অপরাধের জন্য অনধিক যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অন্যুন ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং অন্যুন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। সংঘবদ্ধ গোষ্ঠি এ অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা অন্যুন ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং অন্যুন ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। এ কাজে প্ররোচনা দানকারী বা সহযোগী অনধিক ৭ বছর অন্যুন ৩ বছর কারাদন্ড এবং অন্যুন ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।মানব পাচারের উদ্দেশ্যে কাউকে অপহরণ, গোপন অথবা আটক করে রাখলে অনধিক ১০ বছর অন্যুন ৫বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং অন্যুন ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। পতিতাবৃত্তির জন্য কাউকে স্থানান্তর বা আমদানী করলে এ আইন অনুসারে অপরাধী অনধিক ৭ বছর এবং অন্যুন ৫ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবংঅন্যুন ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। মুখের ভাষা বা অঙ্গভঙ্গি বা অশালীন ভাব-ভঙ্গি করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানালে তিান অনধিক ৩ বছর সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।এ অইনের অধীন অপরাধ সমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যে কোন জেলায় মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করবে। ট্রাইব্যুনাল ১৮০ দিনের কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্মন্ন করবে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করা যাবে। সবশেষে মানবপাচারআইনের সপÍম অধ্যায়ের বিধিতে মানব পাচার প্রতিরোধে তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। ইসলাম মানুষকে সৃষ্টির সেরা হিসেবে মর্যাদা দান করেছে।সে সাথে জীবন সম্পদ ও বাসস্থানের নিরাপত্তা বিধান করেছে।ইসলাম বিভিন্ন দন্ডবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনহানী, অঙ্গহানী, অশ্লীলতা, ব্যভিচার, পতিতাবৃত্তি. ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা এবং শিশুশ্রম ও দাসপ্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে। রাষ্ট্র ইসলামের দৃষ্টা›তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা বা প্রয়োগ করে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, অশ্লীলতা প্রতিরোধ করতে পারে । ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থা একে অপরের মধ্যে সুদৃঢ় বন্ধন, স্নেহ মমতা, শ্রদ্ধা, সম্মান এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে (উপরে আলোচিত হয়েছে)। মানব পাচারের বিরুদ্ধে ইসলামের সরাসরি বিধান না থাকলেও মানব পাচারের যে উদ্দেশ্য যেমন, অবৈধ ব্যবসা, জীবননাশ, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্রয়-বিক্রয়, পতিতাবৃত্তি, শিশুশ্রম, ইত্যাদি সম্পর্কে ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও নীতিমালা, যার প্রয়োগ এবং প্রতিপালনে মানব পাচারের মত অপরাধ দমন হবে। অতএব, বাংলাদেশে প্রচলিত মানবপাচার আইন ও ইসলামের শিক্ষার মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে. মানব পাচার ও অপরাধ দমনে ইসলামী আইন. শিক্ষা ও মুল্যবোধের বিকল্প নেই। কেননা ইসলামী মুল্যবোধ মানুষকে অন্যায় অবিচার থেকে বিরত রাখে। যার মানে আল্লাহ ও আখেরাতের বিন্দুমাত্র ভয় আছে সে কখনও এধরনের গর্হিত কাজে জড়িয়ে পড়তে পারে না। খোদা ভীতি ও শেষ বিচারের ভয় মানুষকে যেভাবে তাড়িত করতে পারে সেভাবে কোন আইন মানুষকে থাড়িত করতে পারেনা।অপরাধের সকল দুয়ার উন্মুক্ত রেখে শুধু আইন করে অপরাধ রোধ করা যায় না। মানব পাচার রোধে ব্যক্তির মননে ধর্মীয় মুল্যবোধ অভাবনীয় প্রভাব ফেলতে পারে।বিশেষ করে ইসলামী মূল্যবোধ মানুষকে সকলপ্রকার খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নারী ও শিশুপাচার রোধে বিভিন্ন আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন, পুলিশ সদর দপ্তরে মনিটরিং সেল স্থাপন, স্থল ও বিমানবন্দরে বিশেষ তল্লাশি ব্যবস্থা, জেলাপ্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন এবং উদ্ধারকৃত নারী ও শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য ও বিশেষ ব্যবস্থা ও কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।তবুও এ বিষয়ে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ নেয়া যেতে পারে: মানবপাচার প্রুতিরোধে বাংলাদেশে প্রণীত আইনটি সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করা। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে আইনের চেয়ে সবার মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি নারী ও শিশু পাচার রোধে ফলপ্রসু ভুমিকা পালন করতে পারে। সীমান্তবর্তী এলাকায় শিশু ও নারী পাচার প্রতিরোধে ইলেকট্রোনিক মিডিয়া, বিশেষ করে কমিউনিটি রেডিও‘র মাধ্যমে জনগন, স্কুল, ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের দলীয় আলোচনা সভার ফুটেজ তৈরী করে তা প্রচার করা যায়। এ ছাড়াও পথনাটক. ছবিপ্রদর্শন, পোষ্টার, লিফলেট, বিতরন ও বিলবোর্ড স্থাপন করে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো যায়। সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন, বই-পুস্তক, চলচ্চিত্র, মুদ্রিত সামগ্রী নানাভাবে নারী ও শিশুপাচারের ওপর জনসচেতনতামুলক অনুষ্টান ও বাণী নিয়মিতভাবে প্রচার করতে পারে। পাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের আওতায় গ্রাম, পাড়া, বা মহল্লায় কোন অপরিচিত লোক দেখলে তার সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং প্রয়োজনবোধে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার অথবা থানায় অবহিত করার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যে সব সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা প্রতিরোধে কাজ করে তাদের সঠিক তথ্য দেয়া ও সহায়তা করাও কর্তব্য। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রের পরিচয় জানা এবং মেয়ের অভিভাবকের ছেলের পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে খোজ খবর নেয়া প্রয়োজন। পাচারের পরিণতি সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং পরিবারের সবাইকে সচেতন করা কর্তব্য। কাজের লোক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ছবি তোলে রাখা এবং প্রাক পরিচয় যাচাই করে নেয়া আবশ্যক। বাড়ির শিশুকে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বার মুখস্থ করানো এবং অপরিচিত লোকের দেয়া কোন খাবার বা জিনিস যাতে গ্রহণ না করে সে বিষয়ে পরিবার থেকেই শিশুকে সচেতন করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে মসজিদের ইমামগণও এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীকে সচেতন করতে পারেন। বাংলাদেশে মানব পাচারের কারণসমূহ দূরীকরণের লক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন বিশেষ করে দরিদ্রতা হ্রাস, অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো অতীব প্রয়োজন। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী যেহেতু মুসলিম তাই সচেতনতার সঙ্গে বুদ্ধি বৃত্তিক উপায়ে নাগরিকদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া অতিব সঙ্গত। সে লক্ষ্যে মানব পাচার রোধকল্পে জীবন, সম্পদ ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের কঠোর ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে কুরআন ও হাদীস সমৃদ্ধ বক্তৃতা, লেখা, সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। সে সাথে জনগনকে শরী‘আহ আইন পরিপালনে উদ্বুদ্ধ করা অতীব প্রয়োজনীয়। (অসমাপ্ত)