স্টাফ রিপোর্টার :
উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সিলেটে নারী ও শিশু নির্যাতন। প্রায় দিনই ঘটছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। এসব প্রতিরোধে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও পারিবারিক-সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলার জোর দাবি জানিয়েছে সিলেটের সচেতন মহল।
সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন- মাদক-সংশ্লিষ্টতা, বেকারত্ব ও যৌতুকের সিলেটে বাড়ছে নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা। আর ধর্ম বিশ্লেষকরা বলছেন, এসবের কারণ- মানুষের নৈতিক স্খলন।
সিলেটের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। করোনাকালীন ১৯ মাসে সিলেটে ১ হাজার ৩৩৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৯৮টি। পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৩০৯টি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সিলেট মহানগরীর ৬টি ও জেলার ১১টি থানায় নারী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগে মামলা হয়েছে ২৫টি, শিশু ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে ১৫টি। এ ছাড়া নারী নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে ২৮টি ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে ১৬টি।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নারী ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে ২১টি, শিশু ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে ১১টি। এ ছাড়া নারী নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছে ২৫টি ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ১২টি।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় ৪৪টি নারী ও শিশু শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৫৩টি। নির্যাতনের শিকার ৯৭ জনের মধ্যে ৩৭ জন মামলা করলেও বাকি ৬০ জন মামলা করতে রাজি হননি।
অপরদিকে, সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নারী নির্যাতনের ঘটনায় ৩ হাজার ৬৮১টি এবং শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৮৭০টি মামলা পেন্ডিং রয়েছে।
সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বা আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ঘটনা সিলেটে বাড়ছে।
এ বিষয়ে জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার মুহাদ্দিস, বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিস্ট মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ বলেন- এসবের প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের নৈতিক স্খলন। আর নৈতিক অধপতনের কারণ হচ্ছে- ধর্মীয় শিক্ষা ও চর্চার অভাব। প্রতিটি পরিবারের ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের চর্চা না থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তিনি বলেন- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন কিংবা ধর্ষণ রোধে কতোই তো মানবরচিত আইন হয়, কিন্তু স্রষ্টার আইন-ই সবার উপরে। ইসলামি নীতি অনুযায়ী একজন ধর্ষকের শাস্তি হলে অন্যজন এমন ঘৃণিত কাজ করতে নিশ্চয় ভয় পেতো। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন কিংবা ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়তে ধর্মীয় আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।