কাজিরবাজার ডেস্ক :
সাঁড়াশি অভিযানে ধরপাকড় শুরু হয়েছে প্রতারণার সর্বাধুনিক সংস্করণ ই-কর্মাসের হোতাদের। তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক দিক কাজে লাগিয়ে রাতারাতি প্রতারণার শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া জনপ্রিয় এই ব্যবসাকে এখন মানুষের আতঙ্কে পরিণত করেছে সংঘবদ্ধ চক্র। ই-অরেঞ্জ থেকে ইভ্যালি হয়ে সর্বশেষ উইকমডটকম পর্যন্ত বিশাল এক সিন্ডিকেটের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। র্যাব সিআইডি ও ডিবির অনুসন্ধানে ওঠে আসছে ভয়ঙ্কর সব প্রতারণার কৌশল ও সিন্ডিকেট। রাজধানীসহ দেশব্যাপী ইতোমধ্যে ৮৬টি ই-কর্মাসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে সিআইডি জানিয়েছে- তাদের জালে ধরা পড়েছে ৬০টি। র্যাবের নজরদারিতে রয়েছে আরও গোটা বিশেক। এর বাইরে ডিবির তদন্তে ধরা পড়েছে আরও ৬টি। এদের পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সরকারী সংস্থাগুলো। এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে ১৭ জন শীর্ষ প্রতারককে আটক করা হয়েছে। সাঁড়াশি অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছেন ৬ জন। তাদেরও ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া দেশে ঘাপটি মেরে থাকা প্রতারকরা প্রতিদিই ধরা পড়ছে। সাঁড়াশি অভিযানে সোমবারও ধরা হয়েছে থলেট ও উইকডটকম নামের প্রতিষ্ঠানের আরও ছয়জনকে। সোমবার রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় বারিধারায় চলছিল আরও দুজন প্রভাবশালী ই-কর্মাসের হোতাকে ধরার অভিযান। এদিকে সোমবার ই-কমার্র্সের প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা জাতীয় প্রেসক্লাবে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে ই-কমার্সের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে ৭ দফা দাবি জানিয়েছেন।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, ই-কমার্স যত দ্রুত মানুষের কাছে পপুলার হয়ে ওঠছিল ততো দ্রুতই এটাকে প্রতারণার নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করাও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলমান করোনা সঙ্কটে লকডাউনের মতো দুঃসময়টা যেন এসব প্রতারকদের কাছে অনেক নিরাপদ কাল হিসেবে বিবেচিত হচেছ। এতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দেশের ই-কমার্স খাত হঠাৎ করেই আস্থার সঙ্কটে পড়েছে। ব্যবসার আড়ালে মানুষের অর্থ আত্মসাত, অনুমোদন ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা ও পণ্য না দেয়ার অভিযোগের স্তূপ ক্রমেই বড় হচ্ছে।
র্যাবের মতে ই-কমার্সের নামে মূলত অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো শুরুতে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে অস্বাভাবিক সব অফার দেয়। পরে দেখা যায় যে, অগ্রিম অর্থ নিলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ পণ্যের টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে তারা পণ্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য সরবরাহকারী বা মার্চেন্টরা বলছেন, দিনের পর দিন তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না।
ই-কমার্সের সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে সোমবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের ৬০ জনের একটি তালিকা তাদের নজরে এসেছে। তার মধ্যে ৩১টির কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মূলত গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে সিআইডির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ইমাম হোসেন বলেন, অনেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কিনেছেন। কিন্তু তারা দিনের পর দিন ঘুরেছেন, পণ্য পাননি। এসব মানুষ থানায় গিয়ে মামলা করেছেন। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুন ধামাকা শপিংয়ের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। সেসময় শুধু ধামাকা শপিংই নয় আলিশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম, দালাল প্লাস ই-অরেঞ্জ এবং বাজাজ কালেকশনসহ ১১টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ। সম্প্রতি সিআইডি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি নিয়ে চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে সিআইডি এ উদ্যোগ নেয়। সিআইডির চিঠির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও (বিএফআইইউ) অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে।
ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে : দেশে সাঁড়াশি অভিযানে ইভ্যালির মতো শীর্ষ কোম্পানির মালিক রাসেল দম্পতি ধরা পড়ায় বাকিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। দিশেহারা হয়ে তাদের কজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছে। এতে পুলিশও সক্রিয় হয়েছে।
ই-অরেঞ্জ, রিং আইডিসহ বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পলাতক ব্যবসায়ীদের বিদেশ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানাকে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ সদর দফতর তিন দফা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভারতকে চিঠি দিয়েছে। তবে ভারত এখনও কোন সাড়া দেয়নি। সাংবাদিকরা ই-কমার্স কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির কর্মকর্তাদের কাছে বিদেশে পলাতকদের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক কামরুল আহসান বলেন, আমরা রিং আইডির মালিক কানাডা প্রবাসী শরিফ ইসলাম ও আইরিন ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেবো। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে, রিংআইডির কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি এখনও তদন্ত করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা জব্দ করেছে। তাদের বিষয়ে আরও তদন্ত চলছে।
এর আগে ইন্টারপোলের সহযোগিতায় তাদের ফেরত চেয়ে চিঠি দিলেও বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও বনানী থানার পরিদর্শক (বরখাস্ত) সোহেল রানাকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে এখনও সাড়া দেয়নি ভারত। ইন্টারপোলের সহযোগিতায় সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) তিন দফায় চিঠি দিয়েছিল ভারতকে। ভারতের কাছ থেকে এখনও কোন সাড়া মেলেনি।
প্রতারণা নিখুঁত হাতিয়ার থলেট ও উইকডটকম : কেউ কারোর চেয়ে কম যায় না। ইভ্যালি যদি অফার দেয় ৪০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেয়া হবে ই-অরেঞ্জ দেয় ৩৫ দিনের। তার চেয়ে আরও কম সময়ের অফার দেয় থলেট ও উইকমডটকম। সুলভ মূল্যে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির কথা বলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুই ভুয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’। চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করবে বলে গ্রাহকরা এ ভুয়া দুই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার দেয়। কিন্তু অর্ডার এবং গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পণ্য না দিয়ে প্রতারণা শুরু করে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা। এভাবে গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারী অনুমোদনহীন ও লাইসেন্সবিহীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’র হেড অব অপারেশন মোঃ নজরুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানের ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতাররা হলেন- হেড অব অপারেশন মোঃ নজরুল ইসলাম, এ্যাকাউন্ট অফিসার মোঃ সোহেল হোসেন (২৭), ডিজিটাল কমিউনিকেশন অফিসার মোঃ তারেক মাহমুদ অনিক (২৮), সেলস এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন ওরফে পিয়াস (২৭), কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ অফিসার মুন্না পারভেজ (২৬) ও সুপারভাইজার মোঃ মাসুম হাসান (২৭)। সোমবার সিআইডি হেডকোয়ার্টার্সে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমান হোসেন। গ্রেফতাররা ‘থলেডটকম’ ও ‘উইকমডটকম’র কর্মরত থাকা অবস্থায় কম মূল্যে বিভিন্ন পণ্য টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল ও নানা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ও অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে অফার দেয়। ভিকটিমরা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করার পর জানতে পারে টাকা পরিশোধ করলে ৩০ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ করা হবে। ভিকটিমরা প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিভিন্ন তারিখে চেকের মাধ্যমে ও নগদ প্রায় আড়াই কোটি টাকা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি টাকা পাওয়ার পর ৫০ দিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিমদের কোন পণ্য সরবরাহ না করে অপেক্ষা করতে বলে। পরে ভুক্তভোগীরা তাদের অফিসে গেলে ভিকটিমদের বিভিন্ন অঙ্কের টাকার চেক প্রদান করে। ভিকটিমরা চেক নিয়ে ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে গেলে এ্যাকাউন্টে কোন টাকা নেই বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে হাজার হাজার লোকের কোটি কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। এ দুটোর অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র, গন্তব্য লজিস্টিকস সার্ভিস লিমিটেড এজেন্ট সংক্রান্ত চুক্তিপত্র, জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এগ্রিমেন্ট সংক্রান্তে চুক্তিপত্রসহ বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, গ্রাহকদের কাছ থেকে চেক গ্রহণের তথ্য, সিপিইউ, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, রেজিস্টার দুটি, টাকা গণনার মেশিন জব্দ করা হয়েছে।
শুধু টিকিট বিক্রিতেই ৫০ কোটি : সবচেয়ে অবাক কাণ্ড হচ্ছে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে টিকিট বিক্রির নামে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকেটি ডট কম। এর বোর্ড অব ডিরেক্টরের একজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি টিম। সম্প্রতি মোঃ রাকিবুল হাসান নামে প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালককেও গ্রেফতার করেছে সাইবার পুলিশ। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডি জানিয়েছে-প্লেনের টিকেট বিক্রির নামে প্রতারণা করে ভ্রমণপিপাসুদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিটি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান জানান, ২০১৯ সালের মে মাসে অনলাইন টিকিটিং এজেন্সি টোয়েন্টিফোর টিকেটি ডটকম যাত্রা শুরু করে। গ্রেফতার দুই আসামি ফেসবুক ও ওয়েবসাইটে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে অর্থ আত্মসাত ও ডিজিটাল প্রতারণা করেছেন। এ পর্যন্ত তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। সাধারণত এয়ারলাইন্সগুলো টিকেটের নির্ধারিত মূল্যে ৭ শতাংশ ছাড় দিয়ে থাকে। সেখানে ‘২৪টিকেটি ডটকম’ ছাড় দিত ১২ শতাংশ। এ ছাড়ের কারণে অনেক এজেন্ট তাদের কাছ থেকে টিকেট কিনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করত। তাদের টিকেট নিয়ে গ্রাহক বিমানবন্দরে এসে জানতে পারেন, টিকেটটি বিক্রি হয়নি। এদিকে আইডি খোলা এবং আয়ের নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে রিং আইডির অন্যতম এজেন্ট মোঃ রেদোয়ান রহমানকে (২২) গ্রেফতার করেছে সিআইডি। সে ২০১৮ সাল থেকে রিং আইডিতে ইউজার হিসেবে কাজ শুরু করে রেদোয়ান। গত সাত-আট মাস আগে রিং আইডিতে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পায়। তখন থেকেই ছয় শতাধিক আইডি বিক্রি করে এক কোটির বেশি টাকা আত্মসাত করে। প্রতিটি সিলভার আইডি বাবদ ১২ হাজার টাকা, গোল্ড আইডি বাবদ ২২ হাজার, প্রবাসী গোল্ড আইডি বাবদ ২৫ হাজার, প্রবাসী প্লাটিনাম আইডি বাবদ ৫০ হাজার করে নিয়েছে সে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রি এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিল।
ভুক্তভোগীদের দাবি : পুলিশ র্যাব সিআইডি ও ডিবির অভিযানের মাঝেও থেমে থাকেনি ই-কমার্সের প্রতারণা। প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা জড়ো হচ্ছেন থানা পুলিশে নয় তো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। তারা প্রতারণার কাহিনী তুলে ধরছেন, আবার প্রতারণা থেকে রেহাই পাবার কৌশলও বাতলে দিচ্ছেন। সোমবার ই-কমার্সে চলমান অস্থিরতা নিরসন এবং নিরাপদ পরিচালনার জন্য কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়াসহ ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ই-কমার্স কাস্টমার্স এ্যাসোসিয়েশন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ই-কমার্স গ্রাহকদের এই সংগঠনটি আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়। তাদের মূল দাবিগুলো হচ্ছে যে কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হয়- তাহলে গ্রাহক যে মাধ্যমে পেমেন্ট করেছে সে মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমপরিমাণ টাকা ৩/৪ কার্যদিবসের মধ্যে গ্রাহকের পেমেন্ট করা টাকা ফেরত দিতে হবে। কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে গ্রাহকদের পেমেন্ট করা টাকা গেটওয়েতে (গ্রাহক) দাবি করলেই ফেরত দিতে হবে। এক্ষেত্রে ঐ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অনুমতির প্রয়োজন নেই। এছাড়া বর্তমানে যেসব গ্রাহকের টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকানো আছে, সে টাকাগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি দিয়ে গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে ফেরত দেয়া হোক। যদি কোন কারণে ই-কমার্সের পেমেন্ট গেটওয়েলো গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত করে অথবা সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। পুরনো যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আছে নতুন পুরনোসহ সব পেন্ডিং অর্ডার ডেলিভারি করার জন্য সরকারের কঠোর নজরদারির আওতায় রেখে ব্যবসা এবং ডেলিভারি করার সুযোগ দেয়া হোক। কোন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যদি নতুন করে বিজনেস করতে আসে সেক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পরিধির ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। অথবা ডিসকাউন্ট ভেল্যু সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। এসক্রো পদ্ধতিকে অটোমেটিক এবং ডিজিটাল করতে হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। প্রয়োজনে এসক্রো সিস্টেমের ড্যাশবোর্ডে কাস্টমার, মার্চেন্ট, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, পেমেন্ট গেটওয়ে, ব্যাংক সবার এক্সেস দিতে হবে।
এ সময় দেখা যায়- অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা পঞ্চাশোর্ধ মোস্তাক হোসেন তার প্রতারণা কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি জানান- নিজের পেনশনের ১১ লাখ টাকা দিয়ে দশটি পালসার বাইক অর্ডার করেছিলেন কিউকমে। সেই টাকাটা এখন আটকা রয়েছে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম ফ্রস্টারে। এই টাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমিসহ অন্য গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। দুই বাইকের দুই লাখ টাকা আটকে রাখার কথা জানিয়ে নুর আলম রতন নামে আরেক গ্রাহক বলেন, মিডিয়ায় এসেছে পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ফ্রস্টার বলেছে কিউমের টাকা তাদের কাছে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিলে এই টাকা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়া হবে। এখন আমরা চাই বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত টাকাটা আমাদের ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুক।
রিং আইডির সাইফুলের জামিন মিলেনি : শুধু অভিযান নয়। আদালতও বেশ সতর্ক ও তৎপর রয়েছে এসব মামলার শুনানিতে। গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা সহজে জামিন পাচ্ছেন না। তারই নজির সাইফুল ইসলাম। ভাটারা থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জামিন পাননি বিতর্কিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রিং আইডির পরিচালক সাইফুল। সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে সাইফুল ইসলামের আইনজীবী জামিনের শুনানি করেন।