বিধবার মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা

11

॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥

(পূর্ব প্রকাশের পর)
অর্থনৈতিক অধিকার : ইসলামী আইন বিধবা নারীদের যে সকল অধিকার দিয়েছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক অধিকার অন্যতম। ইসলাম প্রত্যেক বিবাহিতা নারীর মোহরের অধিকার দিয়েছে। “ মোহর আরবী শব্দ, অর্থ-স্বেচ্ছাকৃত দান। মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহের চুক্তিকালে বর কর্তৃক কন্যাকে যে অর্থ দেয়া হয় তাউ মোহর এবং তা স্ত্রীর নিজস্ব সম্পত্তিরূপে গণ্য হয়। ইসলাম পূর্বকলে মোহর ওয়ালীর হাতে অর্থাৎ পিতা, ভাই বা যে আত্মীয়ের অভিভাবকত্বে কন্যা থাকত তার হাতে প্রদান করা হত। মোহরের পরিমাণ স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতার ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে। ইসলামে মোহর দু’ভাবে নির্ধারণ করা হয়। নির্দিষ্ট মহর বিবাহের সময় যে মহরের পরিমাণ নির্দিষ্টভাবে পরিষদ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত, সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, প্রাগুক্ত, খ.২,পৃ.১৮৯-১৯০”। ইসলামী আইনে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে বিবাহের সময়ই সন্তষ্টচিত্তে মোহর পরিশোধের নির্দেশনা প্রদান করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আর তেমরা স্ত্রীদের কে তাদের মোহর খুশিমনে দিয়ে দাও। “আল-কুরআন, ৪:৪”। “আল-কুরআন, ৪: ২৪”।
এ প্রসঙ্গে ইমাম বুখারি (রহ.) উল্লেখ করেন, ‘‘আর অধিক মোহর এবং সর্বনিম্ন মোহর কত?- এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং তোমাদের যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থ দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছু গ্রহণ করো না ” (আল-কুরআন, ০৪ : ২০) এবং আল্লাহ তাআলা আরো বলেন “অথবা তোমরা তাদের মোহরের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দাও”। (আল-কুরআন,০২ : ২৩৬)” সাহল (রা.) বলেছেন নবী (সা.) এক ব্যক্তিকে বললেন, যদি একটি লোহার আংটিও হয় তবে মোহর হিসাবে যোগাড় করে দাও। “ বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায়: আন-নিকাহ, পরিচ্ছেদ: আল্লাহর বাণী:- আর যদি বিবাহে মোহর নির্ধারণ না হয়ে থাকে এবং স্বামী মৃত্যুবরণ করে, তাহলে ঐ বিধবাকে মহরের মিছল “মোহরে মিছিল হচ্ছে যে বিয়েতে মোহরের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ করা হয় না; বরং স্ত্রী আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক মর্যাদা, স্ত্রী বোন অথবা পিতার পরিবারের অন্যান্য কন্যা যথা: ফুফুর মোহরের অনুপাত এবং গুণাগুণ অনুসারে যে মোহর প্রদান করা হয়। যে সব ক্ষেত্রে বিয়েতে লেনদেন নির্দিষ্ট করা হয় না, সে সব ক্ষেত্রে এই মোহর মিছলই নির্ধারণ হবে। [সম্পাদনা পরিষদ কর্তৃক সংকলিত ও সম্পাদিত, সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, প্রাগুক্ত, খ-২, পৃ. ১৯০”। প্রদান করতে হবে। “আবূ আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে আন-নাসায়ী, আস-সুনান, অধ্যায়: নিকাহ, পরিচ্চেদ: ইবাহাতু তাযাওয়াজু বিগায়রি সাদাক্বি, বৈরুত : দারুল কিতাব আল-ইলমিয়্যাতি, খ. ৩, পৃ. ৩১৬, হাদীস নং-৫৫১৫”। মোহর পরিশোধ সম্পর্কে হাফিয ইবনে কাসীর (রা.) উল্লেখ করেছেন, “স্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে স্বামীগণ মোহর বিবাহের পরও পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু মোহর পরিশোধের পূর্বেই যদি স্বামী মৃত্যুবরণ করে, তবে স্ত্রীর স্বামীর নিকট মোহর বাবদ ঋণী হয়ে থাকবে। তাই স্ত্রী তার ঋণ আদায়ের জন্য স্বামীর সম্পত্তি আটক করার অধিকার রাখে। “ইবনে কাসীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, তাহকীক: সামী ইবনে মুহাম্মদ আস-সালামাহ, প্রাগুক্ত, ১৯৯৯, খ. ১, পৃ. ৬৩৬”। “আল-কুরআন, ২:২৩৬-২৩৭”। এ প্রসঙ্গে মুসলিম আইন গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, “কোন মৃত মুসলমানের উত্তরাধিকারীরা দেনমোহরের ঋণের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী নয়। মৃতের কাছে প্রাপ্য অন্যান্য ঋণের মত দেন মোহর ঋণেও উত্তরাধিকারীর মৃতের সম্পত্তিতে প্রাপ্য অংশের আনুপাতিক হারে প্রত্যেক উত্তরাধিকারী দায়ী হবে। কোন মহিলার স্বামীর সম্পতি তার দখলে থাকলে স্বামীর অন্যান্য উত্তরাধিকারীরা তাদের নিজ নিজ অংশের দখল উদ্ধার করতে পারবে। একজন মুসলমান এক বিধবা এক পুুুত্র ও দু কন্যা রেখে মারা যায়। বিধবা ৩২০০ টাকার দেনমোহর ঋণ পাবার অধিকারী। পুত্রের প্রাপ্য অংশ হল ৭/১৬ এবং সে ৭/১৬ এর ৩২০০ = ১৪০০ টাকা দিতে বাধ্য, এবং বিধবার দখলে স্বামীর সম্পত্তি থাকলে পুত্র ১৪০০ টাকা পরিশোধ করে বিধবার থেকে নিজ অংশ নিবে। প্রত্যেক কন্যার প্রাপ্য অংশ হল ৭/৩২ এবং সে বিধবাকে ৭/৩২ এর ৩২০০ = ৭০০ টাকা প্রদান করার পর নিজ অংশ পাবে। “ গওছুল আলম, মুসলিম আইন, ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০০৯, পৃ. ২৭১-২৭২”।
ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে মিরাস প্রাপ্তির অধিকার দিয়েছে এবং তাদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধরিত অংশ রয়েছে। “আল-কুরআন, ৪:৩২”। আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশ রয়েছে, ভাইয়ের সম্পত্তিতে বোনের অংশ রয়েছে, সন্তানের সম্পত্তিতে মায়ের অংশ রয়েছে, তদ্রুপ মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে ও স্ত্রীর নির্ধারিত অংশ রয়েছে। পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অংশ- “আল-কুরআন, ৪:১১”। সন্তানের সম্পত্তিতে মাতার অংশ- “আল-কুরআন, ৪:১১”। স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অংশ- “আল-কুরআন, ৪:১২”। ভাইয়ের সম্পত্তিতে বোনের অংশ- “আল-কুরআন, ৪:১২”। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, স্ত্রীদের জন্য এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্য হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ। “আল-কুরআন, ৪:১২”। আলোচ্য আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে বেরিয়ে আল-আসওয়াফ নামক স্থানে এক আনসারী মহিলার নিকট উপস্থিত হই। তখন ঐ মহিলা তার দুটি মেয়েকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা সাবিত ইবনু কায়িস (রা.) এ কন্যা। এদের বাবা আপনার সাথে ওহুদের যৃদ্ধে গিয়ে শাহাদত বরণ করেছেন। এদের চাচা এদের সমস্ত সম্পদ আত্মসাৎ করে নিয়ে গেছে। এদের জন্য কোন কিছু রাখেনি। সম্পদ ছাড়া তো এদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। (অর্থাৎ সহায়- সম্পত্তিহীন এ মেয়েদেরকে কেউ বিয়ে করবে না।) রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: আল্লাহ এ ব্যাপারে ফয়সালা করবেন। তখন মিরাসের আয়াত নাযিল হয়। মিরাসের আয়াত নাযিল হলে রাসূলুল্লাহ (সা.) মেয়েদের চাচার কাছে লোক পাঠিয়ে বলেন : সাবিতের মেয়েদের তার সম্পদের তিন ভাগের দু‘ভাগ দিয়ে দাও এবং তাদের মাকে আট ভাগের এক ভাগ দাও। আর বাকী অংশ তোমার। ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) বলেন, বর্ণনাকারী বিশর ভুল করেছেন। আসলে মেয়ে দু’টি সা’দ ইবনু রবী (রা.) এর কন্যা। কারণ সাবিত ইবনু কায়িস (রা.) শহীদ হন ইয়ামামার যুদ্ধে। “ ইমাম আবূ দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: ফারাইয, পরিচ্ছেদ: মা যাআ ফী মিরাছিল সুলবি, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১৩৪, হাদীস নং-২৮৯১”।
মতামত প্রকাশের অধিকার : ইসলাম একটি সহজাত ধর্ম। কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে স্বভাবতই সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং নিজের মতামত প্রকাশের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এই সুযোগে অনেকেই তাদেরকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। তাই ইসলাম বিধবাদের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য তাদেরত্তামতের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারী ইদ্দত পালনের মাধ্যমে তার গর্ভে সন্তানের অস্তিত্ব নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু বিধবা নারীর ঐ সময়ের মনসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ইসলাম ইদ্দত পালনের স্থান নির্বাচনে তার মতামতের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, অতঃপর যদি সে স্ত্রী নিজ থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নারী নিজের ব্যাপারে কোন উত্তম ব্যবস্থা করে, তবে তাতে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। “আল-কুরআন, ২:২৪০”।
বিধবা নারীর পুনরায় বিবাহের প্রস্তাব আসলে তার মতামত ব্যতীত বিবাহ শুদ্ধ হবে না। ইসলামী আইনে বিবাহের প্রস্তাবে নারী যদি চুপ থাকে, তাহলে তার সম্মতি রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বিধবা নারীর পুনরায় বিবাহের প্রস্তাব আসলে তার মৌখিক সম্মতি প্রয়োজন। কেননা অনেক ক্ষেত্রে তাদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ও তার সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেওয়া হয়ে থাকে। তাই বিধবা নারীর অধিকার রয়েছে মৌখিকভাবে তার মতামত প্রকাশ করার। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা রয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন : পূর্ব বিবাহিতা তার (নিজের বিবাহের ব্যাপারে সিধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে) নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হক্বদার। কুমারীকে তার থেকে তার সম্মতি নিতে হবে, তার নিরবতাই তা সম্মতি। “ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায়: নিকাহ, পরিচ্ছেদ: ইসতি‘জানি সাইবি ফিন নিকাহি বিন নুত্বক্বি ওয়ালবিকরি বিছ সুকুত, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ১০৩৭, হাদীস নং-১৪২১”। বিধবা নারীকে জোর জবরদস্তি করে বিবাহ দিলে, সে বিবাহ ভঙ্গ করার অধিকার তার রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, খানসা বিনতে খিযাম (রা.) থেকে বর্নিত। তার পিতা তাকে বিবাহ দিলেন তিনি ছিলেন সায়্যিব (বিবাহিত নারী), তিনি তা অপছন্দ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এ নিকট গেলেন তিনি এ বিবাহ ভেঙ্গে দিলেন। “আবূ আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে শুআইব আন-নাসায়ী, আস-সুনান, অধ্যায়: নিকাহ, পরিচ্ছেদ: আস সায়্যিবু ইযাওয়াযুহা আবুহা ওয়াহিয়া ক্‘ারিহাতুন, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ২৮৩, হাদীস নং-৫৩৮৩”।
বিবাহের অধিকার : ইসলাম বিধবাদের বিবাহের অনুমতি দিয়েছে। কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করলে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করার পর ঐ বিধবা ইচ্ছা করলে বিবাহ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, তারপর যখন তারা ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতিসঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। “আল-কুরআন, ২”২৩৪”।
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট মুফাসসির ইবনে জারীর আত-তাবারী (রহ.) বলেন “বিধবা নারীরা ইদ্দত কাল অতিবাহিত করার পর সুগন্ধি ব্যবহার, সাজ-সজ্জা ও যে গৃহে তার ইদ্দত পালন করেছে তা থেকে বের হতে পারবে এবং বৈধ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আল্লাহ তাআলা তাদের ইদ্দত পালনের পর এসব কাজের জন্য বৈধ ঘোষণা করেছেন।” “আবু জা‘ফার মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত-তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তাফসীরুল কুরআন, প্রাগুক্ত, খ. ২৩, পৃ. ২৪২”। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবুত্ব ত্বাহির ও হারমালাহ্ ইয়াহইয়া (রহ.) থেকে বর্ণিত, উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন, তার পিতা আব্দুল্লাহ (রাহ.), ‘উমার ইবনু আবদিল্লাহ ইবনুল আরক্বাম আয-যুহরীকে নির্দেশ দিয়ে লিখলেন যে, তিনি যেন সুবয়া‘আহ বিনতু হারিছ আসলামীর কাছে চলে যান। এরপর তাকে তার হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে ফাতওয়া চাইছিলেন এবং তিনি তাকে যা বলেছিলেন তখন উমর ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু, উতবাকে লিখে পাঠালেন যে সুব‘আহ তাকে জানিয়েছেন তিনি বানু আমির ইবনু লুঈ গোত্রের সা‘দ ইবনু খাওয়ালার স্ত্রী ছিলেন। তিনি ছিলেন বদরী সাহাবী এবং বিদায় হজে¦র সময় ওফাত পান। সে সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। তার স্বামীর ইন্তেকালের অব্যবহিত পরেই তিনি সন্তান প্রসব করেন। এরপর যখন তিনি নিফাস থেকে পবিত্র হলেন, তখন বিবাহ পয়গামদাতাদের জন্য সাজসজ্জা করতে লাগলেন। তখন বানূ আবদূদ দার গোত্রের আবূ সানাবিল ইবনু বা‘কাক নামক এ ব্যক্তি তার কাছে এলেন। তখন তিনি তাকে বললেন, উদ্দেশ্য কি? আমি তোমাকে সাজ সজ্জা করতে দেখতে পাচ্ছি! সম্ভবত তুমি বিবাহ প্রত্যাশী? আল্লাহর কসম! চার মাস দশ দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি বিয়ে করতে পারবে না। সুবয়া‘হ বললেন, যখন সে লোকটি আমাকেএ কথা বলল, তখন কাপড়-চোপড় পরিধান করে সন্ধ্যাবেলা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে চলে এলাম। এর পর আমি তাকে সে বিষয়ে জানিয়ে দিলাম। তিনি আমাকে জানিয়ে দিলেন যে, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই আমার ইদ্দত পূণ হয়ে গিয়েছে। তিনি আমাকে আরও নির্দেশ দিলেন যে, আমি ইচ্ছা করলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি। “ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায়: ত্বলাক্ব, পরিচ্ছেদ: ইনক্বিদা‘ই ইদ্দাতি মুতাওয়াফ্ফঅ আনহা যাওজুহা ওয়াগায়রিহা বিওয়াদ‘য়িল হামলি,প্রাগুক্ত, খ.২, পৃ.১১২২, হাদীস নং-১৪৮৪”।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিধবাদের সাহায্য সহযোগিতা : Loomba Foundation The Loomba Foundatin was founded by Lory Raj Loomba CBE and his wife Veena, Lady Loomba. It was established in rhe UK as a charitable Trust Deed on 26 June 1997 and has sister charities registered in India and the USA. The inspiration came from Raj`s late mother, Shrimati Pushpa Wati Loomba, who became a widow at the early age of 37 and succeeded in educating her seven young children single-handed (www.theloombafoundation.org) এর Global Windows Report-২০১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমানে বিধবার সংখ্যা ৪,১৯৪,১২৫ জন। (www.theloombafoundation.org/../2015/../Loomba-Foundation-Global-Windows. বাংলাদেশ সরকার বিধবাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সংবিধানের ১৫/ঘ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,“ সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরুপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্তার ক্ষেত্রে সরকারী সাহায্য লাভের অধিকার। বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে বিধবাদের সাহায্য-সহযোগিতা শুরু করে। তাদের এ কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো, বিধবা মহিলাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা, পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি, আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে তাদের মনোবল জোরদার করা ও চিকিৎসা সহায়তা ও পুষ্টি সরবরাহ বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা প্রদন করা। শুরুত ৪.০৩ লক্ষ জনকে মাসিক ১০০ টাকা হারে বিধবা ভাতা প্রদান করা হয়। আর বর্তমানে ১০১২.০০ লক্ষ জন বিধবাকে মাসিক ৪০০ টাকা হারে বিধবা ভাতা প্রদান করছে। “অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১৫ এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে, বিধবা স্বামী পরিত্যাক্ত ও দুস্থ মহিলা ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে শতকরা শতভাগ এবং বয়স্কভাতা ও প্রতিবন্ধিভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে শতকরা ন্যূনতম ৫০ ভাগ নারীর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক থাকায় ৩৬.২৪ লক্ষ নারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ফলে নারীর সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র ঝুঁকি হ্রাস পাবে। বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ মহিলা এবং প্রতিবন্ধি নারীদের বাসস্থান, পরিধেয়, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ইউরিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে মাননীয় স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি দুই জন, উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি একজন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিনিধি একজন, ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড প্রতিনিধি একজন ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের সকল উপজেলা ও উন্নয়ন সার্কেল এবং সকল শ্রেণীর পৌরসভায় প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসংখ্যার ভিত্তিতে অতীব দরিদ্র, দুস্থ, অসহায় বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা মহিলাকে প্রতিমাসে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে এ ভাতা প্রদান করা হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলাদের ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। “ বিধাবা ও স্বামী পরিত্যক্ত দুস্থ মহিলাদের ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা (সংশোধিত)- ২০১৩, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর”।
বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও বিধবাদের সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পিকেএসএফ, পিডিবিফ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শক্তি ফাউন্ডেশন ও টিএমএসএস।
আন্তর্জাতিকভাবে বিধবাদের সহযোগিতা : বিধবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে সকল আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের মাঝে  Loomba Foundation অন্যতম। এই সংগঠনের উদ্দ্যোগেই জাতিসংঘ ২০১০ সালে তাদের ৬৫ তম অধিবেশনে বিধবাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২৩ জুনকে বিশ্ব বিধবা দিবস ঘোষনা করে। তাদের তথ্য মতে বিশ্বজুড়ে বিধবারা নিধারুন ও বৈষম্যের শিকার। তারা তাদের ন্যায্য পাওনা খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা ও উত্তরাধিকার থেকে সম্পূন্নভাবে বঞ্চিত। তাদের মতে বিধবাদের সন্তানরা সঠিক ভাবে লালিত-পালিত না হবার কারনে তারা নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের Global Windos Report-২০১৫ অনুযায়ী বিশ্বে বর্তমানে বিধবার সংখ্যা ২৫৮, ৪৮১,০৫৬ মিলিয়ন, যা ২০১০ সালে ছিল ২৪৫,১৮৮,৬৩০ মিলিয়ন। তারা বিধবাদের অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আর তা হলো-আইনী সহযোগিতা,প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ, বিধবাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরনসহ অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। www. (www. theloombafoundation.org/../2015/../Loomba-Foundation-Global-Widows-.)” Right International (WRI) ÕÕWidows’ Rights International is a small UK based nonprofit, non- governmental organisation working in the field of human rights for widows. We are currently  building a web-based and informftion for all those concerned with challenging the abuse of widows. 405, 137 Goswell Rd, London EC1v 7ET, United Kingdom, +44 20 7253 5504, httt:/www.widowsrights.org/index.html.  সর্বপ্রথম ২০০১ সালে লন্ডনে বিশ্ব বিধবা সম্মেলন আয়োজন করা হয়। তারা তাদের সম্মেলনে বিধবাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়। httt:/www. widowsrights.org/index.html তারা বিধবাদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি ও বৈষম্য দূর করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার : মানব জীবনে সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন ধর্ম ও সংগঠন নানা কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার কারন হল, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনিই জানেন এর সমাধানের পথ। কিন্তু আমরা সে পথের অনুসরণ না করার কারনে এত দুর্গতি-দুর্ভোগ। তাই আমাদের কর্তব্য, তার বিধানের অনুসরণ ও অনুকরণ। যার মাধ্যমে আমরা বিধবাদের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব এবং তারাও সমাজের অন্যান্য সদস্যের ন্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। যার ফলে সমাজ থেকে বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে সকলের জন্য বাসযোগ্য সমাজ প্রতিষ্ঠায় তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। (সমাপ্ত)