শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
ওসমানীনগরে রাতের আঁধারে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক শেরপুর শাখার ফাস্ট ট্র্যাক এটিএম বুথ ভেঙে ২৪ লাখ টাকা ২৫ হাজার ৫শত টাকা লুটের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রবিবার রাতে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ আশরাফুল আমিন বাদী হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার কিংবা মূল রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। ঘটনার পর ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক সহ ব্যাংক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ঘটনার সংঘটিত হওয়ার সময় ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংক শাখা কর্মকর্তাদের এমন রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রাহকদের মধ্যে ধূম্রজালের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও গ্রাহকরা বলছেন মার্কেটের ২য় তলায় থাকা ব্যাংকটির শাখার ভিতরে ৫টি ও নিচ তলায় বাহিরে বুথ সংলগ্ন ৩টি সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। সিসি ক্যামেরা থাকার পরও ডাকাত শনাক্ত না হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর পুলিশ বলছে সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো সেগুলো কাজ করছে না। তবে সার্বিক বিষয়ে ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ আশরাফুল আমীন সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য প্রদানে অনিহা প্রকাশ করলেও তার দাবি ঘটনার সময়ে সিসি ক্যামেরাগুলো সচল ছিল। ডাকাতির ঘটনার সিসি টিভির আংশিক একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশে উপজেলার শেরপুরস্থ ইউনুছ ম্যানশনের ২য় তলায় ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের একটি শাখা রয়েছে। একই মাকের্টের নিচ তলায় থাকা ব্যাংকটির ফাস্ট ট্র্যাক এটিএম বুথে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৪টার দিকে উক্ত বুথে মুখোশধারী চারজন প্রবেশ করে বুথের নিরাপত্তাকর্মী জাকারিয়া (২৩) কে মারধর করে দুই হাত ও মুখ স্কচটেপ বেঁধে ও গলায় চুরি ধরে জিম্মি করে। এরপর তারা এটিএম বুথের মেশিনটি শাবল দিয়ে ভেঙ্গে মোট ২৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৫০০টাকা লুটে নেয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মী জাকারিয়া হাতের বাঁধন খুলে এটিএম বুথের দ্বিতীয় তলায় থাকা অপর নিরাপত্তাকর্মী সাহেল মিয়াকে ইশারা করলে তিনি এসে জাকারিয়ার মুখের স্কচটেপ খুলে দেন। তারপর জাকারিয়ার মুখ থেকে বিস্তারিত শুনে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা, থানা পুলিশ, সিআইডি, পিআইবি ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে ব্যাংক কর্মীদের বুথ পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দ্রুত তারা বুথের সাটার (দরজা) নামিয়ে দেন। বুথের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ব্যাংকে ভয়েজ রেকর্ড ও ভিডিও ধারণ না করার শর্তে কথা বলেন শাখা ব্যবস্থাপক সৈয়দ আশরাফুল আমিন। তিনি জানান,এটিএম বুথের ভেতরে পাঁচটি ও বাইরে (বুথ সংলগ্ন) তিনটি সিসি ক্যামেরা সচল রয়েছে। মুখোশধারী চারজন দুষ্কৃতিকারী বুথের ভেতর প্রবেশ করে ভেতরে থাকা একমাত্র নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সিসি ক্যামেরায় কালি ছিটিয়ে দেয়। এতে ফুটেজ ঝাপসা হয়ে গেলে তারা বুথ ভেঙ্গে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। তবে বাইরে থাকা তিনটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ব্যাপারে তাঁর কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক ব্যবসায়ী জানান-শেরপুর বাজার কমিটির এক নৈশ্যপ্রহরী ভোর পৌনে চারটার দিকে বুথের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হেলমেট পরিহিত তিন যুবককে মোটরসাইকেলে বসে থাকতে দেখেন। হঠাৎ পেছন থেকে আরও একজন দৌড়ে এসে মোটরসাইকেলটি উঠলে চারজন মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়। এ সময় শেরপুর টুল প্লাজার সামনে থানা পুলিশের একটি ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, মামলা দায়েরের পর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িতদের সনাক্ত ও গ্রেফতারে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তৎপর রয়েছে।