সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
বহু জল্পনা-কল্পনা ও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ একাংশ) আসনের উপ-নির্বাচনের ভোগগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বেসরকারী ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি ৯০ হাজার ৬৪ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক পেয়েছেন ২৪ হাজার ৭৫২ ভোট। হাবিবুর রহমান হাবিব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৬৫ হাজার ৩১২ বেশি ভোট পান।
গতকাল শনিবার রাত পৌনে ৯ টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কেন্দ্রে সিলেট জেলা প্রশাসক ও
রিটার্নিং অফিসার কাজী এমদাদুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
এছাড়াও এ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সাবেক সাংসদ শফি আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন কার গাড়ী প্রতীকে ৫ হাজার ১৩৫ ভোট ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ডাব প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬৪২টি।
এর আগে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) এর মাধ্যমে বিরতিহীন ভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটের কেন্দ্র ছিলো ১৪৯টি। আর ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো ৩০ শতাংশের মতো।
শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ উপ-নির্বাচনে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাবিব-আতিক কোলাকুলি : গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সিলেট-৩ আসনের (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এরপর প্রায় দুঘণ্টায় শেষ হয় ভোট গণনা। ফলাফলের পর জয়ী নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে অভিনন্দন জানিয়েছেনতার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। তারা এসময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়স্থ ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। অভিনন্দন জ্ঞাপনকালে হাবিব ও আতিক একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
বিকেলে ভোট দিলেন আতিক : সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের বিকেলে ভোট দিতে পেরেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে প্রার্থীর নিজ কেন্দ্র দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারের রেবতী রমণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি। এ সময় তিনি তার ভোট দিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, সকালে ভোট দিতে এসে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জটিলতার কারণে ভোট দিতে পারিনি। তবে এখন ভোট দিতে পেরে আমি সন্তুষ্ট।
এদিকে সকালে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙুলের ছাপ না মেলায় নিজের ভোট দিতে পারেননি জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। পরে তাকে পুনরায় আসতে বলেন নির্বাচন কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ওই প্রার্থী এর আগে হবিগঞ্জের ভোটার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি হবিগঞ্জ থেকে এখানে ভোট স্থানান্তর করেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তার ভোটটি এখানকার তালিকায় আপডেট হয়নি। তবে সকালের ঘটনার পরই আমি নির্বাচন কমিশনে কথা বলেছি। দ্রুত তার ভোটার নাম্বার এখানে আপডেট করা হয়েছে। বিকেলে তিনি তার ভোট দেন।
এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ আতিকের : সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। মারধর করে এজেন্টকে বের করে দেয়া, ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের ফিরিয়ে দেয়া ও কোন কোন কেন্দ্রে লাঙ্গলের ভোটারদের জোরপূর্বক নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিযোগ করেন। নির্বাচন নিয়ে তার অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারের কাছেও করেছেন বলে জানান আতিক। আতিক জানান, ফেঞ্চুগঞ্জের ৭টি কেন্দ্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল করে নিয়েছেন। পিটাইটিকর, কাসিম আলী স্কুল ও চন্ডিবাজারসহ অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকে লাঙ্গলের এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটারদেরও মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আতিকের অভিযোগ, দক্ষিণ সুরমার কুচাই শ্রীরামপুর সেন্টার থেকে লাঙ্গলের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। লাঙ্গলের ভোটারদের জোর করে নৌকায় ভোট দেয়ানো হয়েছে।
ইভিএমে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ শফির : ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদান করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সিলেট-৩ আসনের সাবেক সাংসদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফি আহমেদ চৌধুরী। গতকাল শনিবার দুপুরে ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন অভিযোগ করে বলেন, ভোটের আগে ইভিএম নিয়ে ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। বিএনপির বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, মানুষ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে অভ্যস্ত নয় এবং তিনি নিজেও জানতেন না ইভিএমের মাধ্যমে কিভাবে ভোট দিতে হয়। এছাড়া নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা অনেক পোলিং কর্মকর্তাদেরও ইভিএম সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। এদিকে নারী ভোটাররা ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দিতে এসে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন মন্তব্য করে শফি আহমেদ চৌধুরী বলেন, নারী ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট খুঁজছেন। ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। তাই অনেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটও দিতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন ২৮ জুলাই ভোট গ্রহণের তারিখ নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোট গ্রহণের দু’দিন আগে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় গতকাল শনিবার ৪ সেপ্টেম্বর।