বিষণ্নতায় শিক্ষার্থীরা

7

অর্থনীতির চাকা দুর্বিপাকে পড়া থেকে শুরু করে ভবিষ্যত নাগরিক গড়ার মূল কার্যক্রম শিক্ষা ব্যবস্থাও অবরুদ্ধতার কঠিন বেড়াজালে। কলকাকলিতে মুখরিত প্রাতিষ্ঠানিক পাঠক্রমও অনিশ্চয়তার কবলে। সেই ৮ মার্চ ২০২০ সালে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলে ১৭ মার্চ থেকে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। চলমান অদ্যাবধি। ফলে, ঘরে বসে অলস অবসর সময় কাটানো শিক্ষার্থীদের ক্রমান্বয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা হলেও তা কতখানি ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে হরেক রকম প্রশ্নের অবতারণা এখনও চলছে। সরাসরি জরিপে বেরিয়ে এসেছে যে, প্রযুক্তির বলয়ে শিক্ষা কার্যক্রম কোনভাবেই সর্বজনীন হয়নি। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব শিক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক আঙ্গিনায় প্রবেশ করতেও হিমশিম খেয়েছে ও খাচ্ছে। যাদের কাছে তথ্যপ্রযুক্তির সরবরাহ অপর্যাপ্ত তারা অনলাইনের শ্রেণীপাঠে সম্পৃক্ত হতে পারেনি। প্রতিদিনের নিয়মমাফিক শৃঙ্খলিত কার্যক্রমে শিক্ষাঙ্গনে যাওয়ার প্রচলিত ধারার বিচ্যুতিতে উদীয়মান দেশের ভাবী নাগরিকদের কি মাত্রায় ক্ষতির আবর্তে পড়তে হচ্ছে তেমন গবেষণা প্রতিবেদনও উঠে আসতে সময় লাগছে না। নতুন এক জরিপে দৃশ্যমান হয় মানসিক বিপন্নতায় ভুগছে ৬১% শিক্ষার্থী, যারা প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়ে। এটা শুধু মনোবৃত্তির বৈকল্যই নয়, সুস্থতার নিরিখেও অশনি সঙ্কেত। মানসিক অস্থিরতায় চারপাশের পরিবেশ যখন প্রতিকূলে চলে যায়, তেমন দুঃসময়ে উদীয়মান খুদে ও তরুণ প্রজন্মকে বিকাশমান ধারা থেকে বিচ্যুত করে বিষণ্ণতার প্রকোপ চরমভাবে আক্রান্ত করছে। করোনায় যে বহুমাত্রিক সমস্যা কর্মজীবী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষদের রুজি-রোজগারের ওপর আঘাত হেনেছে, তাতে তাদের স্কুল-কলেজপড়ুয়া সন্তানদের ওপরও চরম বিপর্যয় নেমে আসায় সৃষ্টি করেছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, মানসিক বিপন্নতা ছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াও বর্তমান সময়ের এক বিপজ্জনক ক্রান্তিকাল। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৩৬ ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যায় সমর্পিত হয়েছে। বাসায় বসে অভিভাবকের বকা-ঝকা শোনা থেকে শুরু করে অটোপ্রমোশনে নিজের আস্থা হারানো ছাড়াও অনলাইনভিত্তিক শিক্ষা পাঠক্রমে সংযুক্ত হতে ব্যর্থ হওয়ায় জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মেছে। অনেকের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী এই মুহূর্তে চরম মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। সুতরাং তাদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বাবা-মা এবং অভিভাবকদেরই নতুন করে ভাবতে হবে। এমন করে লাগাতার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিচ্যুতি আগে কখনও ঘটেনি। সংবেদনশীল হয়ে স্পর্শকাতর এই মানসিক বিপর্যয়কে আরও সহনশীল, সচেতন দায়িত্ববোধ আর পরিস্থিতির আলোকেই বিবেচনায় আনা সঙ্গত। জাতির ভবিষ্যত বলে বিবেচিত নতুন ও আধুনিক কারিগরদের কোনভাবেই মানসিক বৈকল্যের আবর্তে চলে যেতে দেয়া যাবে না।