ওসমানীনগর থেকে সংবাদাদাতা :
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ৩ শিক্ষার্থীর উপর মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বিকাল ৪টার দিকে স্কুল ছুটির পর গোয়ালাবাজারে ঘন্টা ব্যাপি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে শতশত যানবাহান আটকা পরে। এসময় সিলেট -২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরণের শ্লোগান এবং জুতা প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানার ওসি এস এম মাইন উদ্দিনসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
জানা গেছে, উপজেলার ব্রাম্মণ গ্রামের গৌছ মিয়ার পুত্র ইমন আহমদ পাপ্পু, আঙ্গুর মিয়ার পুত্র আবু জায়েদ ও করনসী রোড এলাকার সালেহ আহমদের পুত্র আরিফ আহমদের সাথে পূর্ব সিরাজনগর গ্রামের আশিক মিয়ার পুত্র আব্দুল আজিজের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। পূর্ব শত্রুতার জেরে ২৮ আগষ্ট বিকাল ৫টার দিকে গোয়ালাবাজারে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আব্দুল আজিজ ৩১ আগষ্ট পাপ্পু, জায়েদ ও আরিফের নাম উল্লেখসহ আরো ২০ থেকে ২৫জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করে। মামালা দায়েরের পূর্বে এমপি মোকাব্বির খান আব্দুল আজিজের আত্মীয় এবং এমপির মাধ্যমেই মামলা দায়ের করা হবে বলে হুমকি দেয় আজিজ। এমন খবরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামে। শিক্ষার্থীদের সাথে সাধারণ জনণনও একাত্মতা পোষণ করেন।
আন্দোলনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের আত্মীয় আব্দুল আজিজ। মোকাব্বির খান নিজের পাওয়ার দেখানোর জন্য থানার ওসিকে দিয়ে মামলা রেকর্ড করিয়েছেন। নিজে অনিয়মন দুর্নীতি করে প্রশাসনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপর মামলা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন এমপি মোকাব্বির খান। শিক্ষার্থীরা এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।এই বিষয়ে মামলার বাদি আব্দুল আজিজের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য কিবরিয়া মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কথা জেনে সেখানে যাই। উপজেলা আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছে। বর্তমান এমপি মোকাব্বির খান শিক্ষার্থীদের উপরে মামলা দায়েরের জন্য প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ আম্বিয়া বলেন, মামলা যে কারো বিরুদ্ধে হতে পারে। সিলেট ২ আসনের এমপি মেকাব্বির খানের কথামতো প্রশাসনের কর্মকর্তারা না চললে কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সংসদে কথা বলার ভয় দেখিয়ে তদবির বানিজ্যেসহ সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ গিলে খাচ্ছেন তিনি। তার ইন্দনে প্রশাসন এই মামলা রেকর্ড করতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মোকাব্বির খান প্রশাসনকে ব্যবহার করে যদি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হামলা মামলা দিয়ে হয়রানী করেন তাহলে এর পরিনাম ভালো হবে না। এমপিকে এখন পর্যন্ত জনগণের কোন উন্নয়ন করেন নাই। অযোগ্য মানুষকে এমপি করায় দুই উপজেলার বাসিন্দারও কলঙ্কিত। দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে এলাকায় একটি লুটপাঠের সিন্ডিকেট তৈরী করে অনিয়মগুলোকে নিয়মে পরিণত করার অপ্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু বলেন, শিক্ষার্থীরা এমপি মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে আন্দলনে নেমেছে খবর পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। আমার বিশ^াস থানা পুলিশ মামলার বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। পুলিশ প্রশাসন তাদের হয়রানী করবে না।
ওসমানীনগর থানার অফিসর ইনচার্জ এস এম মাইন উদ্দিন বলেন, মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে একজন এসএসসি পরিক্ষার্থী। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সে তার পরিক্ষা দিতে পারবে। ঘটনার বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের কথায় আন্দোলন স্থগিত করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।