বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরী

6

করোনাকালে বিশ্বমন্দার আশঙ্কাকে মাথায় নিয়েই সকল রাষ্ট্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। গত বছর আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বর্তমান সরকার করোনা মহামারীর প্রাণঘাতী সঙ্কট মোকাবেলার পাশাপাশি প্রায় স্থবির হয়ে যাওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগসহ কর্মসংস্থানের ওপর। বাংলাদেশ সাম্প্রতিককালে বিনিয়োগবান্ধব হয়ে উঠেছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায়। কেননা, এখানে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। সুলভে শ্রমও সহজলভ্য। এ ছাড়াও রয়েছে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ, কর অবকাশ সুবিধা এবং কাঁচামাল-কাঁচা চামড়া, পাট, কৃষিপণ্য ইত্যাদি। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি সরকার ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ১০০টির মধ্যে কয়েকটি ছাড়া সব অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের প্রস্তুতি নিয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রয়োজনে সাত দিনে গ্যাস-বিদ্যুত-পানিসহ অবকাঠামোগত সুবিধা সহজলভ্য করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সৌদি আরব, জাপানসহ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। এ সবই অর্থনৈতিক গতিশীলতার সম্ভাবনা জাগায়।
২০২৪ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নের মহাসড়কে পা রেখেছে। একই সঙ্গে বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে অঙ্গীকারও করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের বছর ২০২১ সাল এবং এর দু’দশক বাদে আসবে ২০৪১ সাল-এ দুটি তাৎপর্যপূর্ণ কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মেরিটাইম কর্মকা- থেকে বাংলাদেশ বিরাট সুবিধা পেতে পারে। দেশের প্রায় ৮২% আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে সমুদ্র পথে। বিনিয়োগে আগ্রহী বিদেশীরা সঙ্গত কারণে শুরুতেই জানতে চাইবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নিরাপদে তাদের পণ্য পরিবহনে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন। সুগম যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নির্বিঘ্ন বাণিজ্য সুযোগই বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে আগ্রহী করবে। গত অর্থবছরে ৩৫০ কোটি ১০ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে বাংলাদেশে। এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। নিট এফডিআই বেড়েছে আরও বেশি, প্রায় ৪০ শতাংশ। এই সময়ে বিনিয়োগ এসেছে বিদ্যুত, ব্যাংক, টেলিকমিউনিকেশন খাতে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। এরপরে রয়েছে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, চীন, মিসর ও যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও হংকং থেকে উল্লেখযোগ্য বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।
আগামী দিনগুলোয় দেশের অর্থনীতিকে প্রত্যাশিত গতিশীলতা দান করতে হলে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরী। একই সঙ্গে রফতানি আয়ও বৃদ্ধি করা চাই।