সৌদিতে রাতে কার্ফু, নিউজিল্যান্ড আজ থেকে লকডাউন ॥ স্পেনে একদিনে ৪৩৪ জনের মৃত্যু, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেনা সহায়তা চেয়েছে ইতালি

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা সংক্রমণ সামাল দিতে সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ তিন সপ্তাহের জন্য রাত্রিকালীন কার্ফু ঘোষণা করেছে। এছাড়া কুয়েত ও বাহরাইনও কার্ফু ঘোষণা করেছে। ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ইংল্যান্ডের ১৫ লাখ মানুষকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে তারা যেন বাড়িতে থাকেন। চীনের হুবেই প্রদেশে পঞ্চম দিনের মতো নতুন আক্রান্ত কোন রোগী নেই। ইতালির পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারের কাছে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনা সহায়তা চেয়ে সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন। বুরকিনা ফাসোর চার মন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত।
করোনা রোধে সৌদি আরবজুড়ে কার্ফু জারি করেছেন বাদশাহ সালমান। সোমবার সন্ধ্যা থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে সৌদির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ। সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশের বাইরের সব যাত্রীবাহী ফ্লাইটের ট্রানজিট বাতিল করেছে। সব শপিং কমপ্লেক্স বন্ধ এরইমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেস্তরাঁ থেকে শুধু হোম ডেলিভারি করা হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডে লকডাউন : অতি প্রয়োজনীয় নয় এমন পরিষেবাগুলো তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এর আওতায় দেশটির পানশালা, রেস্তরাঁ, ক্যাফেসহ স্বল্প প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- বন্ধ করা হবে। স্কুলগুলো পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। গণপরিবহন শুধুমাত্র তাদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে যারা সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছেন। দেশের সব মানুষকে বাড়ির ভেতরে থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমপক্ষে চার সপ্তাহের জন্যে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার কথা জানানো হয়েছে।
লকডাউন না মানলে কঠোর ব্যবস্থা : ভারতে বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতি যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্পষ্ট করে জানিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যগুলোকে নোটিস দিয়ে বলা হয়েছে, সরকারী নির্দেশের লঙ্ঘন চোখে পড়লে ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, ২০০ রুপী জরিমানাসহ ১ মাসের জেল হতে পারে নিয়ম লঙ্ঘনকারীর। আর তারজন্য অন্য কারও জীবন ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সেক্ষেত্রে জেল হতে পারে ছ’মাস পর্যন্ত। দিতে হতে পারে ১০০০ রুপী জরিমানাও। গত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণ বেড়ে ৪০০ জনেরও বেশি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জন হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে সিঙ্গাপুর : এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতো যারা সংক্রমণের প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করতে সক্ষম হয়েছে তারমধ্যে সিঙ্গাপুর অন্যতম। তবে দেশটি এখন সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায় অতিক্রম করছে। কেননা বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন দেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যেতে শুরু করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে বিদেশ থেকে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যা সংক্রমণের সংখ্যা ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয় সংক্রমণের সংখ্যা ৫০৯ জন হয়েছে।
ব্রিটেনে ১৫ লাখ চিঠি : ঝুঁকি থেকে বাঁচতে ইংল্যান্ডের ১৫ লাখ মানুষকে চিঠি পাঠিয়ে বলা হয়েছে তারা যেন বাড়িতে থাকেন। যে চিঠি পাঠানো হয়েছে বা মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হয়েছে সেখানে তাদের দৃঢ়ভাবে ১২ সপ্তাহের জন্য বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৬৮৩ জনে পৌঁছেছে।
স্পেনে একদিনে রেকর্ড মৃত্যু : জাতীয় পর্যায়ে রেকর্ড মৃত্যু ৪৩৪ জন হয়েছে। যা দেশটিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ দিক। এতে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,২০৬ জনে। সরকার জরুরী অবস্থা ১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১৪ মার্চ থেকে স্পেনের মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছিল। দেশটির সরকার ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী ৩০ দিনের জন্য বিমান ও সমুদ্র বন্দরে বেশিরভাগ বিদেশী নাগরিকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করবে।
ফ্রান্সে নতুন মৃত্যু : নতুন করে ৬৭১ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৪ জনে। নেদারল্যান্ডস ও গ্রীসে মৃতের সংখ্যা ও নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আফ্রিকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
বাড়ি ফিরেছেন লাখেরও বেশি : প্রাণঘাতী করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার ৩৬১ জনে দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে শুধু ইতালিতেই মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৪৭৬ জন। সোমবার বিশ্বের ১৯২ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৬০০ জন।
৫ম দিনও করোনামুক্ত হুবেই : চীনের হুবেই প্রদেশে পঞ্চম দিনের মতো নতুন আক্রান্ত কোন রোগী নেই। অথচ হুবেই ও এই প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর উহান ছিল আক্রান্ত এবং মৃত্যুর শীর্ষে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চীনের এই অভূতপূর্ব সাফল্য সারা বিশ্বের জন্য এখন দৃষ্টান্ত। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্যমতে, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় চীনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। নতুন আক্রান্ত ৩৯ জন। তবে হুবেইতে কোন নতুন আক্রান্ত বা মৃত্যু নেই। নতুন আক্রান্তদের সবাই চীনের বাইরের ব্যক্তি। চীনে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৯৩ জন। মোট মৃত্যু ৩২৭০ জন। এর মধ্যে শুধু হুবেই প্রদেশে মৃত্যু ৩১৫১ জন। আর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৭২ হাজার ৭০৩ জন।
সেনাসহায়তা চাইল ইতালি : করোনাভাইরাসে নাস্তানাবুদ ইতালি। প্রতিদিনই মৃত্যুর সংখ্যার নতুন রেকর্ড করেই যাচ্ছে দেশটি। এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রাণ গেছে ৫ হাজার ৪৭৬ জনের। কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে তার কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ইউরোপের দেশটি। এ কারণেই দেশটির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারের কাছে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনা সহায়তা চেয়ে সরাসরি আবেদন জানিয়েছেন। ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসপারের কাছে জরুরী মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট (মাস্ক এবং ভেন্টিলেটর) চেয়েছেন। একইসঙ্গে সেখানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সেনা সদস্যদের চিকিৎসা কর্মী এবং অস্থায়ী হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই সেনা সদস্যরা বর্তমানে ইতালির যেসব সেনা সদস্য সঙ্কট মোকাবেলায় কাজ করছেন তাদের সহযোগিতা করবেন। করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে ইতালিতে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে সেটি সামলাতে ইতোমধ্যে দেশটির পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫২ জনের মৃত্যু : যখনই রোগটির বিস্তার শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের দম্ভ চুরমার হয়ে গেল বালির প্রাচীরের মতো। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫৮জনের মৃত্যু হলো। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৫ জন। অপরদিকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা মাত্র ১৭৮। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
আক্রান্ত বুরকিনা ফাসোর ৪ মন্ত্রী : আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর মন্ত্রিসভার চার সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ জনে। গত ১১ মার্চ দেশটির মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তাতে সব মন্ত্রী ছিলেন কিনা তা এখনও জানা যায়নি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যারা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র, খনিজ, শিক্ষা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হন।