গভীর ষড়যন্ত্র

12

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের তান্ডবের ভেতরেও অর্থনৈতিক বিচারে বাংলাদেশের উন্নতি থেমে নেই। তৈরি পোশাক এবং ওষুধ- প্রধানত এ দুটি পণ্যের বিপুল রফতানি প্রতিযোগী দেশগুলোকেও বিস্মিত করছে। এছাড়াও কৃষিজাতপণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বর্তমান জনকল্যাণমুখী সরকারের দূরদর্শিতায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম বাড়ছে। বিষয়টি বাংলাদেশবিরোধী গুটিকতক দেশের জন্য অস্বস্তিকরই বটে। তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিছুকাল আগে তথ্যমন্ত্রী বিষয়টির দিকে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, ‘বিদেশী মিডিয়া কখনও কখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে’। তবে শুধু টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মতো গণমাধ্যমই নয়, শিল্প-সংস্কৃতি মাধ্যমেও সুকৌশলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার যে চালানো হচ্ছে তার সর্বসাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হলো নেটফ্লিক্সে প্রদর্শিত বিদেশী সিনেমায় বাংলাদেশবিরোধী সংলাপ। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কয়েকদিন আগে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ভ্যান ড্যাম অভিনীত ছবি ‘দ্য লাস্ট মার্সেনারি’। চলচ্চিত্রটি এখন এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তার তালিকার সেরা দশে অবস্থান করছে। এতে বাংলাদেশী পণ্য নিয়ে ‘আপত্তিকর’ সংলাপ শোনা গেছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে বাংলাদেশীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই ক্ষুব্ধ মন্তব্য করেছেন, ডেভিড চারহন পরিচালিত ফ্রেঞ্চ ভাষার এ ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যকে নিম্নমানের বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
একটু পরিষ্কার করেই বলা যাক। ছবিটি ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিটের। শুরু হওয়া দৃশ্যে দেখা যায়, একজন অভিনয়শিল্পী বলছেন, ‘হ্যাঁ, এটা বুলেট প্রুফ’। প্রত্যুত্তরে আরেকজন বলেন, ‘এটা মেড ইন ফ্রান্স। তবে যদি এটি বাংলাদেশ থেকে আসে তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাব (নিম্নমানের)।’ বাংলাদেশ বুলেটপ্রুফ কোনকিছু উৎপাদন করে না। তাই রফতানির প্রশ্নটিও অবান্তর। চলচ্চিত্রে এমন একটি সংলাপ সুকৌশলে উচ্চারণের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বেই বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ে অত্যন্ত নেতিবাচক ধারণা দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
সিনেমায় এমন সংলাপ ব্যবহারকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন অনেকেই। এদেরই একজন অভিমত প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমরা বুলেট প্রুফ কিছু তৈরি করি না। তারপরেও এর সঙ্গে বাংলাদেশের নামজুড়ে নিম্নমানের প্রমাণ করাটা সত্যিকার অর্থে একটা গভীর চক্রান্ত। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক, চামড়া, ওষুধ এবং অন্যান্য রফতানিযোগ্য পণ্য ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশে এসব করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ উন্নতমানের পোশাক রফতানি করে বলেই বিশ্বের বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো আমাদের পোশাক নিয়মিতভাবে ক্রয় করে থাকে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অচিরেই নেটফ্লিক্স এবং ওই চলচ্চিত্র নির্মাণ কর্তৃপক্ষের কাছে কড়া প্রতিবাদ দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশবিরোধী সংলাপ ছবিটি থেকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের ক্ষমা প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে হবে।