জয় দিয়ে টি-২০ সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

7

স্পোর্টস ডেস্ক :
মাত্র ৪ বার টি২০ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ দল। চার টি২০ বিশ^কাপে হওয়া ম্যাচগুলোয় সহজেই জিতেছে অসিরা। তবে তাদের প্রথমবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পেয়েই জয় দিয়ে শুরু করেছে টাইগাররা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুর্বিনীত অস্ট্রেলিয়াকে ২৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। ফলে ৫ ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে টাইগাররা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র তৃতীয়বার বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে হারাল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৫ সালে কার্ডিফে ওয়ানডেতে এবং ২০১৭ সালে মিরপুরে টেস্টে জয় এসেছিল। এবার সফরে আসার আগে জৈব সুরক্ষা বলয়, করোনা প্রটোকল নিয়ে নানাবিধ কঠিন শর্ত এবং অদ্ভুত কিছু দাবি জানায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সবকিছু মেনে নিলেও দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে এর তীব্র সমালোচনা হয় এবং কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীরা মনেপ্রাণেই চেয়েছে অসিদের বিপক্ষে টাইগারদের বিজয়। সেটি অসম্ভব মনে হয়েছিল আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে মাত্র ১৩১ রান তোলার কারণে। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে শেষ পর্যন্ত অসিদের ২০ ওভারে ১০৮ রানেই গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচ একই ভেন্যুতে, একই সময় সন্ধ্যা ৬টায়।
পেস বোলিংয়ে ভয়টা ছিল গতিধর মিচেল স্টার্ককে নিয়ে। আর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের চিরাচরিত ধীর উইকেটে আবার এডাম জাম্পার লেগস্পিন নিয়েও ছিল শঙ্কা। মঙ্গলবার সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে অবশ্য শুরুতে বাঁহাতি স্টার্ক তেমন কিছুই করতে পারেননি, কিন্তু দুই ডানহাতি পেসার জশ হ্যাজলউড ও এ্যান্ড্রু টাই নাজেহাল করেছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। টি২০ ক্রিকেটে নিয়মিত না হলেও হ্যাজলউড সবচেয়ে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে তুলে নেন ৩ উইকেট। শুধু ইতিবাচক ব্যাটিং করেছেন ওপেনার নাইম শেখ ও সাকিব আল হাসান। স্টার্ককে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ২৯ বলে ৩০ রান করেন নাইম এবং সাকিব করেন ৩৩ বলে ৩৬। বাংলাদেশের ইনিংসে বলার মতো রান এসেছে তাদের ব্যাট থেকেই। বাকিরা সুবিধা করতে পারেননি অসি পেসত্রয়ীর গতি-বাউন্সে ও বাঁহাতি স্পিনার এ্যাশটন এ্যাগারের মিতব্যয়ী বোলিংয়ে। তাই নির্ধারিত ২০ ওভারে বড় কোন সংগ্রহ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ১৩১ রান করে বাংলাদেশ। মিরপুরে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বনিম্ন সংগ্রহ।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। অসিরা ৩ পেসার ও ২ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায়। আর বাংলাদেশ দল একাদশে ২ পেসার ও ৩ স্পিনার নেয় (সাকিব, মাহেদি, নাসুম)। শুরুটা বেশ ভালই করেছিলেন নাইম, ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই স্টার্ককে ছক্কা হাঁকিয়ে ভীতি কাটিয়েছেন। কিন্তু এরপরও পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ৩৩ রান করে বাংলাদেশ ১ উইকেটে। সৌম্য সরকারকে (২) বোল্ড করেছেন হ্যাজলউড ইনিংসের চতুর্থ ওভারে। পঞ্চম ওভারে স্টার্কের করা দ্বিতীয় বল মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়েছেন নাইম- সিরিজের নিয়ম অনুসারে সেই বলটি আর ব্যবহারযোগ্য থাকেনি। অন্য বল আনতে হয়েছে। কিন্তু হ্যাজলউড-টাইয়ের পেস ও বাউন্সে বাকি ব্যাটসম্যানরা দ্রুত রান তুলতে পারেননি। শুধু নাইম ২৯ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৩০ এবং সাকিব আল হাসান ৩৩ বলে ৩ চারে ৩৬ রানের দুটি ভাল ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০ বলে ১ ছক্কায় ২০ রান করেন। কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি এবং বড় জুটিও হয়নি। সৌম্যকে বোল্ড করা হ্যাজলউড সাকিবকেও বোল্ড করেন এবং মাহমুদুল্লাহও তার শিকার হয়েছেন। আর এতেই বড় সংগ্রহ গড়া সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের জন্য। শেষদিকে আফিফ হোসেন ধ্রুব ১৭ বলে ৩ চারে ২৩ রান করে দলের রানকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন।
সবমিলিয়ে ৪৭টি ডট বল করেছেন অসি বোলাররা। মাত্র ৮টি চার ও ৩টি ছক্কা হাঁকাতে পেরেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আর এ কারণেই রান বেশি আসেনি। হ্যাজলউড ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রানে ৩ উইকেট নেন। তিনি ১১টি ডট বল করেন। শুরুতে স্টার্ক সুবিধা করতে না পারলেও পরে দারুণ বোলিং করেছেন। তিনি ৪ ওভারে অবশ্য সবচেয়ে খরুচে বোলিং করে ৩৩ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। যদিও সবচেয়ে বেশি ১৩টি ডট বল তিনিই করেছেন। আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে ভুগিয়েছেন এ্যাগার ও টাই। বাঁহাতি স্পিনার এ্যাগার ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। আর পেসার টাই ৪ ওভারে ২২ রানে নেন ১ উইকেট। জাম্পাকে নিয়ে ভয় থাকলেও ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নাইমকে বোল্ড করেছেন শুধু। এরপর বাংলাদেশী স্পিনারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে লড়াইটা করেছেন মিচেল মার্শ একাই। নাসুমের বাঁহাতি স্পিনে ধসে পড়ে অসি ব্যাটিং লাইনআপ। ওয়ানডাউনে নেমে মার্শ ৪৫ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৪৫ রান করে নাসুমকে তুলে মারতে গিয়ে শরীফুল ইসলামের দারুণ ক্যাচে সাজঘরে ফিরে যান। এরপর আর তারা জিততে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০৮ রানেই গুটিয়ে গেছে অসিরা। নাসুম ১৯ রানে নেন ৪ উইকেট।