করোনা স্পট হয়ে উঠেছে ওসমানীনগর, ৪৮ ঘন্টায় আক্রান্ত ৬

41

শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
করোনা স্পট হয়ে পড়েছে ওসমানীনগর উপজেলা। সচেতনতার অভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুই দিনে ওসমানীনগর উপজেলায় ৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও থেমে নেই মানুষের জীবন যাত্রা ঈদকে সামনে রেখে বাজারে এলাকাতে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়।
বুধবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুই দিনে ওসমানীনগরে ৬ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে ওসমানীনগর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৯ জনে। গত দুই দিনে উপজেলা প্রশাসন করোনা আক্রান্ত ৬ জনের বাড়ি ও বাসা লকডাউন ঘোষণা করেন। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা সহ এক দিনে সর্বোচ্চ ৩০ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার তাজপুর কদমতলায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর (সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে নমুনা প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।
ওসমানীনগর উপজেলার করোনা সংক্রান্ত মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. সাকিব আব্দুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন ওসমানীনগর সার্কেল অফিসের কয়েকজন পুলিশ, দুজন সাংবাদিক, ১ জন সরকার দলীয় নেতা সহ ২৮ জন নমুনা প্রদান করেন। ওসমানীনগরের ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নমুনা দায়িত্বরত মেডিকেল টিম ইউএনও অফিসে গিয়ে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে বলে জানান তিনি।
জানা যায়, অবাদে চলাফেরা, সচেতনতা এবং প্রশাসনের নজরধারী না থাকায় করোনা স্পট হয়ে পড়েছে ওসমানীনগর উপজেলা। ওসমানীনগর উপজেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৩০ এপ্রিল উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের রাইকদাড়া (নোয়াগাঁও) গ্রামের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। গত ২৬ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ওই ব্যক্তি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা সন্দেহজনক মনে করে এই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে প্রেরণ করেন। এরই মধ্যে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপর ওসমানীনগরের ওই ব্যক্তির করোনা রিপোর্ট পজিটিভ জানিয়ে রিপোর্ট আসে। এর পর গত ৫ মে ওসমানীনগরে ২য় করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকা ফেরত ২৪ বছর বয়সী তরুণ উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউপির পূর্ব ব্রাহ্মণ গ্রামে বাসিন্দা। এর পর ১০ দিন কোন করোনা রোগী শনাক্ত না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও ১৫ মে করোনা আক্রান্ত হন বালাগঞ্জ ওসমানীনগর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের এক লাইন টেকনেশিয়ান। তিনি তাজপুর মশ্রব আলী বাসায় ভাড়া থাকতেন। ওই বাসাও ১৬ মে লকডাইন ঘোষণা করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে পরবর্তীতে ১৮ মে শহীদ শামসুদ্দীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে, পল্লী বিদ্যুতের টেকনেশিয়ানের সংস্পর্শে আসা তার (১১) বছরের তার পুত্র এবং আরেক লাইন টেকনেশিয়ান (২২) করোনা আক্রান হয়েছেন। ২১ মে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে জানানো হয় সংস্পর্শে আসা পল্লী বিদ্যুতের লাইন টেকনেশিয়ানের পুত্র এবং আরো একজন লাইন টেকনেশিয়ান করোনা আক্রান্ত। সংস্পর্শে আসা লাইন টেকনেশিয়ান খাশিপন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। তার বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায়। একই দিন তাজপুর কলেজ গেইটের পূর্ব দিকের দুলিয়ারবন্দে গাজীপুর ফেরত করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রিকশা চালক মো. হাবিব মিয়া (৫০) এর করোনা পজেটিভ বলে জানান ওসমানীনগর উপজেলা করোনা সংক্রান্ত মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. সাকিব উল্লাহ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাতে বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের নার্সের পিতা (৫৫) করোনা আক্রান্ত হন। তিনি উপজেলার সাদিপুর এলাকার বাসিন্ধা। তিনি দীর্ঘ দিন থকে সুনামগঞ্জ জেলার রাণীগঞ্জে বসবাস করে আসছেন বলে জানা গেছে। ২২ মে শুক্রবার রাতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে এই দুইজন রিপোর্ট পজেটিভ। তারা হলেন ওসমানীনগরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসের (৪০) বছর বয়সী একজন ইন্সপেক্টর ও ইউএনও অফিসের (২৬) বছর বয়সী একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। ওসমানীনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের অফিসের ইন্সপেক্টর পরিবার নিয়ে সিলেট শহরে বসবাস করেন এবং প্রতিদিন ওসমানীনগর থানায় সার্কল অফিসের এসে দায়িত্ব পালন করেন। ইউএনও অফিসের পরিচ্ছনতা কর্মী উপজেলার ভার্ড হাসপাতালের পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। এ নিয়ে ওসমানীনগরে করোনা আক্রান্তের সংখ্য বেড়ে দাঁড়ালো ৯ জনে।