বিশ্ববাসী মানব ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর ও বিস্তৃত মহামারীকালের ভেতর নিমজ্জিত হলেও মানব সম্প্রদায় যে কিছুতেই পরাভব মানে না, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন। বরাবরের মতো এবারও অলিম্পিকে ছয় প্রতিযোগী নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে লাল-সবুজের দেশ বাংলাদেশ। অলিম্পিকের ইতিহাসে এটি ৩২তম আসর হলেও বাংলাদেশের জন্য দশম। ১৯৮৪ সালে লস এ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক দিয়ে স্বপ্নের ক্রীড়াযজ্ঞে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ শুরু হয়। উল্লেখ্য, খেলায় জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই গুরুত্বপূর্ণ।
অলিম্পিকের বিশ্বাস এবং মূলমন্ত্র হলো- ক্ষিপ্রতা, উচ্চতা এবং শক্তি। অলিম্পিকের প্রতীক যা বাংলায় অলিম্পিক বলয় বা অলিম্পিক নিশান হিসেবে পরিচিত, মূলত পাঁচটি বলয় একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। পতাকার এই পাঁচটি বলয় আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়া, ওশেনিয়া এবং ইউরোপ মহাদেশকে নির্দেশ করে। পাঁচটি বলয়ের পাঁচটি রং নীল, হলুদ, কালো, সবুজ ও লাল চয়ন করার মূল কারণ হলো এই পাঁচটি রঙের অন্তত যে কোন একটি বা একাধিক রং প্রত্যেক দেশের পতাকায় ব্যবহৃত হয়েছে। পতাকাটি ১৯১৪ সালে সর্বপ্রথম গৃহীত হয়। তবে বেলজিয়ামের এ্যান্টওয়ার্পে ১৯২০ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ওড়ানো হয়। আধুনিক অলিম্পিক গেমস বলতে ১৭শ’ শতাব্দীর দিকে শুরু হওয়া ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকেই বোঝানো হয়ে থাকে।
বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমস। এই আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও যে কোন ক্রীড়া আসরের চেয়ে মনোমুগ্ধকর, নয়নাভিরাম, জমকালো, বর্ণিল হয়ে থাকে। যে কারণে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দৃষ্টি থাকে গোটা দুনিয়ার। এবারের ৩২তম টোকিও অলিম্পিকও এর ব্যতিক্রম নয়। সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে বসেছে এই আনন্দ আসর। যদিও স্বাগতিক জাপান বর্ণিল আলোকসজ্জা,আতশবাজি, নিজেদের নানা সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলাসহ সব আয়োজন করার পরও মনের মতো করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে পারেনি।
এটা খুবই সঙ্গত যে, করোনার কারণে কঠোর নিয়ম ও স্বাস্থ্যবিধি তৈরি করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি দেশের এ্যাথলেটরাই মার্চপাস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এটি। আয়োজক কর্মকর্তা-কর্মচারী, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কলা-কুশলীসহ আরও কয়েক হাজার মানুষ জড়িত ছিলেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে। ঐতিহ্যগতভাব অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বর্ণিল ও জমজমাট। কিন্তু এবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য অনেক গাইডলাইন তৈরি করে আয়োজকরা। অলিম্পিক প্যারেডের সময় এ্যাথলেটদের উপস্থিতি করা হয়েছে ঐচ্ছিক। কর্মকর্তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬ জন উপস্থিত থাকতে পেরেছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বও হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।
গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বা বিশ্বের সেরা প্রদর্শনীর এই অলিম্পিক চলমান দুঃসময়ে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখবে আগামী কয়েকটি সপ্তাহ। এর ভেতর দিয়ে সৌহার্দ্য সম্প্রীতিরও নবায়ন ঘটবে।