আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আযহা। এই পবিত্র দিনটিতে মুসলমানরা ঈদগাহে গিয়ে একসঙ্গে নামাজ শেষ করে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেন। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব বয়সী মুসলমান ভাবগম্ভীর পরিবেশে নামাজ আদায় এবং পরস্পর কুশলাদি বিনিময়ের পাশাপাশি কোলাকুলি করেন। ঈদগাহে সমবেত সব মুসল্লি আল্লাহপাকের দরবারে মোনাজাত করেন পার্থিব এবং পারলৌকিক কল্যাণের আশায়। মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দুই ঈদই অশেষ সংহতি ও সম্প্রীতি বয়ে আনে। কোরবানির মাংসের একটি অংশ দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়। এতে ঈদের আনন্দ ভিন্নতর মাত্রা পায়। হযরত ইব্রাহিম (আ.) যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন, সেটাকেই মর্যাদা দিয়ে বিশ্বের মুসলমানরা ঈদুল আযহা পালন করে আসছেন। মূলত কোরবানির মধ্য দিয়ে আত্মোৎসর্গের এক পরম মহিমার নজির স্থাপন করে গেছেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)। শরিয়তের বিধান অনুসারে কোরবানির পশুর মাংস তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের এবং এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিলি করার নির্দেশ রয়েছে। ইসলাম ধর্ম সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং পরোপকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এ ছাড়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতাকে। পরিতাপের বিষয়, ইসলামের সঠিক বিধিবিধান অনেকেই গুরুত্ব না দিয়ে অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন।
আত্মত্যাগের দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র দিন। হিংসা, দ্বেষ, হানাহানি, কুমন্ত্রণা ভুলে পূত পবিত্র মন নিয়ে পারস্পরিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার দিন ঈদ-উল-আজহা। ধনী, দরিদ্র সব ভেদাভেদ ভুলে নিজেকে সমর্পণ করার দিন আজ। কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ যথাযথভাবে করাই সঙ্গত। এতে দুস্থ ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। মশক নিবারণসহ সতর্ক থাকতে হবে করোনা এবং ডেঙ্গু রোগের ব্যাপারেও। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সকলে মিলে মোকাবেলা করলে কোন সমস্যাই সমাধানের উর্ধে নয়।
আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পশু প্রবৃত্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা জাতীয় নেতিবাচক প্রবৃত্তিকে সরিয়ে ফেলে সহজ-সরল মানবিক গুণাবলী অর্জন করাই হচ্ছে ঈদুল আযহার তাৎপর্য। পবিত্র ঈদুল আযহায় আমাদের প্রার্থনা- আল্লাহপাক যেন বিশ্ব মুসলিমের জাতীয় জীবনকে মর্যাদাশীল করেন। সবার জীবন হোক আনন্দময়। ঈদ মোবারক।
এবারের ঈদুল আযহাও আগের মতো জাঁকজমকের সঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হতে পারছে না। হতে পারছে না প্রধানত করোনা মহামারীর কারণে। যেমন, সামাজিক দূরত্ব রক্ষাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকায় জাতীয় ঈদগাহসহ উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে মসজিদেও। পশু কোরবানিও হয়ত কিছু কম হবে। তবু ঈদ উৎসব ও আনন্দ বলে কথা। আমরা সবাই যদি পারস্পরিক মানবিক সহমর্মিতায় তা ভাগাভাগি করে নেই, তাহলে জয় হবে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির। বিশ্বের সব ধর্মের মূল মর্মবাণীও তো তাই-ই।