সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেট মহানগরীর মালনীছড়ার উপরে ব্রিজের অভাবে সিসিকের দু’ওয়ার্ডের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এই সংযোগ স্থানে ব্রিজের বদলে বর্তমানে সাঁকো দিয়ে মানুষজন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হচ্ছেন দুঘর্টনার শিকার।
যুগের পর যুগ এভাবে চলে যাচ্ছে। তবুও হয় না ব্রিজটি। আর স্থানীয় কাউন্সিলরসহ ও সংশ্লিষ্টরা এই ব্রিজটি তৈরীর ক্ষেত্রেও দেখাচ্ছেন উদাসিনতা। সিসিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও দেখে না দেখার বান করে যাচ্ছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডের সংযোগ স্থাপনকারী মালনীছড়া অবস্থিত। এই ছড়ায় বাঁশের সাঁকো থাকায় উভয়পারের মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। এটা যেন ওই দু’ওয়ার্ডের মানুষ জনের ভাগ্যলিপি। যুগ যুগ ধরে মহানগরীর মধ্যস্থানে ছড়াটি থাকার পরও ব্রিজটি তৈরী হয়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্বাচন এলে এই ব্রিজ তৈরীর ক্ষেত্রে প্রার্থীরা নানা আশ্বাস ও ভরসা দিয়ে থাকেন। নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে বিজয়ী কাউন্সিলর ও মেয়র ভোটারদের কষ্ট ভুলে যান। ডিজিটাল আমলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে ছড়া উপর দিয়ে ব্রিজের বদলে সাঁকো দিয়ে চলাচল ব্যবস্থা অনেককে শুনলে ও দেখলে হতভাগ করে দেয়। সারাদেশসহ সিসিকের অন্যান্য স্থানে উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও অত্র এলাকার ব্রিজটি না থাকায় মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এই ব্রিজটি তৈরী হলে নগরীর যানজট অনেকটাই কমে আসবে।
সূত্র জানায়, বাগবাড়ী, নরসিংটিলা, সাগরদীঘিরপার, আখালিয়াঘাট, নেহারীপাড়া, এতিম স্কুলরোড, আখালিয়া নগর, খুলিয়াপাড়া, ধানুহাটারপার ও আখালিয়াবাজার এলাকা নিয়ে ৯নং ওয়ার্ড আর ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, মজুমদার পাড়া, মোল্লাপাড়া, নবাবরোড ও ওয়াপদা এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড গঠিত। এই ব্রীজটি হলে এসব এলাকার লোকজনের দীর্ঘদিনের চলাচলের পথ সুগমন হবে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিজের অভাবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ওসমানী হাসপাতালে যেতে উভয়পাড়ের বাসিন্দাদের এক কিলোমিটারের স্থলে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। তৎকালীন সময়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছড়া পরিদর্শন শেষে একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ছড়ার দুই পাড়ের বাসিন্দারা মনে করছেন, ব্রিজটি হলে দুইপারের মানুষের সেতুবন্ধনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। ছড়ার নাম মালনিছড়া। এটি মিশেছে সুরমা নদীর সাথে। নদীর কয়েক গজ পেছনে সেই ছড়ার শেষ অংশের একপাশে তপোবন, আখালিয়া এবং অন্যপাশে কানিশাইল এলাকা। সিটি কর্পোরেশনের ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এলাকা দুটি। কানিশাইল এলাকার একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কানিশাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৪৩ সালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন হয়। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। তার মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থী ছড়ার ওপাশের আখালিয়া, তপোবন, শেখঘাট, আখালিয়াঘাট, খুলিয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা। সেই শিশু শিক্ষার্থীরা ব্রিজ না থাকায় বিদ্যালয়ে আসতে হলে ছড়ার উপর বাঁশের সাঁকো মাড়িয়ে আসতে হয়। অনেক সময় সাঁকো ভেঙে গেলে বাঁশ ফেলে তার উপর দিয়ে আসতে হয়। বর্ষার সময় দুর্ভোগ এবং ঝুঁকি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
১০ নং ওয়ার্ডের কানিশাইলের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান শাহেদ বলেন, এখানে একটা ব্রিজ হলে আমাদের কষ্টটা দুর হবে। সরকারের সুনাম ও ইমেজ অনেকগুন বৃদ্ধি পাবে।
কানিশাইলের আরেক বাসিন্দা গুমায়ুন কবির বলেন, এ ব্রীজ হলে উভয় পাড়ের শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষের শিক্ষার প্রসার আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
৯নং ওয়ার্ডের আখালিয়াঘাটের মুরব্বী কামাল আহমদ ও ইকবাল আহমদ অনেকটা ক্ষোবের সাথে বলেন,দুই পাড়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে কষ্ট করছেন শুধু একটা ব্রিজের জন্য। এই মালনীছড়ায় সাঁকোর পরিবর্তে একটি ব্রিজ হলে অত্র এলাকায় নব যুগের সূচনা হবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়াড কাউন্সিলর মোঃ মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মালনীছড়া উপর দিয়ে ব্রীজ না হওয়ার জন্য তপোবন আবাসিক এলাকার লোকজন আন্দোলন করছেন আর অপরদিকে কানিশাইল এলাকার লোকজন ব্রীজটি হওয়ার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এই দু’এলাকার লোকজন যতক্ষণ এটার সুরাহা না হবে ততক্ষণ বিষয়টির সমাধান হবে না। আমি বিষয়টির চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, আমি নতুন কাউন্সিলর হয়েছি। আপনি মেয়রের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেন। তার পরেও ব্রিজটি হওয়ার জন্য আমি চেষ্ঠা করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে গতকাল রাতে সিলেট সিটি কপোরেশনের চীফ প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।