শিপন আহমদ ওসমানীনগর থেকে :
করোনা পজিটিভ ডাক্তার দিয়ে রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ালেন বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: এসএম শাহরিয়ার। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল পাড়ায় নানা সমালোচনা চলছে। শুক্রবার বিকাল ও রাতে ওই চিকিৎসক বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। শনিবার সকালেও তার জরুরী বিভাগে ডিউটি করার কথা ছিল। ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা: শাফায়েত হোসেনের বৃহস্পতিবার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান ডা: শাফায়াত বালাগঞ্জ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। রাত ৮টার দিকে সংবাদিকরা ফের হাসপাতালের জরুরী বিভাগে যান। তখন জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বলেন, টিএইচও স্যারের নির্দেশে ডা: শাফায়াত রাত ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করেছেন। পরে আমরা তাকে ডিউটি না করার জন্য বলেছি। রাত ৮টায় ডাঃ সাফায়াত জরুরী বিভাগেই ছিলেন। ডাঃ সাফায়াত সাংবাদিকদের বলেন, বৃহস্পতিবার আমার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৫টা পর্যন্ত আমি ডিউটি করেছি। পরে টিএইচ’ও স্যারকে বলেছি আমার শরীরটা ভাল নয় আমি রাতে ডিউটি করতে পারব না। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসার বিষয়টি কি টিএইচও জানতেন এ বিষয়ে ডা: শাফায়েত বলেন, স্যার জানতেন এবং স্যারের নির্দেশেই আমি ডিউটি করেছি। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জরুরী বিভাগে ডা: সাফায়াতের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা রোগীরা করোনা আক্রান্ত হতে পারেন বলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এসব রোগী ও তাদের স্বজনরা টিএইচও’র প্রতি ক্ষোভ ঝেড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মন্তব্য করছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার এসব পোস্ট ভাইরাল হলে শনিবার সকাল থেকে রোগীরা হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না। শুক্রবার রাতে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এসএম শাহরিয়ারের কাছে স্থানীয় এক সাংবাদিক এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা বন্ধ করার উপক্রম হওয়াতে ডা: সাফায়াতকে দিয়ে জরুরী বিভাগে ডিউটি করানো হয়েছে। শনিবার বিকালে এ বিষয়ে ডা: শারিয়ার জানান, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার সাফায়েত করোনা পজেটিভ হওয়ায় আইসোলেশনে রাখতে তাকে হাসপাতালে এনেছিলাম। জরুরী বিভাগে তিনি ডিউটি করেননি আমাদের নির্দেশ অমান্য করে অযথা ঘোরাঘুরি করেছেন।
এ বিষয়ে সিলেটের সিভিল ডাঃ প্রেমানন্দ মন্ডলের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা দায়হীন জবাব দিয়ে বলেন,ওই বিষয়টা আমি জানি আর এটা নিয়ে ভাবনার তেমন কিছু নেই। ডাঃ সাফায়েতের করুনা পজিটিভ রিপোর্টে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ফের টেষ্ট করিয়ে পজিটিভ আসলে তাকে ডিউটিতে না রেখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আর পজিটিভ আসুক আর যাই আসুক ওরা চিকিৎসা না দিলে হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সিলেট শহরে বসবাস করেন। শহর থেকে এসে হাসপাতালে ডিউটি করেন। অনেকে আবার নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না, ডিউটিও করেন না। এক্ষেত্রে তাদের দাবি হলো হাসপাতালে আবাসনের সুব্যবস্থা নেই সেজন্য তারা শহরে থাকেন। চিকিৎসকদের হাসপাতালে ডিউটি ফাঁকি দেয়ার কৌশল হিসেবে টিএইচও’র নির্দেশে বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলার বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক দিয়ে বালাগঞ্জ হাসপাতালে রাতে ও সকালে ডিউটি করানো হচ্ছে। জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে দির্ঘদিন ধরে এমনটি করা হচ্ছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা হাসপাতালে গিয়ে রাত থেকে পর দিন দুপুর পর্যন্ত ডিউটি করার কারণে তাজপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য এলাকার রোগীরা চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকরা বলছেন, চাপ প্রয়োগ করে তাদেরকে দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করানো হচ্ছে। ডিউটি না করলে টিএইচও তাদেরকে শোকজ এবং নানাভাবে হয়রানি করেন।