জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুরে হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে অবশেষে হাওরগুলো তলিয়ে গেল। যদিও সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ পুনরায় বাঁধ নির্মাণের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। অবশেষে তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্থানীয় দুই ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে হাওরগুলো তলিয়ে যাওয়ায় হাওরপারের কৃষক-কৃষাণীদের মধ্যে আহাজারি চলছে। নিজেদের চোখের সামনে জমির পাকা ধান তলিয়ে যাচ্ছে দেখে কৃষক-কৃষাণীসহ সর্বস্তরের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অকাল বন্যার কবলে পড়ে হাওরগুলো যাওয়ায় অনেক বর্গা চাষিরা পথে বসে গেছেন। অনেকে আবার অর্ধেক ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। বাকি পাকা ধান গভীর পানিতে তলিয়ে গেছে।
জানা গেছে, জগন্নাথপুরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফসল হয়েছিল। সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জমিতে অধিক ফলন হয়। জমিতে বাম্পার ফসল দেখে কৃষক-কৃষাণীর মুখে হাসি ফুটে উঠে। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের হাসি কান্নায় পরিণত হলো। গত ১৭ এপ্রিল থেকে জগন্নাথপুরে বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। মাত্র ৪ দিন ধান কাটার পর ২১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা কালবৈশাখি ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। যদিও শিলাবৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পায় এবং হাওরে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জমিতে হাঁটু ও কোমর পানি জমে যাওয়ায় ধান কাটা ব্যাহত হয়। জুকেঁর ভয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিকদের মধ্যে অনেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এ সময় শ্রমিক সংকটে পড়েন কৃষকরা। তখন কৃষকরা তাদের পরিবারের লোকদের নিয়ে ধান কাটা শুরু করেন। তবে অতিবৃষ্টির কারণে হাওরে কোন যানবাহন না যাওয়ায় জমিতে কাটা ধান জমিতেই থেকে যায়। মাঝে মধ্যে অনেকে কাঁধে ও মাথায় করে কিছু ধান শুকনো স্থানে নিয়ে আসলেও মাড়াই করা ধান রোদের অভাবে চারা গজিয়ে নষ্ট হতে থাকে। এতোসব ভোগান্তির মধ্যেও জমির ধান গোলায় তুলতে ব্যস্ত থাকেন কৃষক-কৃষাণীরা। কিন্তু বিধি বাম। প্রকৃতি যেন নিষ্ঠুর হয়ে গেছে। এবার কৃষকদের কাঁদাবেই। কোন ছাড় দিবে না। একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়। গত ২৬ এপ্রিল রবিবার ভোরে উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের মইয়ার হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধের বড় ডহর নামক স্থানে বাঁধ ভেঙে মইয়ার হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এ সময় মইয়ার হাওর তলিয়ে এ পানি গিয়ে উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়ার হাওরে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ, জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আরশ মিয়াসহ সংশ্লি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তা ব্যক্তিরা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং তাদের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন ওই দিন বেলা আড়াইটা থেকে গত ২৯ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত একটানা ৪ দিন বঁাঁধটি পুনরায় নির্মাণের জন্য কাজ করেন। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার তারা হাল ছেড়ে দেন বলে স্থানীয় চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি সদস্য আহমদ আলী জানান। বাঁধটি বাধা আর সম্ভব হয়নি। তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। পানির প্রচন্ড স্রোতের কাছে শ্রমিক সংকটের কারণে তারা হার মেনে অবশেষে নিরাশ হয়ে ফিরে এসেছেন। বর্তমানে এ ভাঙনটি আরো বড় হয়ে প্রচন্ড গতিতে হাওরে পানি ঢুকছে। ধীরে ধীরে মইয়ার হাওর তলিয়ে নলুয়ার হাওরও তলিয়ে গেছে। অপরদিকে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল মাহমুদ ও নুরুল মিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গতকাল বৃহস্পতিবার জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্থানীয় চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি সদস্য বাবুল মাহমুদ ও নুরুল মিয়াকে বরখাস্ত করা হবে। ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তাদেরকে বরখাস্তের জন্য কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আকমল হোসেন জানান, আমাদের জানামতে কারো কোন ক্ষতি হয়নি। এখনো হাওরে পানিতে নেমে ধান কাটছেন কৃষকরা। তবে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন তাহলে তাকে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করবো।