আঞ্চলিক সরকার প্রধানদের গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ॥ সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে কমনওয়েলথের অগ্রণী ভূমিকা চাই

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেকসই এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়তে কমনওয়েলথকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। পৃথিবীকে জলবায়ু ঝুঁকির হাত থেকে বাঁচাতে সম্মিলিত লড়াইয়েরও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য টেকসই এবং প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের জন্য কমনওয়েলথ গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।’
সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এশিয়ার আঞ্চলিক কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের গোলটেবিল সভায় (ভার্চুয়াল) প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বড় ছেলে ওয়েলস চার্লসের প্রিন্স ফিলিপ আর্থার জর্জ এ সভা আহ্বান করেন।
গোলটেবিল সভায় তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ সদস্য দেশ এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন। কার্যকর এবং দক্ষ উপায়ে আরও বেশি স্থিতিশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন গড়তে বিশ্বজুড়ে সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সার্কুলার অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিধানসহ কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অভিযোজনে সহায়তা করতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে জলবায়ু অর্থায়ন করতে বলেন।
গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তিবিদ্যার ওপর জোর দেয়া এবং জলবায়ু অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম পরামর্শে বিশ্বব্যাপী সবুজ ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিকাশের পক্ষে তাঁর মতামত তুলে ধরেন এবং সুদিনের প্রত্যাশায় বৃত্তাকার অর্থনীতিতে বিনিয়োগের কথা বলেন। দ্বিতীয় পরামর্শে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি বিশেষ মনযোগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমনওয়েলথ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞান এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিধানসহ কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তির ওপর জোর দেয়ার আহ্বান জানান। তৃতীয় পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে প্রশমন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে জলবায়ু তহবিল থেকে সহায়তা প্রদানের কথা বলেন।
গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদানের দিকে সবাইকে মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গৃহহীনদের আশ্রয় প্রদান দারিদ্র্য বিমোচন এবং সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জলবায়ু ক্ষতি হ্রাসের সর্বোত্তম কৌশল।’
জলবায়ুর ক্ষতি প্রশমন এবং অভিযোজনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রশংসিত হওয়ার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বে এ্যাডাপটেশন লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য নিজস্ব সম্পদ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে।
সভায় শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরাম- সিভিএফেরে চেয়ারম্যান এবং জিসিএ’র দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের হোস্ট হিসেবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা, স্থানীয়ভাবে অভিযোজন সমাধান এবং নদী ভাঙ্গনের শিকার লোকদের জন্য বাড়ি-ঘর তৈরিসহ তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি।
কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বৃক্ষ রোপণসহ জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি ইনিশিয়েটিভ’ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশ কম কার্বন নিঃসরণ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ গিগা ওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন এবং ৩০ মিলিয়ন বৃক্ষ রোপণ করতে যাচ্ছি।
করোনা মহামারীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গোটা বিশ্ব অভূতপূর্ব এবং অনিশ্চিত এক মহামারী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি একই। স্বাস্থ্য সঙ্কটের বাইরেও এই মহামারী আরও অনেক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। যার জন্য আমার সরকার জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মহান আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশ এই মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমিত করে আর্ত-সামাজিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।