মাহমুদুল আলম খান (বেনু)
অন্যের মতো আমি তাকে ষড়যন্ত্রকারী বলব না, যা আমি জানি না। এও বলব যে, তিনি নামকরা আইনবিদ এবং বাংলাদেশের সংবিধান তৈরিতে তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে. যা মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশের গণপরিষদ সম্পাদন করতে পেরেছে। তবে এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তিনি বিপ্লবীও নন, যোদ্ধাও নন। নিরেট সত্য হলো যে, তিনি ভীতু। শহীদ বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ আমাকে বলেছিলেন, তিনি ও কামাল হোসেন ২৫ মার্চ রাত ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধুকে অনেক বলার পরও যখন ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ি থেকে বের করতে পারলেন না (বরঞ্চ তিনি তাদের বলেছিলেন তোরা ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যা এবং নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়, সব ব্যবস্থা করা আছে), তখন তিনি, ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলামসহ তাজউদ্দীন আহমদের বাসায় গিয়ে চাচিকে বললেন, আমি চললাম, সন্তানদের নিয়ে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সঙ্গে মিশে যেও। পথিমধ্যে ড. কামাল হোসেন তার বাসায় গিয়ে কাপড় চোপড় আনার কথা বলে আর ফিরলেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ব্যারিষ্টার আমীর-উল ইসলামসহ কেরানীগঞ্জের আওয়ামী লিগ নেতা গগন ভাইয়ের বাড়ি হয়ে কুষ্টিয়া দিয়ে ভারতে গমন করেন তারা। পরবর্তীতে কামাল হোসেন পাকিস্তানে চলে যান, কারণ সিন্ধুতে তার শ্বশুরবাড়ি। সেখানে তিনি অন্তরীণ ছিলেন, না বহাল তবিয়তে ছিলেন, সেটা তিনিই ভাল জানেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ যখন চূড়ান্ত বিজয় লাভ করল এবং পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মিনওয়ালি জেল থেকে লয়ালপুরের রেষ্ট হাউসে স্থানান্তর করলেন, তখন জনাব ভুট্টো তার সঙ্গে দেখা করলেন এবং বঙ্গবন্ধুর খেদমত করতে চাইলেন। তখন বঙ্গবন্ধু বললেন ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আসতে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিতে ঝোলানোর মামলায় যখন সওয়াল জবাব চলছিল, বিশিষ্ট আইনজীবী মি. ব্রোহীর কাছে তিনি শুনেছিলেন, ড. কামাল হোসেন পশ্চিম পাকিস্তান আছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। তার পরের ইতিহাস সবার জানা। বঙ্গবন্ধু ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে লন্ডন হয়ে ঢাকা ফিরলেন। ড. কামাল হোসেনকে প্রথমে আইনমন্ত্রী ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে অসম্ভব স্নেহ করতেন ও ভালবাসতেন, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বভাবজাত ধর্ম। বাকশাল করার পর ড. কামাল হোসেন নানা ছল-ছুতায় বিদেশে যাওয়া-আসা শুরু করলেন। সবশেষে ১৫ আগষ্টের কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধুকে না জানিয়ে সপরিবারে বিদেশে চলে গেলেন। বিদেশ থেকে জানালেন, শীঘ্রই ফিরবেন না, পড়াশোনা করবেন। আমার প্রশ্ন, তিনি কি ১৫ আগষ্টের ঘটনা পূর্বেই জানতেন? কিংবা তিনি যদি বাকশালের পক্ষে নাই থাকতেন, তা হলে জেনারেল ওসমানীর মতো পদত্যাগ করতে পারতেন। তাহলে বুঝতাম, তার সৎসাহস আছে। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকা-ের পর যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এতিম হয়ে গেলেন, পেশাদার আমলা হয়েও যখন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী দুই বোনকে আশ্রয় দিলেন, তখন বার বার অনুরোধ সত্ত্বে¡ও কিংবা বিবেকের তাড়নায় ড. কামাল হোসেন একবারও দুই বোনের সঙ্গে দেখা করলেন না বা হত্যার নিন্দা করে কোন বিবৃতি দিলেন না বা প্রতিবাদ সভা করলেন না। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ভাষ্যমতে, বহুবার ওয়াদা সত্ত্বেও ড. কামাল হোসেন লন্ডনের কোন প্রতিবাদ সভায় যোগদান করেননি। এই হলো ড. কামাল হোসেন! আর তিনি করবেন বিপ্লব! দুনিয়ার সবাই বিশ্বাস করলেও কোন বাঙালি এটা বিশ্বাস করে না। তিনি এখন চান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। তার উচিত হবে না বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করা। কারণ বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে তিনি বেইমানি করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী, মানবতাবিরোধী এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন এবং শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করবেন- সে আশায় গুড়ে বালি। বাংলার মানুষ কোনদিন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা দিবসে নিজেদের জন্মদিবস পালনকারীদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না। মনে রাখবেন, ১৯৮১ সালের শেখ হাসিনা আর ২০১৮ সালের শেখ হাসিনা এক নন। ইতোমধ্যে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় অনেক জল গড়িয়ে গেছে। বাংলার মানুষ বুঝতে পেরেছে এবং তাদের অন্তর থেকে বিশ্বাস করে, তাদের প্রকৃত বন্ধু কে? মায়েরা-বোনেরা বুঝতে পেরেছে সত্যিকার অর্থে এ দেশের মঙ্গল করতে পারবেন কে? কে পারবে তাদের মায়ের স্নেহে, বোনের স্নেহে আগলে রাখতে? কে পারবে দেশের-দশের সত্যিকার উন্নয়ন করতে? কে পেরেছে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে! কে পেরেছে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে। কে পেরেছে নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে।
সবশেষে বলি, এই মুহূর্তে বাঙালি জাতির আশা-ভরসার স্থল একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিই পারেন ত্রিশ লাখ শহীদের, ৩ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। তিনিই পারেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে।