ষড়যন্ত্রকারীদেরকে চিহ্নিত করুন

6

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর থেকে ঘাতকরা ইতিহাস বদলে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নেওয়াটাও তখন অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে থাকে। সেই অপচেষ্টার অংশ হিসেবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল-দস্তাবেজ নষ্ট করা হয়। ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে বিকৃত ইতিহাস লেখানো শুরু হয়। কিন্তু ওরা জানত না, ইতিহাস কখনো বদলানো যায় না। ইতিহাস তার আপন পথ ধরেই এগোতে থাকে। যেমনটা হয়েছে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃত হয়েছে। আর ইতিহাস বিকৃতকারীরা নিজেরাই খড়কুটার মতো উড়ে গেছে। ইতিহাস বিকৃতির সেই সব অপচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতীতের মতো ভবিষ্যতে আর কখনো বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি সম্ভব হবে না।’ সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, ‘দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবই।’
বিদেশে থাকায় পঁচাত্তরের সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। পঁচাত্তরের পর একটা দীর্ঘ সময় তাঁদের দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর নামগন্ধ মুছে ফেলা। পরে তৎকালীন সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন শেখ হাসিনা এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। একই সঙ্গে স্বাধীনতার অর্জনগুলো রক্ষায় নিজের জীবন নিবেদন করেন। সোমবার ছিল শেখ হাসিনার ৪০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এই দিনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেসব দিনের স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ঝড়ঝাপটা এবং বাধা অতিক্রম করেই আমাকে দেশে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না। আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে ও চিঠিপত্র পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরো পরিবর্তন। এখন আত্মবিশ্বাস এসে গেছে, ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতেও পারবে না।’
আমরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। ইতিহাস বিকৃত করার পথ রুদ্ধ হয়েছে। তার পরও সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কিছু দায়দায়িত্ব থেকেই যায়। পঁচাত্তরের এই হত্যাকা- কেন ঘটেছিল? তার পেছনে দেশি-বিদেশি কোন কোন শক্তির ইন্ধন ছিল? কারা খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল? কারা তাদের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল? কেন সেসব করা হয়েছিল, কারা, কেন ইতিহাস বিকৃত করতে চেয়েছিল ইতিহাসের স্বার্থেই সব রহস্য উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।