কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

15

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
জামায়াত, হেফাজত কমিটিতে স্থান পাওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান করে নিয়েছে প্রকাশ্যে নৌকা বিরোধী একটি গ্রুপ। সাথে রয়েছে হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী। ফলে ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা প্রস্তাবিত উপজেলা কমিটি বাতিলের জন্য জেলা কমিটি বরাবরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ একযুগ পরে অনুষ্ঠিত কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের এ সম্মেলনে আছলম ইকবাল মিলনকে সভাপতি ও এডভোকেট এ এস এম আজাদুর রহমান আজাদকে সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি এবং যুগ্ম-সম্পাদক পদসহ ৬ সদস্যের কমিটি ঘোষনা করেন কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ।
৬ সদস্যের এই কমিটি ঘোষণার দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে প্রস্তাবিত এই কমিটি অনুমোদনের জন্য মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দেয়া হয়।
দলীয় একাধিক সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল দাখিলকৃত ওই কমিটিতে নৌকা বিরোধী একাধিক ব্যক্তি প্রস্তাবিত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদ দখল করে নিয়েছেন।
এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি, সম্পাদকের স্বজন নিকট আত্মীয়জন কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। শুধু তাই নয় সদ্য সমাপ্ত কমলগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দল থেকে বহিষ্কৃত আনোয়ার হোসেনের ভাই সানোয়ার হোসেন, আব্দুল মুমিন তরফদার, খন্দকার আহমেদ হোসেন, রাসেল মতলিব তরফদার, আব্দুল মন্নান, ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুয়েল আহমদ, আব্দুল বাছিত, সেলিম মিয়া প্রকাশ্যে নির্বাচনে বিরোধীতা করলেও দখল করে নিয়েছেন কমিটির বড় বড় পদ।
এছাড়া প্রস্তাবিত ওই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদসহ একাধিক সদস্য পদে স্থান করে নিয়েছেন হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী।
অভিযোগ রয়েছে- কমিটিতে এমন মানুষ রয়েছেন যারা কোন দিন রাজপথে জয় বাংলা শ্লোগান দেননি, দেখাও মেলেনি আওয়ামীলীগের কোন কর্মসূচিতে। শুধু পরিবারতন্ত্রের কারণে তাদেরকেও কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে কমিটিতে স্থান পাওয়া না পাওয়ার পেছনে অর্থ বাণিজ্যেরও গুঞ্জন রয়েছে।
জেলা কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য দাখিলকৃত কমিটির বিষয়টি জানাজানি হলে তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
প্রস্তাবিত ৭১ সদস্যের কমিটিতে আওয়ামী বিরোধী পরিবারের সদস্যরা এবং সদ্য সমাপ্ত কমলগঞ্জ পৌর নির্বাচনে নৌকা বিরোধীরা স্থান করে নিলেও প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান হয়নি বিগত সময়ের আন্দোলন সংগ্রামে নির্যাতিত এবং নৌকার পক্ষে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীর। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, কোনদিন রাজনীতি না করেও প্রস্তাবিত কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে আসীন হয়েছেন সাধারণ সম্পাদক এ এস এম আজাদুর রহমানের ভাতিজা এডভোকেট এ এস এম মাহফুজুর রহমান।
এছাড়া মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে আসীন হয়েছেন সভাপতি আছলম ইকবাল মিলনের মেয়ে এডভোকেট রোকশানা আক্তার ও তার নিকট আত্মীয় আশরাফুল হক বদরুল। হেফাজত নেতা নূরুল ইসলামকে করা হয়েছে সদস্য। আদমপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক অর্থ সম্পাদক মো. ফারুক আহমদও সদস্য পদে স্থান করে নিয়েছেন। কমিটির সদস্য পদে স্থান করে নিয়েছেন জামায়াত নেতা আমির আলী।
এ বিষয়ে আলাপতারিতায় পৌর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম পুষ্প বলেন, পরিবারতন্ত্রের বাইরে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি হওয়া উচিত। নৌকা বিরোধী এবং হেফাজত, জামায়াত ও বিএনপির মানুষকে নিয়ে প্রস্তাবিত যে কমিটি দাখিল করা হয়েছে সেই কমিটি দিয়ে শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালি করা যাবে না।
উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী মুন্না রায় বলেন, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া নেত্রীর সাথে বেইমানি করার সামিল।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মা বলেন, এই কমিটি যদি অনুমোদন করা হয় তাহলে রাজনৈতিক মাঠে আন্দোলন সংগ্রাম কঠিন হয়ে পড়বে।
আওয়ামীলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আওয়ামীলীগ একটি বিশাল দল। এই দলে পরিক্ষিত নেতাকর্মীর অভাব নেই। নৌকা বিরোধী বিএনপি জামায়াতের লোক টেনে এনে প্রস্তাবিত কমিটিতে রাখা মানেই দলের জন্য অসনী সংকেত। এদিকে প্রস্তাবিত কমিটির বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদক বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ও মুন্সিবাজার ইউনিয়ন এবং কমলগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ।
লিখিত অভিযোগে তারা প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকা নৌকা বিরোধী, জামায়াত, বিএনপি ও হেফাজতের লোকদের বাধ দিয়ে কমিটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে কমলগঞ্জ উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই যাচাই-বাছাই করে কমিটি করা হয়েছে।