কাজিরবাজার ডেস্ক :
মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ কর্মীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে গত সপ্তাহে। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ এই কর্মসূচীর নাম দিয়েছে ‘ব্যাক ফর গুড’। সাধারণ ক্ষমার আওতায় অবৈধ কর্মীরা সহজেই দেশে ফিরতে পারবেন। কর্মসূচীটি ঘোষণা করার পরই ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশিবাংলাদেশী অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার জন্য অনুমোদন পেয়েছেন। ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী সফল করার জন্য গত বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতো ইন্দিরা খায়রুল দাজাইমি দাউদের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে অবৈধ কর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে। মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
মালয়েশিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী সফল করার জন্য দেশটির ইমিগ্রেশন প্রধান দাতো খায়রুল দাজাইমি বলেছেন, এই কর্মসূচীর আওতায় ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ২৯ হাজারের বেশি বাংলাদেশী (অবৈধ অভিবাসী) সাধারণ ক্ষমার আওতায় সুবিধা নিয়েছেন। যদিও আবেদন করেছেন ৩২ হাজারের বেশি কর্মী। আবেদনকারীদের মধ্যে এখনও যারা দেশে ফেরার জন্য অনুমতি পাননি দু’এক দিনের মধ্যে তাদের অনুমোদন দেয়া হবে। বাংলাদেশের কর্মীরা কর্মসূচীতে ব্যাপকভাবে সাড়া দেয়ায় সাধুবাদ জানিয়েছেন। পরে যখন বৈধভাবে কর্মী নিয়োগ করা হবে তখন এসব কর্মীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশীসহ অন্যান্য যে সমস্ত দেশের কর্মীরা অবৈধ অবস্থায় রয়েছেন তারাও মালয়েশিয়া সরকারের এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন।
সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে ১৫টি দেশের কর্মীরা কাজ করে আসছেন। প্রায় সব দেশেরই অবৈধ কর্মী রয়েছে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার বিষয়টি সব দেশের জন্য একই রকমভাবে কাজে লাগানো হবে। এই কর্মসূচী শুধু বাংলাদেশের জন্যই হবে না। অন্য দেশগুলোর অবৈধ কর্মীদের সুযোগ নেয়ার জন্য ইমিগ্রেশন বিভাগ আহ্বান জানিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি কোন অবৈধ কর্মী আবেদন না করেন তাহলে সময় শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ইমিগ্রেশন বিভাগ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এর আগেও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে অবৈধ কর্মীদের দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তখন সেই সুযোগ অনেকে না নিয়ে অবৈধভাবে দেশটিতে ছিলেন। এবার মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন এমন কথা ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতো ইন্দিরা খায়রুল দাজাইমি দাউদের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের ঘণ্টাব্যাপী যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বৃহস্পতিবার। ওই বৈঠকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় বাংলাদেশের অবৈধ কর্মীদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের জন্য যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিতকরণ, ছাত্র, প্রফেশনাল ও কর্মীদের ভিসা নবায়ন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বাংলাদেশীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আরও সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান দেশটির ইমিগ্রেশন প্রধান। বৈঠকে হাইকমিশনের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, কাউন্সিলর (শ্রম-২) মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম ম-ল, প্রথম সচিব (পলিটিক্যাল) রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের পলিসি এবং স্ট্র্যাটেজি পরিচালক মোহাম্মদ জুহাইরি মাত রাডি, পাসপোর্ট বিভাগ, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ডিপার্টমেন্ট, ইনভেস্টিগেশন ও ফরেন এ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী ঘোষণার আগে দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের জেল, জরিমানা ও বিভিন্ন ধরনের আইনানুগ শাস্তি ভোগ করে দেশে ফিরতে হতো। এই কর্মসূচীর আওতায় কোন ধরনের শাস্তি ভোগ করতে হবে না। সহজেই তাদের দেশে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে। মালয়েশিয়া সরকারের ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর আওতায় সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেয়ে দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অবৈধ কর্মীরা আশার আলো দেখছেন। কারণ তাদের আর জেল জরিমানার সম্মুখীন হতে হবে না।
হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়া সরকার ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচীর আওতায় অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমায় দেশে ফেরার সুযোগ দেয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এক দিনেই হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হবে। ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচী সফলভাবে শেষ করার জন্য হাইকমিশনের ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম কাজ করবে। হাইকমিশনারের অনুরোধের পর মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন কর্মদিবসে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পুত্রজায়া, কুয়ালালামপুর, সেরেমবান, শাহ আলম এবং জহুর বারু ইমিগ্রেশনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ইমিগ্রেশন বুথের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন কারণে ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশী কর্মীরা যাতে দ্রুত আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে দেশে ফিরতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিয়েছে হাইকমিশন।