কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে সরকার। শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে লকডাউনের পর থেকেই। সংসদ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কমিউনিটি রেডিও এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পাশাপাশি অনলাইন পাঠদান অব্যাহত রাখা হবে।
সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত সার্বিক চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের মার্চ থেকে আগামী ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যদি আগামী ২৩ মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না যায়, সে ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হবে বিভিন্ন মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও লকডাউনের পরই অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম শুরু করা হবে। সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে এলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুরু করা হবে। সংক্রমণের ওই অনুকূল পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্লাসও শুরু হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য তৈরি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুরু করা হবে। আর অন্যান্য ক্লাসও শুরু করা হবে পর্যায়ক্রমে। লকডাউনের কারণে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। লকডাউন শেষ হলে অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবস্থা শুরু করা হবে।’
বিগত সময়ের অ্যাসাইনমেন্ট কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যায়নের বিষয়ে মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্ট আগে যা জমা রয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। এই অ্যাসাইনমেন্ট যাচাই-বাছাইয়ে আমরা একটা ধারণা পাবো। তা থেকে নতুন করে নির্দেশনা প্রয়োজনে দিতে পারবো। এছাড়া আমরা ডাটা সংগ্রহ করছি। কোন শিক্ষার্থীর কী সমস্যা তা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিখন ফল অর্জনে যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে তা পূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি শিগগিরই অনুকূলে আসার সম্ভাবনা না থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। লকডাউনের পর অ্যাসাইনমেন্ট চালু করা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে এমন প্রতিটি বিদ্যালয়কেই অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কথা ছিল গত ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে পরবর্তী দুই সপ্তাহ পর এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এসএসসি ও সমমানের জন্য ৬০ দিন এবং এইচএসসি ও সমমানের জন্য ৮৪ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে হবে। এরপর দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে দুই পরীক্ষাই নেওয়া হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ গত বছরের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয় আগামী ২২ মে পর্যন্ত। সেই হিসাবে আগামী ২৩ মে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এর বিস্তার রোধে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি’র সদস্য অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আগামী তিন মাসের আগে হয়তো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে না।
উল্লেখ্য, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় তা বড়িয়ে আগামী ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়।