করোনাকালীন সময়েও সিলেটে মায়েদের নরমাল ডেলিভারীর কাজ করে যাচ্ছে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র

38

সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
মহামারি করোনা ভাইরাকালে (কোভিড-১৯) নিরাপদে মায়েদের নরমাল (স্বাভাবিক প্রক্রিয়া) ডেলিভারী দিতে দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
সিলেট সিটি কপোরেশনের সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২০ মার্চ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত করোনাকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ৮ হাজার ৮৮২ জনসহ ২২ হাজার ২০৬টি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নরমাল ডেলিভারী সেবা ২৩টি, সিজারিয়ান সেবা ৩৬টি এবং ১৯টি ডেলিভারী বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২৭৭ জন গর্ভবতী মাকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেছে ৭ জন ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৩২ স্বাস্থ্য কর্মীরা।
সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কপোরেশন এলাকায় আরবান প্রাইমারী হেল্থ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট-২ (টচঐঈঝউচ-২) পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট ৮টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়ন করছে। এগুলো হচ্ছে, নগরীর আম্বরখানা (নিজস্ব ভবন) ছঈদা মঈনদ্দিন নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাগবাড়ী (নিজস্ব ভবন) বর্ণমালা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, আখালিয়া (নিজস্ব ভবন) বীরেশ চন্দ্র নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, শাহজালাল উপশহর (বাড়ী ভাড়া) নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তোপখানা (নিজস্ব ভবন) নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, টিলাগড় (বাড়ী ভাড়া) নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কদমতলী (বাড়ী ভাড়া) নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ধোপাদিঘীরপাড় (বাড়ী ভাড়া) বিনোদিনী নগর মাতৃসদন কেন্দ্র। প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারসহ ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড় এসব নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ২৪ ঘন্টা খোলা রয়েছে।
জানা গেছে, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভবতী মা’দের সময়কালে সব ধরনের সার্ভিসের মধ্যে ৩০% ওষুধ বা সেবা দিয়ে থাকে। একটি ‘ডেট’ কার্ডের মাধ্যমে এসব ওষুধ ফ্রি দেয়া হয়। এছাড়া ২০২১ মার্চে গর্ভবতী মাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবায় ৭৬২ জনকে ৬০ হাজার ৯শ’ ৬৮ টাকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বেশ কিছু এলাকার গর্ভবতী মা ও নরমাল সন্তান জন্ম দেওয়া এমন মায়েদের সাথে কথা হলে তারা দৈনিক কাজিরবাজার পত্রিকার প্রতিবেদককে জানালেন, ঋতু:স্বাব বন্ধ হওয়ার পর থেকে সংশ্লি¬ষ্ট নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র্রে গিয়ে মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এরপর কেন্দ্রের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে চিকিৎসা নিলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিরাপদে মায়েদের ডেলিভারী দেয়া সম্ভব হয়ে থাকে। এ ধরণের ডেলিভারী দেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত রোগীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা মায়েদের খোঁজখবর নিয়ে এমন চিকিৎসা সেবা প্রদানে স্বাস্থ্যখাতে বর্তমান সরকারের মাইলফলক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা একেবারে কম ও স্বল্প মূল্যে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ও শিশু মৃত্যুর হার কমে আসার পাশাপাশি মায়েদের চিকিৎসা সেবা ও নিরাপদে ডেলিভারী দেয়ার প্রক্রিয়াটি নারীদের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হয়ে থাকে। ফলে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবার প্রতি নারীদের আস্তা ফিরে পেয়েছেন। তবে সঠিক সময় ও সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ১টি করে এ ধরণের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলার প্রতি তারা জোর দাবী জানিয়েছেন।
সিলেট গোটাটিকর এলাকার নরমাল ডেলিভারী নেওয়া রতনা নামের এক মহিলা জানান, নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে আমার দু’টি মেয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় (নরমাল) ডেলিভারী হয়ে জন্ম নিয়ে বর্তমানে তারা সুস্থ রয়েছে। এর মধ্যে ছোট মেয়ে গত বছরের করোনাকালের ‘লকডাউনে’ বাড়িতে নরমাল ডেলিভারী দিতে সক্ষম হয়েছে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এছাড়া একই পরিবারের আমার আরো দু’জা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়ে একই পদ্ধতিতে নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। এতে করে খরচ কম ও মা-শিশুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তিনি বলেন, যদি কোন মহিলা সন্তান জন্ম দেওয়ার শুরু থেকে সঠিক সময়ে ‘নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ গিয়ে চিকিৎসা নেন তাহলে নরমাল ডেলিভারী দিতে সক্ষম নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এতে ভয়ের কিছু নেই। আমি বলবো প্রতিটি গর্ভবতী মায়েরা যেন নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা নেন মা ও শিশু সুস্থ থাকুন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মনিটরিং এন্ড কোয়ালিটি এমুরেন্স অফিসার পিআইভি (টচঐঈঝউচ-২) হুসেইন আহমদের সাথে সরাসরি এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক কাজিরবাজারকে বলেন, সিলেট সিটি কপোরেশন এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বা কোন কাঠামো না থাকার কারণে (টচঐঈঝউচ-২) এর অধীনে মহানগর এলাকায় পার্টনার এনজিও সীমান্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছে। দ্বিতীয় প্রজেক্ট ২০১৯ আগষ্ট চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্যে হচ্ছে সিলেট সিটি কপোরেশনের হত দরিদ্র মানুষের বিশেষ করে গর্ভবতী মা’দের তাদের গর্ভকালীন পরিচর্যা নিশ্চিত করণ: মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো। এই কেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। যেমন- গর্ভকালীন সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, শিশু স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টি সেবা, কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতামূলক সেবা ইত্যাদি দিয়ে আসছে।
এই অফিসার জোর দাবী জানিয়ে আরো বলেন, এই ধরণের স্বাস্থ্য সেবার জন্য চলমান কার্যক্রম স্থায়ীরূপ কাঠামোতে রূপান্তর হতে পারে এবং অসহায় ও দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা যেন বহাল থাকে। তাহলে সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম দৈনিক কাজিরবাজারকে বলেন, স্থানীয় সরকার পল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পার্টনার এনজিও সীমান্তিক কর্তৃক পরিচালিত সিলেট সিটি কপোরেশনের বাস্তবায়নে আরবান প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট-২ বিগত আগষ্ট ২০১৯ থেকে ১টি নগর মাতৃসদন, ৭টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ করছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। ১৪টি স্যাটেলাইট টিমের মাধ্যমে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২১টি ওয়ার্ডে ১৪৯ জন জনবল নিয়মিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে।
তিনি উল্লে¬খ করে বলেন, করোনাকালীন সময় যেখানে অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা সীমিত বা কম ছিলো সেখানে আমাদের এই সব ক্লিনিক নিয়মিত খোলা ছিলো এবং ডাক্তার ও নার্সসহ সবাই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গরীব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সিলেট সিটি কপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্দেশে প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট ও পার্টনার এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অত্যন্ত পরিশ্রম করে করোনার সময় মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, মার্চ ২০২১ পর্যন্ত করোনাকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৮টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ৮ হাজার ৮৮২ জনসহ ২২ হাজার ২০৬টি স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নরমাল ডেলিভারী সেবা ২৩টি, সিজারিয়ান সেবা ৩৬টি এবং ১৯টি ডেলিভারী বিনা মূল্যে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২৭৭ জন গর্ভবতী মাকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।