লাইলাতুল ক্বদর আজ

12

মাহে রমজান বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিশেষ রহমত ও বরকতের মাস হিসেবে চিহ্নিত। এই রমজান মাসেরই একটি বিশেষ রাত লাইলাতুল ক্বদর বা শবে ক্বদর, অর্থাৎ মহিমান্বিত রজনী। সাধারণভাবে ধারণা করা হয় ২৬ রমজান দিবাগত রাত অর্থাৎ ২৭ রমজানের রাতটিই সেই পুণ্য রজনী, আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) যার সুসংবাদ দিয়েছেন। মুমিন মুসলমানগণ তাই বিশেষভাবে এই রাতটি এবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করেন। এ রাতে যিনি এবাদত-বন্দেগিতে নিজকে নিয়োজিত রাখবেন তিনি হাজার মাসের এবাদত-বন্দেগির চেয়ে বেশি সওয়াব হাসিল করবেন, এই হলো শবে ক্বদরের বড় ফজিলত।
লাইলাতুল ক্বদরের তাৎপর্য ও মহিমা অবশ্য শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে জ্ঞান ও শিক্ষার চর্চার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ রাতে মানব সম্প্রদায়কে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে। আল্লাহ তার প্রিয় নবীর কাছে এই রাতে কোরআন শরিফ নাজিল করেছিলেন এই বলে : ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে- যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন লেখনি দ্বারা। তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানতো না।’ জাহেলিয়াত বা অন্ধকার থেকে আলোকের যুগে উত্তরণ, জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে আত্মোপলব্ধি, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি থেকে মানুষের মুক্তি-এটাই ইসলামের শাশ্বত মর্মবাণী। ‘পড়’ কথাটির মধ্য দিয়ে এই রাতেই শুরু হয়েছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা এক নতুন সভ্যতার জয়যাত্রা। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, গোটা মানবজাতির জন্যই এই রাতটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যমন্ডিত। মানুষকে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করতে বলা হয়েছে দুনিয়ার মঙ্গল ও আখেরাতের মঙ্গল কামনা করে। কিন্তু দুনিয়ার মঙ্গলের পথটি তো নিহিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা দ্বারা নিজের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও পরিবেশকে জানা এবং প্রকৃতি ও পরিবেশকে বশ মানিয়ে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবন গড়ে তোলার মধ্যে, আল্লাহ স্বয়ং এই মহিমান্বিত রাতে যার তাগিদ দিয়েছিলেন ‘পড়’ বলে। মহানবী (সা.) বলেছিলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য (প্রয়োজনবোধে) চীন দেশে যাও। আমরা কি সেই অমূল্য উপদেশ-নির্দেশ পালন করছি? নাকি আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথ ত্যাগ করে অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও গোমরাহির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি? আজকের ধর্মীয় নেতারা কি আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন, না পবিত্র ধর্মকে সংকীর্ণতা ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত করে তুলছেন? এ প্রশ্ন কি মুসলিম সম্প্রদায়ের মনে জাগবে না যে, ইসলামের আদিযুগে যারা সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিল সেই বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় আজ এমন পশ্চাৎপদ কেন? পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরে এবাদত-বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে এ প্রশ্নটিরও জবাব আমাদের অবশ্যই খুঁজতে হবে।