স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির যেন কোনো শেষ নেই। হাসপাতালের ওষুধ চুরি হয়ে যায়, যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যায়, এমনকি রোগীর মুখের গ্রাস বা খাদ্যের বরাদ্দও চুরি হয়ে যায়। এই চোরচক্রের হাত থেকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য খাতের কোনো প্রতিষ্ঠানই নিরাপদ নয়। সরকারি হাসপাতাল থেকে হাজার হাজার ডেঙ্গু কিট গায়েব হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শকদল ওই হাসপাতালগুলোর কাগজ আর মজুদ মেলাতে গিয়ে দেখতে পায়, কাগজে থাকলেও বাস্তবে নেই হাজার হাজার ডেঙ্গু কিট। আবার ডেঙ্গুর মৌসুম বা বর্ষাকাল কাছে চলে আসায় দ্বিগুণ, তিন গুণ দামে ডেঙ্গু কিট কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। কোনো কোনো হাসপাতালে কিট হাতে না পেয়েই বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। স্বাস্থ্য খাতের তথ্য অনুযায়ী সে বছর ডেঙ্গুতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিল প্রায় চার হাজার মানুষ। ২০২০ সালের মার্চে দেশে শুরু হয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় করোনা চিকিৎসায়। তার পরও গত বছর এক হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে সাতজন। এ বছরও ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে আসা শুরু হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুর কিছু উপসর্গ করোনার সঙ্গে মিলে যায়। তাই হাসপাতালগুলোতে করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর টেস্টও করাতে হয়। এ কারণে হাসপাতালে ডেঙ্গুর কিট রাখা জরুরি হয়ে উঠেছে। কিন্তু চোরচক্র ও সিন্ডিকেট যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু কিট কিনেই বা কী হবে? হাসপাতালের গুদামঘর থেকে ডেঙ্গুর কিট গায়েব হয় কিভাবে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শকদলের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নথিপত্রে দেখা যায়, সেখানে সব মিলিয়ে ১১ হাজার ৪৫২টি কিট ছিল, যার মধ্যে খরচ হয়েছে মাত্র ৯টি। ফলে স্টোরে থাকার কথা ১১ হাজার ৪৪৩টি। কিন্তু পাওয়া গেছে পাঁচ হাজার ৪০০টি। বাকি ছয় হাজার ৪৩টি কিট কোথায় গেল? শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও তিন হাজার ২৫৪টি ডেঙ্গু কিটের হদিস পাওয়া যায়নি। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক লট ডেঙ্গু কিট কেনা হয়েছে প্রতি পিস ১৭৫ টাকা করে; অন্য দুটি লটে কেনা হয়েছে ৩৪৮ ও ২৪৮ টাকা দরে। ঢাকার ৯টি সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও এমন অনেক অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু অনিয়ম থামছে না।
সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল সরকারি হাসপাতালগুলো। সেখানে এ ধরনের লুটপাট কোনোভাবেই কাম্য নয়। মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শনে উঠে আসা অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের আইনের মুখোমুখি করুন। পাশাপাশি হাসপাতালের অনিয়ম রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিন।