কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত বুধবার (৫ মে) করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ বিষয়ক আন্তমন্ত্রালয় সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সভায় দেশে করোনার টিকা উৎপাদনের জন্য তিনটি ওষুধ কোম্পানির সক্ষমতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরদিনই (বৃহস্পতিবার) টিকা বিষয়ক কোর কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। পরে তাদের প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
৩ মে পরামর্শক কমিটির সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে সভাপতি করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের পরিচালক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২, অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সদস্য করা হয়।
এই কমিটি কোভিড ১৯-এর ভ্যাকসিনের চাহিদা যাচাই, নিরাপদ ও কার্যকর টিকা নির্বাচন, টিকা সংগ্রহ, বিতরণ ও টিকার যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করবে।
কোম্পানি তিনটি হচ্ছে, ইনসেপটা, পপুলার ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে টিকা বিষয়ক কোর কমিটির বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাদ পড়ে যাবে বলে সূত্র জানায়।
দেশে করোনাভাইরাসের জাতীয় টিকাদান কার্যক্রমে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, তারা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও আশঙ্কা করছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এই কোম্পানিগুলো টিকা তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে কেবল। টিকা উৎপাদনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়নি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের টিকা বিষয়ক কমিটির এক সূত্র বলেন, দেশে কতগুলো কোম্পানির ভ্যাকসিন তৈরির অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেটা আমাদের জানা আছে। ভ্যাকসিন তৈরির অবকাঠামো ও অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে তাদেরই এ তালিকায় রাখা হয়েছে।
টিকা বা ওষুধ তৈরির জন্য যখন কেউ অনুমতি চায়, তখন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে ওই কোম্পানি পরিদর্শন করা হয়। এটাকে বলা হয় গুড ম্যানুফেকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি)। এরপর সুনির্দিষ্ট করে ওই পণ্য তৈরির ক্ষমতা কেমন রয়েছে, সেটা যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোম্পানিগুলোকে কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলো জানতে চাইলে ওই সূত্র জানায়, ‘পাঁচটি ইনডিকেটর তথা সূচক রয়েছে, কোম্পানিগুলো কত দ্রুত উৎপাদনে যেতে পারবে, টিকা উৎপাদনের পরিমাণ কত হবে, টিকার মান কেমন হবে, কোম্পানির অভিজ্ঞতা এবং পরিশেষে তাদের জনবল বা অবকাঠামো কতটা আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিবেচনায় হেলথ কেয়ারের অভিজ্ঞতা নেই। তারা আগে টিকা উৎপাদন করেনি। তাই হয়তো এটি বাদ যেতে পারে। বাকি থাকে ইনসেপটা ও পপুলার। এরপর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সিদ্ধান্ত নেবে।’
টিকা উৎপাদনের প্রস্তুতি আছে কিনা জানতে চাইলে ইনসেপটার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, এটা নিয়ে এখনও কথা বলতে পারবো না। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা হবে।
এদিকে, গত ১৮ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় ইনসেপটা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ইনসেপটা ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট ইতোমধ্যে ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (জিএমপি) মান অনুযায়ী ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিশ্বমানের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সুতরাং আমি মনে করি, অন্য দেশগুলোও ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য এই প্ল্যান্ট ব্যবহার করতে পারে। প্ল্যান্টটি প্রতি বছর ১৮ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষমতা রাখে।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানান, ‘বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। আমাদের তিনটি ফার্মাসিউটিক্যালস ইনসেপটা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে। ইনসেপটা ইতোমধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছে রাশিয়ার সঙ্গে।’
আমাদের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যাল বর্তমানে ১৪টি ভ্যাকসিন তৈরি করছে। সেগুলো রফতানিও হচ্ছে।’