কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীম গঠিত হয়। এটি বাস্তবায়নে দুই দফা ৬ মাস সময় বাড়লেও অধিকাংশ ব্যাংক তাদের নির্ধারিত অর্থ বিতরণে ব্যর্থ হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের বরাদ্ধকৃত অর্থ বিতরণে বকরতে না পারায় আরো তিনমাস অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
এ সময়েও তারা ব্যর্থ হওয়ায় আরো তিন মাস বাড়িয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি শেষে চুক্তিবদ্ধ ৪৩ টি ব্যাংকের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক ৫০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এমনকি ২০ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি অনেক ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক জানান, চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপকদের টেলিফোনে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ এবং পরামার্শ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকসমূহের শাখাওয়ারী বরাদ্দকৃত ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনকি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর কঠোর হুশিয়ারী করে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঋণ বিতরণ আগ্রহ কম দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, এ ঋণ সরাসরি কৃষকে দিতে হয়। এখাতে আমাদের তেমন এক্সপার্ট নেই। তবুও আমরা ঋণ বিতরণে চেষ্ঠা চালাচ্ছি। তবে এ মাসেই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে ইনশাল্লাহ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এপ্রিলে কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। গত ফেব্রুয়ারি শেষে ১ লাখ ৫১ হাজার ৭১৭ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বা ৭১ দশমিক ২৬ শতাংশ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে সাড়ে ৮১ হাজার কৃষকের কাছে মোট বরাদ্ধের ৯৫ দশমিক ১০ শতাংশ বা ১ হাজার ৬১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ব্যাংক,শাহজালাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ইউসিবি ও উত্তরা ব্যাংক ৫০ থেকে ৯০ শতাংশের উপরে প্রণোদনা বিতরণ করেছে।
তবে প্রণোদনা বিতরণকৃত ৪৩ ব্যাংকের মধ্যে ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে ২৩ ব্যাংক। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ৮ দশমিক ০৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক ২০ দশমিক ০৩ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ২২ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, বেসিক ব্যাংক ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আলআরাফা ইসলামী ব্যাংক ২৭ দশমিক ২২ শতাংশ, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ৩১ দশমিক ০১ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংক ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৪৪ দশমিক ৮০ শতাংশ ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংক ৪৩ দশমিক ২০ শতাংশ, পূর্বালী ব্যাংক ৪১ দশমিক ০২ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ৩৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩১ দশমিক ৬২ শতাংশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংক ৪২ দশমিক ৩৬ শতাংশ, এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ৪১ দশমিক ০৯ শতাংশ।
সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ঋণ বিতরণে খুবই আগ্রহী। কারণ ছোট ছোট এ ঋণ তেমন খেলাপি হয়না। বড় ঋণ গ্রহীতারাই খেলাপি বেশি হয়। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ শাখাই শহরে। তাই কৃষককে সরাসরি ঋণ দিতে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা এ পর্যন্ত ৮ কোটি টাকা দিয়েছে। এ মাসে আরো ১৫ কোটি টাকা বিতরণ করবো। এতে করে মার্চেই ৫০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। আর বাকি ৫০ শতাংশের জন্য আরো তিন মাস বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সময় চাইবো। আশাকরি জুনের মধ্যে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) এস এম বুলবুল আহমেদ বলেন, লোকজন এ ঋণ নিতে তেমন আগ্রহী হয় না। আমাদের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে। সামনে একটা ফসল মৌসুম চলছে আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবো।