শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর বইয়ের বোঝা এত বেড়েছে যে তাদের পক্ষে বহন করাই দায়। এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তা কানে তুলছে না; শিক্ষাবিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক ও নাগরিক মহল থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর দাবি জানানো হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। আনন্দময় হচ্ছে না শিশুদের শিক্ষাগ্রহণ। আধুনিক শিক্ষার ধারণায় সানন্দ পাঠগ্রহণ অন্যতম মৌলিক বিষয়। বইয়ের বোঝাই শুধু নয়, পরীক্ষার বোঝাও শিশুদের কাঁধে চেপে আছে।
বিষয়টি সরকারপ্রধানের নজরও কেড়েছে। অনেক দিন ধরে তিনিও বই ও পরীক্ষার বোঝা কমাতে বলছেন। পড়াশোনায় শিশুরা যেন আনন্দ পায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা থাকা উচিত নয়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দরকার আছে কি না বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সভার কার্যক্রম অবহিত করার সময় পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, পিইসি পরীক্ষা থাকা না থাকার বিষয়টি পর্যবেক্ষণাধীন।
প্রধানমন্ত্রী পড়াশোনার চাপ কমিয়ে শিশুদের জন্য খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাদের জন্য পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলার গুরুত্ব বেশি। তিনি বইয়ের ভার থেকে শিশুদের মুক্ত করতে বলেছেন; তারা অনেক বই কাঁধে নিয়ে ঘোরে, তাদের কষ্ট হয়। পরীক্ষার ভার কমাতে বলেছেন। পিইসির যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। কারণ পিইসি পরীক্ষা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরীক্ষা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। পরীক্ষা দিতে দিতে শিশুরা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বই ও পরীক্ষার বোঝা তাদের জন্য বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে। সরকারপ্রধানের মূল কথা হলো, শিশুদের বইয়ের ভার কমাও, তাদের আনন্দে থাকতে দাও।
প্রিধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে পিইসি পরীক্ষা থেকে সরকারের সরে আসার ইঙ্গিত মনে করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পিইসি না নিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে বক্তব্য আসছে। তিনিও এ পরীক্ষা না নেওয়ার বিষয়ে একমত। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাও নেই। তবে স্কুলের দৈনন্দিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরীক্ষা হবে; সেখানে মার্কিং হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ ও নির্দেশনা অভিনন্দনযোগ্য। এ নির্দেশ দ্রুত কার্যকর করা উচিত। বিভিন্ন উন্নত দেশে শিশুশিক্ষার মূল গুরুত্ব খেলাধুলায়, অঙ্কনে, ললিতকলায়; পরে পাঠ্যক্রমে। অথচ আমরা চলছি বিপরীতক্রমে। বইয়ের বোঝা অসহনীয় হয়ে পড়েছে, খেলাধুলা-ললিতকলা গুরুত্বহীন। রাজধানীর বেশির ভাগ স্কুলে খেলার পরিসরই নেই। এ ব্যবস্থা সুশিক্ষার ও মানবিক বোধ গড়ে তোলার উপযোগী নয়। তাই বিদ্যালয়ের পরিবেশ সুন্দর ও স্বস্তিকর করে তোলা আবশ্যক। শিক্ষাকে শিশুদের জন্য মানবিক ও আনন্দদায়ক করে তোলার পদক্ষেপ দ্রুত নেওয়া হোক।