শিমুল ফুটেছে কম, হতাশ পর্যটকরা

117

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
ফুল কম, হতাশ পর্যটক। আগামী বসন্তেও যদি পাতা ঝরা শিমুলের ঢালে থোকায় থোকায় রক্ত রাঙাফুল না ফোটে তা হলে হয়তো পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আনাগোনা কমে যাবে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগানে। এমনটাই জানলেন স্থানীয় লোকজন ও দেশের দুর দুরান্ত থেকে বাগান ঘুরতে আসা লোকজন। এ বছর মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যাদুকাটা নদীর তীরে শিমুল ফুল দেখতে প্রতিদিন ভীড় জমিয়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। বিশেষ করে সাপ্তহিক ছুটির দিন বা বন্ধের দিন গুলিতে ছিলো মানুষের উপচে পড়া ভীড়।
গাছে গাছে দু একটি শিমুল প্রস্ফুটিত হওয়ার পর থেকে এখনো দেশের দুর দুরান্ত ও আশ পাশের উপজেলা থেকে প্রতিদিন শিমুল বাগান দেখতে আসেন লোকজন। কিন্তু প্রকৃতি এবার কিছুটা শিমুলের বনে বিমাতা সুলভ আচরণ করায় ফুলের দেখা মেলেনি তেমন। তাই এবার যারা এসেছেন অনেকেই ফুল না পেয় কিছুটা হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অনেকে আসার ইচ্ছে থাকলে খোজ খবর নিয়ে আর আসেন নি। স্থানীয় লোকজন জানান, বাগান মালিকদের অযত্নে অবহেলায় দিন দিন এর সৌন্দর্য কিছুটা ম্লান হচ্ছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে হয়তো দিনে দিনে পর্যটক যেমন কমবে তেমনি বাগান ঠিকে থাকাও কিছুটা দুষ্কর হয়ে পড়বে।
২০০২ সালে শুধু মাত্র বাণিজ্যিক ভাবনা থেকেই তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন তার ইউনিয়নের পাশে উত্তর বড়দল ইউনিয়নে মানিগাঁও গ্রামে যাদুকাটা নদীর পশ্চিম পারে ৯৭ বিঘা অনাবাদি ধু ধু বালিয়াড়িতে শিমুল বাগান তৈরী করেন। বাগানটিতে সারিবদ্ধ ভাবে ৩ হাজার শিমুলের চারা রোপন করেন। ১৯ বছরের ব্যবধানে বাগানের শিমুল গাছগুলো আজ অনেক বড় হয়েছে। পত্র পল্লবে মেলছে। গত তিন বছর ধরে বসন্তকালে গাছে গাছে প্রস্ফুটিত ফুলে লাল হয়ে যায় যাদুকাটা নদীর তীর। আর এ নান্দনিক সৌন্দর্য উভোগ করতে গত তিন বছর ধরেই ফুল ফোটার সময় প্রতিদিন যাদুকাটার নদীর তীরে বাড়ছে পর্যটকদের ভীড় ।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন আমবারড়ী গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসনে জানান, এ বছর বাগানে ফুল কম ফুটেছে,সেই সাথে অযত্ন অবহেলায় বাগানে বেশ কিছু শিমুল গাছ মারা যাচ্ছে।
বাগান সংলগ্ন গ্রাম ঘাঘটিয়া,গ্রামের তরুন ফটোগ্রাফার অমিও হাসান, তিনি বলেন, বাগানে এবার ফুল কম তাই ভালো কোন ছবি উঠাতে পারিনি।
ট্রাভেলার লোপস সরকার (ঢাকা) মাঈনুদ্দিন অপু (নরসিংদী) জানান, শিমুল বাগানে ফুল দেখার জন্য তারা খুব আগ্রহী ছিলেন কিন্তু স্থানীয়দের কাছে এবং ঘুরে যাওয়া পর্যটকদের কাছে বাগানে ফুল কম থাকার গল্প শুনে তারা আর আসেন নি।
এ অবস্থার কথা জানালেন ট্রাভেল গুপ ট্রাভেলার্স অফ বাংলাদেশ এর এডিমন তমাল আহমেদ টিপু, তিনিও ফুল কম থাকার কারণে এবার শিমুল বাগানে আসেন নি। তাছাড়া তিনি জানান, বিভিন্ন্ন ভ্রমন গ্রুপ ও কিছু লোকজন পুরনো ছবি দেখে এবার শিমুল বাগানে গিয়ে ফুল কম পেয়ে হতাশ হয়েছেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, গতকয়েকদিনের ব্যভাবধানে তিনি একাধিকবার শিমুল বাগানে গিয়েছেন। তিনি বলেন, বাগানে সৌন্দর্য ধরে রাখতে ফুল ফোটার আগে সময় মত গাছ গুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে বাগান মালিকদের। তাহলে হয়তো আমরা প্রকৃতির এ সৌন্দর্য টুকু বছরে বছরে উপভোগ করতে পারবো
বাগান মালিক প্রায়াত চেয়ারমান জয়নাল আবেদীন এর উত্তরসুরী নিজাম উদ্দিন বলেন, বাগানে এবার কিছুটা ফুল কম। পানির অভাবে বাগানের এ অবস্থা হবে বা ফুল কম আসতে পারে এতদিন তারা বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন নি। আগামীতে তারা বাগানের প্রতি আরো যত্নশীল হবেন বলে জানান। সেই সাথে প্রতি বছর বাগানে উল্লেযোগ্য হারে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের উপস্থিতি থাকবে বলেও তিনি আশা ব্যাক্ত করেন।