শায়েস্তাগঞ্জ এখন ‘শিল্পনগরী’ পাল্টে গেছে উপজেলার চিত্র

360

শায়েস্তাগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মাত্র কয়েকবছর আগেও সাধারণ এক গ্রামীণ জনপদ ছিল হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ। দেশজুড়ে সেই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পরিচিতি এখন ‘শিল্পনগরী! দেশের সর্বাধিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার ডেনিমস লিমিটেড, তাফরিদ কটন মিলস, সিপি বাংলাদেশ লিমিটেডের মত বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুরে।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশেই কোম্পানিগুলো বেড়ে উঠায় সারাদেশের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আর দেশের স্বনামধন্য সব ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠায় সুফল পাচ্ছেন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলাসহ পুরো হবিগঞ্জবাসী। যে কারণে, উপজেলায় কমেছে বেকারত্ব, স্বাবলম্বী হয়েছেন হাজারো মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অলিপুরে গড়ে উঠা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বিগত ৬ বছরে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্রায় ২২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এখানকার উৎপাদিত পণ্য বর্তমানে বিশ্বের ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রাণ সংশ্লিষ্টদের মতে, এখানে কারখানায় কর্মরত লোকবলের ৮০ ভাগই স্থানীয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি শায়েস্তাগঞ্জ এলাকায় উন্নত শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণেও কাজ করছে গ্রুপটি। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ কারখানা সংলগ্ন একটি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ হবিগঞ্জের অলিপুরে ২২০ একর এলাকা জুড়ে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলে। কারখানায় বর্তমানে ফ্রুট ড্রিংক, বেভারেজ, ক্যান্ডি, লিকুইড গ্লকোজ, বিস্কুট, কনফেকশনারি, ক্যাবলস, ফ্যান, মেলামাইন, বাইসাইকেল, এমএস ও জিআই পাইপ, টয়লেট্রিজসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জের অলিপুরে স্কয়ার গ্রুপের স্কয়ার ডেনিম কারখানাটিতে বর্তমানে এইচঅ্যান্ডএম, নেক্সট, সিঅ্যান্ডএ, স্পিরিটসহ বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেনিম কাপড় প্রস্তুত করছে। মূলত বিদেশি ক্রেতারা প্রথমে ডেনিম কাপড় পছন্দ করে দেয়। পরে সেই কাপড় বাংলাদেশি পোশাক কারখানায় জিনস প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি তৈরি হয়ে রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। সুতার মূল্য সংযোজন বাড়াতেই ২০১৩ সালে ডেনিম কাপড় উৎপাদনের কারখানাটি নির্মাণ শুরু হয়। ২৯৪ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই স্কয়ার ডেনিম কারখানা। কারখানা চত্বরেই ৭০ শতাংশ শ্রমিকের জন্য আছে বিনা মূল্যের আবাসনব্যবস্থা। এখন পর্যন্ত কারখানাটিতে স্কয়ার গ্রুপ বিনিয়োগ করেছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
এসব কোম্পানিতে কর্মের সুযোগ থাকায় অশিক্ষিত নারী-পুরুষরা ও এখন চাকরিজীবী হয়ে উঠছেন। সেই সাথে একসময়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল এখন ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে শিল্পনগরী। শিল্পায়নের সুবাধে এ এলাকার মানুষ চাকরি ছাড়াও নানারকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে ও স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। মালামাল সাপ্লাই, ঠিকাদারী, ওয়েস্টেজ, কাচামাল, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সীসহ হরেকরকম ব্যবসা বাণিজ্যও করতে পারছেন তারা।
এছাড়া শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকরিরত লোকজন মনোরম পরিবেশে স্বপরিবারে থাকার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেজন্য গ্রামাঞ্চলের মানুষদের ও এখন আয়ের বেশ একটা অংশ আসে বাড়ি ভাড়া দিয়ে। কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় এলাকার তরুণরাও কাজে থাকায় বেকারত্ব যেমন ঘুচেছে পাশাপাশি তরুণরা বিপথগামীর দিক থেকে ফিরে আসছেন। চুরি, ছিনতাই, মাদক গ্রহন থেকে সরে আসছেন তরুণরা।
অন্যদিকে কয়েক হাজার একর ফসলীজমিতে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠায় কমেছে কৃষির উৎপাদন। কৃষিকাজে সাধারণ মানুষদের অনীহা দেখা দিচ্ছে। কৃষিকাজে বিনিয়োগ না করে মানুষ অন্যখাতে বিনিয়োগ করছেন। জায়গাজমি বিক্রি করে মানুষ ব্যাংকে নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা রেখে এর লভ্যাংশ নিচ্ছেন।
এদিকে শিল্পায়ন হয়ে উঠায় জমির দাম বেড়েছে শতক প্রতি পাঁচ থেকে সাতগুণ। যারা জমি কিনে বিনিয়োগ করেছেন তারা লাভের পথে। এছাড়া শিল্পায়নের ছোঁয়ায় এলাকায় বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। এরমধ্যে কেউ জমি বিক্রি করে, কেউ জমি কেনা-বেচার দালালি করে, আবার কেউ কোম্পানিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করে লাখপতি থেকে নাম লিখিয়েছেন কোটিপতিতে।
শিল্পায়নের বিষয় নিয়ে হবিগঞ্জের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির জানান, আমি জাতীয় সংসদে অসংখ্যবার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর হবিগঞ্জে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। হবিগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ মজুদ রয়েছে, যা ইন্ডাস্ট্রি করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও হবিগঞ্জে কৃষি জমির দাম কম। এসব বিষয় আমি সংসদে তুলে ধরার ফলে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি হবিগঞ্জে তাদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এতে করে শিল্পায়নের সুফল পাচ্ছে সারাদেশের মানুষ। স্থানীয়রা যেমন চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হয়েছে তেমনি অন্য জেলার মানুষরাও এর সুফল পাচ্ছে। এসব ফ্যাক্টরি দেশের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।