জেড.এম. শামসুল :
মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত কর্মপরিষদ’র সাংগঠনিক তৎপরতা দেশব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণের সাথে ছাত্রজনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। ভাষা বিরোধীচক্র আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ধর্মের নামে নানা প্রলোভন ভয়ভীতি প্রদর্শন গ্রেফতারের আতংক ছড়িয়ে দেয়। তবুও ভাষা সৈনিকরা দমে থাকেনি। জানুয়ারি ১৯৫২ সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচী একের পর এক সভা সমাবেশ চলতে থাকে। আন্দোলনের ধারবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী উর্দ্দু রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন পাকিস্তানের নিরাপত্তা, অখন্ডতার স্বার্থে একটি মাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিয়ে বলেন উর্দ্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হতে চলেছে, অন্য কোন ভাষা নয় এবং বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী নাকচ করে দেন। পরের দিন ৪ ফেব্রুয়ারী এ বক্তব্যের প্রতিবাদে ঢাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে। ৬ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র প্রথম সভা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন সহ ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোরালো বক্তব্যের কারণে দ্যা পাকিস্তান অবজারভার পাকিস্তান সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং পত্রিকাটির সম্পাদক আব্দুস সালাম ও প্রকাশক হামিদুল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। যাহা ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়ী না হওয়া পর্যন্ত পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়নি। দিন দিন ভাষা আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। ভাষা সংগ্রাম যত প্রকট আকার ধারণ করছে ততই পাকিস্তানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারী সরকারী এক ঘোষণায় একমাসের জন্যে ১৪৪ ধারা জারী করে ঢাকা শহরে সভা সমাবেশ মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৪৪ ধারা জারীর পর তমদ্দুন মজলিশের আদলে গড়া খেলাফতে রাব্বানী পার্টির এক সভা সভাপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও ছাত্ররা অলি আহাদের নেতৃত্বে যুবলীগ অফিসে সভা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দৃঢ় সংকল্প করে বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত সভা করে। এ সময় পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাভাষা সহ সকল ভাষার সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারপত্র বিলি করে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’র কর্মসূচী বাস্তবায়নে সকলে উদ্বিগ্ন কিভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা জারীর পর দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ’র আহবায়ক আব্দুল মতিন জানান, ১৪৪ ধারা ভাঙ্গা বা না ভাঙ্গা বিষয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিই ঘটবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্র সমাবেশ হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমতলায় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠানের পক্ষে ছাত্ররা ঐক্যমত হন।