বাঙালি জাতির মাতৃভাষা রক্ষায়, বাঙালি ছাত্র-জনতা কম রক্ত দেয়নি। ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে স্থাপিত শহীদ মিনার নির্মাণে কত বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। শহীদ মিনার তৈরি করতে গিয়ে পাকিস্তানি হায়নার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। তবুও বাঙালি ছাত্র-জনতা ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার স্থাপন করেছে। বাংলা ভাষা বিরোধী হায়েনার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর সাম্প্রদায়িক শক্তির দ্বারা বার-বার শহীদ মিনার ভেঙ্গে দিলে ও সে সময়ের স্থাপিত শহীদ মিনার গুলোর অনেক চিহ্ন রয়েছে।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিকদের ভাষ্যমতে ৫২ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারি যে স্থানে সর্বপ্রথম হায়েনা বাহিনীর দোসরদের গুলি করে বাংলা ভাষার জন্যে শহীদ করেছিল। সে স্থানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সিনিয়র ছাত্র বদিউল আলমের অঙ্কিত নকশা মোতাবেক ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। কিন্তু হায়েনার বাহিনী পরবর্তিতে ভেঙ্গে দিলেও ফের শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ভাবে স্থাপিত করা হয়। এ সময়ে সিলেট শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহর গুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
আমাদের সিলেট শহরে বেশ কয়টি শহীদ মিনার স্থাপিত হয়েছিল, সিলেটের ভাষা সংগ্রামের সাথে জড়িত এদেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পীর হবিবুর রহমান, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদানকারী আব্দুল হামিদ সহ অন্যান্য প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা কর্মীদের উদ্যোগে সিলেটের গৌবিন্দ পার্কে (আজকের হাসান মার্কেট) এর প্রগতিশীলদের এক সভা চলাকালিন সময়ে বাংলা ভাষা বিরোধী চক্রের হামলায় অনেক প্রগতিশীল নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন। পাকিস্তানি হায়েনার বাহিনীর হাজারো বাধার মুখে ও স্থানীয় মিরাবাজারের রামকৃষ্ণ মিশনের পার্শ্বে, কুয়ার পারের কাজল বাবুর, ও তাঁতিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার স্থাপিত হয়। সিলেটের প্রাচীন শহীদ মিনার গুলোর মধ্যে শুধু মাত্র তাঁতিপাড়ার শহীদ মিনারটি অক্ষত অবস্থায় ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রামকৃষ্ণ মিশন ও কুমার পাড়ার শহীদ মিনার দু‘টোর শেষ চিহ্নটুকু নেই। বিভিন্ন সময়ে এদেশীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি ভেঙ্গে ফেলেছে।
৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালি জাতি প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি এলেই বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ভাবে ইটের গাঁথুনি দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে পুষ্পস্তবক অপর্ণ করা হতো। বর্তমানে দেশের সর্বত্র ভাষা ও শোক দিবস গুলো স্থায়ী ভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পালিত হচ্ছে। কিন্তু মহান স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে ও কিছু-কিছু জায়গায় এখনও শহীদ মিনার স্থাপিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞমহলের মতে; মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষের সরকার এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে শহীদ মিনার স্থাপন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার সুব্যবস্থা করা ভবিসৎ বংশধরদের জন্য স্মৃতি বহন করবে বরে সচেতনমহল মনে করেন।