কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটিতে শুরু হলো বাইডেন যুগ।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১১টার দিকে (যুক্তরাষ্ট্র সময় দুপুর পৌনে ১২টা) শপথ নেন বাইডেন। তার আগে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ওয়াশিংটনে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ওয়েস্ট ফ্রন্টে আয়োজন করা হয় শপথ অনুষ্ঠানের। নিজের পরিবারের ১২৭ বছরের পুরোনো বাইবেলের একটি কপি হাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে শপথ পড়ান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্ট। কমলা হ্যারিসকে শপথ পড়ান দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সোনিয়া সোটোমায়র।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট বাইডেন (৭৮) ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর প্যানসিলভ্যানিয়া রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী জিলের সঙ্গে ১৯৭৭ সালে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন বাইডেন। বাইডেনের অভিষেকের সঙ্গে সঙ্গে জিল বাইডেন হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৬তম ফার্স্টলেডি।
বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য বর্ণিল সাজে সাজানো হয় হোয়াইট হাউজ চত্বর। একই সঙ্গে ট্রাম্প অনুসারীদের সহিংসতার আশংকায় ওয়াশিংটন ডিসিতে কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়। বলা যায়, ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে শহরটি। সেনাবেষ্টনির মধ্যেই শপথ নিতে হয় বাইডেন ও হ্যারিসকে। তবে অনুষ্ঠানে নামিদামি সব তারকার উপস্থিতি ছিল।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়ে থাকে আনন্দমুখর পরিবেশে। লাখ লাখ মানুষ অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপন করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হন। আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুষ্ঠান দেখতে আসে মানুষ। কিন্তু এবার সেই চিরচেনা দৃশ্যের দেখা মেলবে না শপথ অনুষ্ঠানে।
করোনাভাইরাস ও নিরাপত্তার কারণে এবার সাধারণ মানুষ অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। যা মার্কিনীরা তাদের ইতিহাসে কখনো দেখেনি।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে টুইট করেছেন জো বাইডেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, আমেরিকায় নতুন একটি দিন।
বাইডেন প্রশাসনের চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় বাইডেন যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করার প্রথম প্রমাণ শুরুর দিনেই জানান দেয়ার চেষ্টা করা হবে। সে হিসেবে বাইডেন মুসলিমপ্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসংক্রান্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি প্রথম দিনই বাতিল করবেন।
এছাড়া, ক্ষমতা গ্রহণের দিনই এক কোটি দশ লাখ অভিবাসীকে বৈধতা দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এ প্রক্রিয়ায় দ্রুততার সাথে নাগরিকত্ব পাবেন তারা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে চার বছর ধরে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি ও গণহারে দেশে পাঠিয়ে দেয়ার শিকার হওয়া লাতিন ও অন্যান্য অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য বাইডেন যে প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হবে এ নতুন সিদ্ধান্তটিতে।
জলবায়ু-সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছিলেন ট্রাম্প। বাইডেন তার প্রথম কর্মদিবসেই এই চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেবেন। বাইডেন প্রশাসনের প্রথম কর্মদিবসের নির্বাহী আদেশের মধ্যে আরও রয়েছে করোনা পরিস্থিতি চলাকালীন শিক্ষা ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার নির্দেশ। অর্থনৈতিক কারণে বাড়ি ভাড়া দিতে না পারার কারণে ভাড়াটেদের উচ্ছেদ স্থগিত রাখার আদেশ। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের প্রতি বাইডেনের নির্দেশনামূলক কিছু আদেশ জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন রন ক্লেইন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র দুই নীতির ক্ষেত্রেই বাইডেন হয়তো ওবামা নীতিতে ফিরে যাবেন।
এদিকে, ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৬০ বছরের মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। ইতিমধ্যে তিনি হোয়াইট হাউজ ছেড়েছেন। অ্যান্ড্রুজ সামরিক ঘাঁটিতে সংক্ষিপ্ত বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে ফ্লোরিডার উদ্দেশে রওনা করেছেন। বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প না থাকলেও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অংশ নেন।