স্পোর্টস ডেস্ক :
রাজসিক প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে বার্সেলোনার বিরুদ্ধে জুভেন্টাসকে দাপুটে জয় উপহার দিলেন উয়েফা’র মহারাজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ খেলায় স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলের দুর্দান্ত জয় আদায় করে নিয়েছে তুরিনের বুড়ির দল। পেনাল্টি স্পট কিক থেকে যার দুইটি গোলই করেছেন জুভেন্টাসের পর্তুগীজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো। কালো-সাদাদের হয়ে ম্যাচের অপর গোলটি করেন তরুণ তুর্কি ম্যাককেনিই। অবিশ্বাস্য এক বাই সাইকেল শটে চোখ ধাঁধানো গোলটি করেন জুভাদের হয়ে খেলা তরুণ এই মার্কিন মিডফিল্ডার।
বাংলাদেশ সময় বুধবার মধ্যরাত ২টায় শুরু হওয়া ম্যাচটিতে প্রথম লেগের ২-০ গোলে হেরে যাওয়া জুভেন্টাস খেলতে নামে পিছিয়ে থেকে। কিন্তু ন্যু ক্যাম্পে ৩-০ গোলের জয়ে দু’লেগ মিলিয়ে এক গোলে এগিয়ে থাকায় জি-গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নক আউট পর্বে পা রাখলো ইটালিয়ান ক্লাবটি। আর সমান ১৫ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে নক আউট পর্বের টিকিট কাটে বার্সা।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলায় মন দেয় বার্সা-জুভেন্টাস। তবে অনেকটা ছন্নছাড়া বার্সেলোনার হয়ে এক মেসি ছাড়া জুভেন্টাস দুর্গে হানা দিতে পারেননি অন্য কেউ। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন তারকা দিবালাকে ছাড়াই বার্সার রক্ষণভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন রোনালদো। একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা বার্সা ডিফেন্স অল্প সময়ের মধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলে। যার ফলে গায়ের জোরে বল দখলের চেষ্টায় খেলার ১২ মিনিটের মাথায় জুভেন্টাসকে প্রথম পেনাল্টি উপহার দেয় তারা। আর প্রথম সুযোগ থেকে তীব্র গতির স্পট কিকে গোল করতে মোটেই ভুল করেননি সিআর সেভেন।
এর মাত্র ৭ মিনিট পরেই ইতালিয়ান জায়ান্টদের পক্ষে ম্যাচের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন গোলটি করেন জুভেন্টাসের তরুণ মিডফিল্ডার ম্যাককেনিই। এ সময় ডানপ্রান্ত দিয়ে বার্সা দুর্গে হানা দেয় জুভেন্টাসের ক্ষীপ্র গতির রাইট উইঙ্গার কুর্দাদো। মধ্য মাঠ থেকে ডান প্রান্ত ধরে বার্সা ডিফেন্ডারদের বাধা পার করে আক্রমণে যান এই ল্যাটিন উইঙ্গার। ডি- বক্সের দিকে হালকা বাঁক নিয়ে এ সময় কুর্দাদো ডান পা বল বাতাসে ভাসিয়ে দেন বার্সা ডি-বক্সের খানিকটা বাইরে থাকা রোনালদোর উদ্দেশ্যে। তবে হালকা কাট ইন করে বক্সে ঢুকে পড়ায় বল নাগাল পাননি তিনি। কিন্তু সবাইকে বোকা বানিয়ে, কুর্দাদোর সেই ক্রস করা বল মাটিতে পড়ার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে এসে উড়ন্ত বলে ডান পায়ের আচমকা এক বাই সাইকেল কিক নেন ম্যাককেনিই। নিজেকে শূন্য ভাসিয়ে রেখেই নিজের গোলার মত শটে বার্সা গোলরক্ষক স্টেগানকে পরাস্ত হতে দেখেন এই মার্কিন মিডফিল্ডার।
অন্যদিকে বার বার আক্রমণ সাজিয়েও জুভেন্টাস রক্ষণের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে বার্সেলোনার পাল্টা জবাব দেয়ার চেষ্টা। এর মাঝেও জুভাদের বারে ৭টি ইন-টার্গেট শট নেয় বার্সেলোনা। কিন্তু তার একটিও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। বার্সার হয়ে একা লিওনেল মেসিই নেন এই ৭টি শট। এছাড়া ভাগ্যের ফেরে একটি গোল মিস হয় বার্সার। আর গ্রিজম্যানের একটি সম্ভাবনাময় শট বারপোস্টে চুমু খেয়েই তৃপ্ত থাকায়, গোলের দেখা আর পায়নি বার্সা।
খেলার দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা মধ্যমাঠ দখলে নিয়ে খেলতে শুরু করে জুভেন্টাস। গোলের চেষ্টা অনেকটাই ক্ষান্ত দিয়ে বল দখলে রেখে বার্সাকে ম্যাচে ফেরার সব পথ বন্ধ করে দেয় পিরলোর শিষ্যরা। খেলার ৫১ মিনিটের মাথায় বার্সা রক্ষণে পরিকল্পিত আক্রমণ হানে জুভ। এ সময় ডি-বক্সের মধ্যে কাতালান ডিফেন্ডার ল্যাংলেটের হ্যান্ডবলে আবারো পেনাল্টি পায় জুভেন্টাস। ৫২তম মিনিটে আবারও ক্ষীপ্র স্পট কিকে দলের পক্ষে তৃতীয় এবং ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রোনালদো। ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়া বার্সা এরপর পুরোপুরিই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে।
জয়-পরাজয় যাই হোক মেসি-রোনালদো দ্বৈরথ দেখার সাধ মিটেছে দর্শকদের। সেই সঙ্গে ম্যাচ শেষে এই দুই মহাতারকার সৌজন্যতা এবং পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শনের এক একটি দৃশ্য বিমোহিত করেছে ফুটবল পাগল কোটি মানুষকে।