যেভাবে পিএসজি-বাসাকশেহিরের ম্যাচ পণ্ড হল

11

স্পোর্টস ডেস্ক :
নিকৃষ্ট এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে গেল পার্ক দে প্রিন্সেস। ম্যাচ অফিসিয়ালের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার রাতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের এইচ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া পিএসজি এবং ইস্তাম্বুল বাসাকশেহিরের ফুটবলাররা ম্যাচ বয়কট করেছে। যার ফলে খেলা শুরুর মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় সেটি পণ্ড হয়ে যায়। উয়েফার একজন মুখপাত্র জানান, ম্যাচটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
মূলত, ইস্তাম্বুল বাসাকশেহিরের সহকারী কোচ পিয়েরে ওয়েবো তর্ক করায় রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখানো মাত্র পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া শুরু করে। এ সময় টাচলাইনে দাঁড়িয়ে বাসাকশেহিরের সহকারী কোচ ও ক্যামেরুনের সাবেক ফুটবলার পিয়েরে ওয়েবো অভিযোগ করেন, ম্যাচ অফিসিয়াল তাকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন। তার এই অভিযোগের সঙ্গে দলের স্টাফ ও খেলোয়াড়রাও সহমত পোষণ করা মাত্র পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাসাকশেহিরের স্ট্রাইকার ডেম্বা বা ম্যাচ অফিসিয়ালের দিকে আঙুল তুলে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলছেন, ‘কেন তুমি একজনকে নিগ্রো কথাটা বললে? তুমি কি কাউকে নিগ্রো সম্বোধন করে কথা বলতে পারো’?
পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই দলের প্রধান কোচের সঙ্গে কথা বলেন রেফারি। লম্বা সময় ধরে আলোচনায় সমাধান না মেলায় রেফারির প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বাসাকশেহিরের খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করেন। খানিক পর বাসাকশেহিরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে পিএসজির খেলোয়াড়রাও মাঠ থেকে বেরিয়ে যায়।
এরপর বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় একবার ম্যাচটি শুরু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু উয়েফার এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আবারো উত্তপ্ত হতে শুরু করে। ম্যাচে বর্ণবাদের দায়ে অভিযুক্ত চতুর্থ রেফারিকে উয়েফা ভিএআর এর দায়িত্বে পাঠিয়ে, ভিএআরের দায়িত্বে থাকা একজনকে চতুর্থ রেফারিকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু বাসাকশেহিরের ও স্বাগতিক পিএসজি এই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়ে তখন জানিয়ে দেয়, এই রেফারি ম্যাচের সঙ্গে জড়িত থাকলে তারা মাঠে নামবে না।
পরবর্তীতে দুই দলের মোট ২২ জন খেলোয়াড় প্রত্যেকে একে অপরের হাতে হাত রেখে মাঠে নেমে ম্যাচ আবারও শুরু করার প্রস্তাব দেয় নিজেদের খেলোয়াড়দের; তবে কিছু খেলোয়াড় সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে জানায় অভিযুক্ত রেফারি থাকলে তারা মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না।
ম্যাচ পণ্ড হওয়ার পর নেইমার তাঁর ফেরিভাইড ফেসবুক পেজে মুষ্টিবদ্ধ হাত উপরে তোলা অবস্থায় নিজের একটি ছবি আপলোড করেন। একই সঙ্গে তিনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার কথাটি লিখে তিনি এই আন্দোলনের সঙ্গে নিজেকে সরাসরি সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দেন।
পিএসজির আরেক তারকা ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে ম্যাচ পণ্ড হওয়ার পর এক টুইটে লিখেছেন, ‘বর্ণবাদকে না বলুন। ওয়েবো, আমরা আপনার পাশে আছি।’
নিজ দেশের ক্লাবের একজন বর্ণবাদী আচরণে শিকার হওয়ার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এক টুইটে লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, উয়েফা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আমরা নিঃশর্তভাবে খেলাধূলা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে বর্ণবাদ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে।’